মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
লিখিত লগ্নির প্রস্তাব প্রায় ২ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে উৎপাদনমুখী শিল্পেই দেড় লক্ষ কোটি টাকার বেশি। বুধবার চতুর্থ ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট ২০১৮’-এর শেষ দিনে এই পরিসংখ্যান দিয়ে রাজ্যের দাবি, এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে রাজ্যে কর্মসংস্থান হবে প্রায় ২০ লক্ষ। এই লক্ষ্য পূরণের সহায়ক হিসেবে তিনটি শিল্প নীতিও এ দিন ঘোষণা করেছে রাজ্য।
রাজ্যে লগ্নি টানতে তিন বছর ধরে সম্মেলন করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কিন্তু বিরোধীদের অনেকেরই অভিযোগ, সম্মেলনের মঞ্চে ঢাকঢোল পিটিয়ে যত লগ্নি আসবে বলে বলা হয়, বাস্তবে তার প্রায় কিছুই আসে না। এ বারও তেমন অভিযোগ উঠবে আন্দাজ করেই মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘গত বছরের প্রস্তাবের অর্ধেক বাস্তবায়িত হয়েছে।’’ শিল্প দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, কোনও রাজ্যেই, এমনকী গুজরাতেও শিল্প সম্মেলনের মঞ্চে যত লগ্নির কথা ঘোষণা করা হয়, তার একটা বড় অংশই দিনের আলোর মুখ দেখে না।
তবে এ বছর লগ্নির প্রস্তাব গত চার বছরের তুলনায় কম। সরকারি সূত্রের অবশ্য ব্যাখ্যা, এটা চূড়ান্ত হিসেব নয়। কারণ, লগ্নি নিয়ে আলোচনা ও চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া এখনও চলছে। তা ছাড়া, এই হিসেব লিখিত লগ্নি প্রস্তাব ধরে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, মুকেশ অম্বানী, সজ্জন জিন্দল, প্রণব আদানি বা সঞ্জীব গোয়েন্কাদের দেওয়া মৌখিক প্রস্তাব ধরলে অঙ্কটা আরও বাড়বে।
সম্মেলনের প্রথম দিনে মূলত পরিষেবা শিল্পে লগ্নি বা ব্যবসা সম্প্রসারণের কথাই জানিয়েছিলেন শিল্পকর্তারা। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্প তথা অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রর দাবি, উৎপাদনমুখী শিল্পে দেড় লক্ষ কোটি টাকারও বেশি লগ্নির প্রস্তাব এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ দেশের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মতো উৎপাদনমুখী শিল্পের অগ্রণী দেশ থেকেও প্রস্তাব এসেছে।’’
তবে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের মতে, বড় শিল্পে লগ্নির আশ্বাস এখনও হাতে গোনা। যদিও সেই অভিযোগকে আমল না দিয়ে অম্বানী, মিত্তলদের মতো প্রথম সারির শিল্পপতিদের উপস্থিতিকেই রাজ্যের শিল্প পরিস্থিতির পক্ষে ইতিবাচক ইঙ্গিত বলে তুলে ধরছে নবান্ন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আপনাদের উপস্থিতির জন্য এই সম্মেলন এত সফল হয়েছে।’’ অমিতবাবুও বলেন, ‘‘বড় মাপের শিল্পকর্তাদের কথা যদি বলেন, তা হলে তাঁরা সবাই এসেছেন।’’ কিন্তু সংশয়ী মহলের কটাক্ষ, এঁদের কেউ কেউ তো বাম আমলেও রাজ্যের লগ্নির ব্যাপারে উৎসাহ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
শিল্পপতিদের মধ্যে এ দিনের চমক ছিলেন আদানি গোষ্ঠীর অন্যতম কর্তা প্রণব আদানি। এই শিল্প গোষ্ঠী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। অনেকের মতে, মুকেশ ও আদানি গোষ্ঠীর নয়া প্রজন্মকে এনে শিল্পমহলকে বার্তা দিতে চেয়েছেন মমতা।
এ দিনও শিল্পপতিদের ‘আপন’ করে নিয়ে চলার বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের কাছে রাজ্যে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা আমাদের সম্পদ, অনুপ্রেরণা ও শক্তি। আপনাদের ছাড়া আমরা বাঁচব না।’’
চার বছরের প্রাপ্ত
সাল লগ্নি প্রস্তাব*
• ২০১৫ ২,৪৩,১০০
• ২০১৬ ২,৫০,২৫৩
• ২০১৭ ২,৩৫,২৯০
• ২০১৮ ২,১৯,৯২৫
*কোটি টাকায়
• এ বছরের লগ্নিতে
কর্ম সংস্থানের সম্ভাবনা ২০ লক্ষ
• আগামী শিল্প সম্মেলন: ৭-৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯