ধান ভরার জন্য প্রতিশ্রুতি মতো চটের বস্তা কেনা শুরু করল রাজ্য। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ অত্যাবশক পণ্য নিগম কোন জেলায় কত চটের বস্তা পাঠাতে হবে, তার বরাত দিয়েছে রাজ্যের চটকলগুলিকে। শুধু তা-ই নয়, জেলার গুদামঘরগুলিতে ওই বস্তা পৌঁছে দিতে নিগম চটকলগুলিকে পরিবহণ খরচও দেবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। সূত্রের খবর, রাজ্যের চটকল মালিকদের সংগঠনকে নিগম জানিয়েছে ৭ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিটি জেলায় চটের বস্তা পাঠিয়ে দিতে হবে।
পাটচাষিদের পাশে দাঁড়াতে এই প্রথম রাজ্য চটের বস্তা কিনবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। উদ্যোগী হন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। অত্যাবশ্যক পণ্য নিগমের মাধ্যমে ওই বস্তা কেনা হবে বলে ঠিক হয়।
তার জন্য অর্থ দফতর প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা মঞ্জুরও করেছে। সেই সূত্রে বরাত পেলেন চটকল মালিকরা।
অনেক দিন ধরেই কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রক রাজ্যের উপর চাপ দিচ্ছিল চটের বস্তা কেনার জন্য। এত দিন পঞ্জাব, হরিয়ানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় এমনকী ওড়িশার মতো রাজ্যও নিজেদের উদ্যোগে চটের বস্তা কিনলেও, পশ্চিমবঙ্গ কিনত না। রাজ্যের চালকলগুলিই নিজেদের মতো করে বাজার থেকে বস্তা কিনত।
মন্ত্রকের যুক্তি, দেশের চটকলগুলি মূলত পশ্চিমবঙ্গেই রয়েছে। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে কয়েক লক্ষ পাটচাষি ও হাজার-হাজার শ্রমিক। তাই মন্ত্রকের পাশাপাশি রাজ্যও খাদ্যশস্য ভরে রাখতে চটের বস্তা কিনুক। তার জন্য যা খরচ হবে, তা-ও কেন্দ্র মেটাবে বলে জানিয়ে দেয়। মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, শুধু চাল নয়, চাষিদের স্বার্থে রাজ্য আনাজ ও আলুর জন্যও চটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করুক।
এ বছর প্রথম থেকেই চাষিরা পাটের সঠিক দাম পাচ্ছিলেন না। কেন্দ্রীয় সংস্থা পাট নিগম সহায়ক মূল্যে পাট কিনলেও, বাজারে তার থেকে অনেক কম দামেই চাষিদের পাট বিক্রি করতে হয়েছে। এই অবস্থায় খাদ্য দফতর সিদ্ধান্ত নেয় চটকলগুলির থেকে চটের বস্তা কেনা হবে।
জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানিয়েছেন, এ বছর চাষিদের কাছ থেকে মোট ৫২ লক্ষ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। কিছু জেলায় সেই কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে। তাঁর দাবি, দার্জিলিং, কালিম্পং এবং আলিপুরদুয়ার বাদ দিয়ে ইতিমধ্যেই কয়েকটি জেলায় ১০ লক্ষ চটের বস্তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও এক কোটি বস্তা চটকলগুলিকে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পাঠানোর বরাত দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, চটের বস্তা কেনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার বছরে কম-বেশি ৬,০০০ কোটি টাকা খরচ করে। ওই টাকায় গত বছর চাল ও চিনির জন্য প্রায় ২৫ লক্ষ বেল বস্তা কেনা হয়। জুট কমিশনারের মাধ্যমে যার ৯০ শতাংশই জোগান দেয় রাজ্যের চটকলগুলি। সূত্রের খবর, বস্তা কেনার ক্ষেত্রে যা খরচ হয়, তার মধ্যে পঞ্জাব ও হরিয়ানা এই দুই রাজ্যেই ৩,০০০ কোটি টাকার মতো বস্তা লাগে।