প্রতীকী ছবি।
বাহাত্তরতম স্বাধীনতা দিবসে বুধবারই লালকেল্লায় নিজের সরকারের সাফল্যগাথা তুলে ধরেছেন নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর তাজ ধরে রেখে পরের বারও তা করতে আগে টাকার কাঁটা উপড়াতে হবে তাঁকে। ডলারের সাপেক্ষে যার নজিরবিহীন তলানিতে ঠেকা দর এই মুহূর্তে কেন্দ্রের অন্যতম মাথাব্যথা।
স্বাধীনতা দিবসের পরের দিন বাজার খুলতেই ফের ৭০ টাকা পেরলো ডলার। দিনের লেনদেন শেষও করল ওই অঙ্ক পেরিয়ে। স্বাধীন ভারতের ৭১ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম।
মোদী সরকারের দাবি, এ নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই। ডলারের তুলনায় টাকার দর একটু বেশিই ছিল। তাই তা সামান্য পড়লে, রাতের ঘুম ছোটার জোগাড় হয়নি। তার উপর যেখানে এ বার টাকার পতনের মূল কারণ তুরস্কের অর্থনীতির সঙ্কট এবং সে দেশের মুদ্রা লিরার পতন।
কেন্দ্রকে কিছুটা স্বস্তি দিয়ে রঘুরাম রাজনের মতো অর্থনীতিবিদ এ দিন বলেছেন, ‘‘আমি খুব একটা চিন্তিত নই। টাকার দর বাড়ছিল।...ফলে তার কিছুটা পতন দরকার ছিল।’’ কিছুটা একই সুরে কেন্দ্রের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা পদে তাঁর পূর্বসূরি কৌশিক বসুও সম্প্রতি বলেছেন, ডলার এখন ৭০-৭১ টাকাতেই থাকার কথা।
কিন্তু অর্থনীতির যুক্তি যা-ই হোক, রাজনৈতিক দিক থেকে ঘোর অস্বস্তিতে কেন্দ্র। কারণ, টাকার দরে পতনের ফলে সব থেকে বেশি ধাক্কা লাগবে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের পকেটে। তেলের দাম বাড়লে ক্ষোভের পারদ চড়বে। বাড়বে বিদেশে বেড়ানো বা পড়াশোনার খরচ। বিদেশি ঋণ শোধেও গুনতে হবে বাড়তি কড়ি।
কংগ্রেসের আনন্দ শর্মার কটাক্ষ, ‘‘কংগ্রেস ৭০ বছরে যা পারেনি, মোদী ৪ বছরে তা করেছেন।’’ সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী লালকেল্লায় তাঁর এই সাফল্যের উল্লেখ করতে ভুলে গিয়েছিলেন।’’
সামনেই চার রাজ্যে ভোট। বিজেপির এক নেতাই বলছেন, ‘‘যা পরিস্থিতি, তাতে আগামী দিনে পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়াতে হবে। কিন্তু তাতে ক্ষেপে যাবেন সাধারণ মানুষ। নতুন করে তেলের উপর কর কমানোর দাবি উঠবে।’’
মন্ত্রী অরুণ জেটলির অবশ্য যুক্তি, অর্থনীতির ভিত পোক্ত। তুরস্কে আর্থিক সঙ্কটেই সমস্যায় টাকা। কিন্তু টাকার দাম কমলে মূল্যবৃদ্ধি মাথাচাড়া দিতে পারে। সে কথা মনে করিয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির এন আর ভানুমূর্তির পাল্টা যুক্তি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে সুদ বাড়ালে বৃদ্ধি ধাক্কা খেতে বাধ্য। একই আশঙ্কায় এ অর্থবর্ষে বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছাঁটাই করেছে ইন্ডিয়া রেটিংসও।