উর্জিত পটেল
প্রত্যাশা ছিলই। বাস্তবে ঘটলও তাই। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার ঋণনীতি ফিরে দেখতে বসে মূল্যবৃদ্ধিকে বাগে আনতে বুধবার একই জায়গায় ধরে রাখল সুদের হার।
এ দিন রেপো রেট (যে-হারে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ধার নেয় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক) ৬ শতাংশেই ধরে রেখেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। পাশাপাশি রিভার্স রেপো রেট (আরবিআই যে-হারে ধার নেয় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের কাছ থেকে) বেঁধে রাখা হয়েছে ৫.৭৫ শতাংশেই। এই পরিপ্রেক্ষিতে এখনই কমছে না গাড়ি-বাড়ি বা শিল্প ঋণে সুদ, যার জেরে ইতিমধ্যেই হতাশ শিল্পমহল। তবে ব্যাঙ্কিং শিল্পের ধারণা, মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শীর্ষ ব্যাঙ্ক ঠিক নীতিই নিয়েছে। অর্থনীতি এখন যে রদবদলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তাতে এটাই লগ্নিকারীদের কাছেও সঠিক সঙ্কেত দেবে বলে মনে করছে তারা।
এ দিন অবশ্য চাঙ্গাই ছিল শেয়ার বাজার। সেনসেক্স বেড়েছে ১৭৪.৩৩ পয়েন্ট, নিফ্টি ৫৫.৪০ পয়েন্ট। তার কারণ লগ্নিকারীরা কার্যত ধরেই নিয়েছিলেন, এ যাত্রায় সুদ কমার সম্ভাবনা তেমন নেই। শেয়ার সূচক ওঠায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে ডলারে টাকার দামও। এক ধাক্কায় তা দিনের শেষে ৫৫ পয়সা বেড়েছে। ফলে বাজার বন্ধের সময়ে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬৫.০১ টাকা। গত এক সপ্তাহে টাকা এত বেশি উচ্চতায় ওঠেনি।
ঋণনীতির খতিয়ান
• রেপো রেট ৬ শতাংশে অপরিবর্তিত
• রিভার্স রেপো রেট ৫.৭৫ শতাংশে অপরিবর্তিত
• ব্যাঙ্কের হাতে বাড়তি ৫৫ হাজার কোটি নগদ জোগাতে এসএলআর ২০% থেকে কমে ১৯.৫%
• চলতি ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষের জন্য বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৭.৩% থেকে কমে ৬.৭%
• বছরের দ্বিতীয় ভাগে মূল্যবৃদ্ধি ৪.২-৪.৬% থাকার ইঙ্গিত
• বড় মেয়াদে লক্ষ্য মূল্যবৃদ্ধি ৪ শতাংশে ধরে রাখা
• জিএসটি চালু হওয়ার জেরে আপাতত অনিশ্চিত শিল্পে উৎপাদন বাড়া
• বৃদ্ধির পথ তৈরি করতে জিএসটি-র কাঠামো সরল করার সুপারিশ
• রাজ্যগুলিকে অত্যধিক চড়া স্ট্যাম্প ডিউটি-র হার যুক্তিসঙ্গত করার পরামর্শ, যাতে কম খরচের আবাসন তৈরি বাড়ানো যায়
অর্থনীতি ঢিমেতালে এগোনোয় চলতি অর্থবর্ষের জন্য আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাসও এ দিন এক ধাক্কায় ৭.৩% থেকে কমিয়ে ৬.৭% করল আরবিআই। বছরের প্রথম ত্রৈমাসিক এপ্রিল থেকে জুনে তা গত তিন বছরের সর্বনিম্ন হার ৫.৭ শতাংশে নেমে আসায় উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছে সব মহলেই। অবশ্য ধাপে ধাপে দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ ত্রৈমাসিকের মধ্যে তা ৬.৪, ৭.১ ও ৭.৭% ছোঁবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আরবিআই।
পাশাপাশি, বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরাতে ব্যাঙ্কের সরকারি ঋণপত্র কেনা কমিয়ে তাদের হাতে নগদের জোগান বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন গভর্নর উর্জিত পটেল। এই লক্ষ্যেই বিধিসম্মত নগদ জমার অনুপাত বা স্ট্যাটুটরি লিক্যুইডিটি রেশিও (এসএলআর) ২০% থেকে কমিয়ে ১৯.৫% করেছে আরবিআই। ১৪ অক্টোবর থেকে তা কার্যকর হলে ঋণ দিতে ব্যাঙ্কগুলির হাতে ৫৫ হাজার কোটি টাকার বাড়তি নগদ আসবে। এসএলআর মেনে ব্যাঙ্কগুলিকে বাধ্যতামূলক ভাবে সরকারি ঋণপত্র কিনে তা গচ্ছিত রাখতে হয় আর বি আইয়ের ঘরে। ওই বাড়তি টাকা দিয়ে ব্যাঙ্কগুলি আরও বেশি ঋণ দিতে পারবে বলে মনে করছে আরবিআই।
তবে ঋণনীতি ঠিক পথেই এগিয়েছে বলে মনে করছে ব্যাঙ্কিং শিল্প। স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারপার্সন অরুন্ধতী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অর্থনীতির কাঠামো আমূল পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তার ফল মিলতে সময় লাগবে। অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে আরবিআই ঠিক পথেই এগিয়েছে। বিশেষ করে জোর দিয়েছে পরিকাঠামোয় সরকারি লগ্নি, বড় প্রকল্প ও কম খরচের আবাসনে বাড়তি লগ্নিতে।’’ তবে শিল্পের মত, বৃদ্ধিকে টেনে তুলতে সুদ কমানোর বিষয়টি শীর্ষ ব্যাঙ্কের ভাবা উচিত ছিল।