ইস্তফা দিতাম, কটাক্ষ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর

লোকসভা ভোটের ঠিক আগে অন্তর্বর্তী বাজেট। দিল্লির অলিন্দে জল্পনা তুঙ্গে যে, অরুণ জেটলি বিদেশ থেকে চিকিৎসা সেরে না ফিরলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই বাজেট পেশ করবেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:১২
Share:

লোকসভা ভোটের ঠিক আগে অন্তর্বর্তী বাজেট। দিল্লির অলিন্দে জল্পনা তুঙ্গে যে, অরুণ জেটলি বিদেশ থেকে চিকিৎসা সেরে না ফিরলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই বাজেট পেশ করবেন। তিনি নিজের মুখেই ঘোষণা করবেন গরিব চাষি থেকে মধ্যবিত্তের মন জয়ের লক্ষ্যে ‘নানা উপহার’-এর কথা।

Advertisement

একই সঙ্গে আশঙ্কা, ঘোষণা তো না হয় হবে। কিন্তু কোষাগারে অর্থের টান। রাজস্ব আয়ের অবস্থা মোটেই ভাল নয়। এই অবস্থায় ভোটের মুখে চাষি, ছোট শিল্পের মন ফিরে পেতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ঘোষণা করেছে মোদী সরকার। এর উপরে এখন যদি বাজেটে ফের তারা কল্পতরু হয়, তা হলে রাজকোষ ঘাটতিকে ৩.৩ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রায় বেঁধে রাখা যাবে তো? ঠিক এই আশঙ্কার জায়গা থেকেই শুক্রবার মোদী সরকারকে তোপ দাগলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। বললেন, তিনি এনডিএ-র অর্থমন্ত্রী হলে এখনই ইস্তফা দিতেন।

১ ফেব্রুয়ারির বাজেট যে শুধুই অন্তর্বর্তী বাজেট বা ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট হবে না, সেখানে চাষিদের জন্য বড় ঘোষণা থাকবে, খোদ অর্থমন্ত্রী জেটলিই সেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। বৃহস্পতিবার আমেরিকা থেকে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ভোটের বছরে অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করাটাই প্রথা। কিন্তু দেশের স্বার্থও দেখতে হয়। কৃষি ক্ষেত্র চ্যালেঞ্জের মুখে। কৃষিজাত পণ্যের দাম পড়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চাষিদের সুরাহা দেওয়ার জন্য ভোটের পরে নতুন সরকারের পূর্ণাঙ্গ বাজেট পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্ভব নয় বলেই যুক্তি দিয়েছেন তিনি। চিদম্বরমের কটাক্ষ, অন্তর্বর্তী বাজেটে কিছু ছোটখাটো জরুরি ঘোষণা হয়। বড় ঘোষণা হয় না। কিন্তু এই সরকার প্রথা মানে না।

Advertisement

এতে কান না দিয়ে বিজেপির কৃষক মোর্চার প্রধান বীরেন্দ্র সিংহ মস্ত জানান, চাষিদের জন্য বড় ঘোষণা হবে। মোদী ২৪ ফেব্রুয়ারি গোরক্ষপুরে কৃষকদের সভায় যোগ দেবেন।

চিদম্বরমের পাল্টা প্রশ্ন, সাড়ে চার বছর ঘুমিয়ে থাকার পরে চাষিদের ভাল করতে এখন মোদী সরকারের ঘুম ভাঙল কেন? তাঁর কটাক্ষ, তাড়াহুড়ো করে তৈরি একটি পাঁচমিশেলি প্রকল্প ঘোষণা হয়তো হতে পারে। কিন্তু যে টাকা সরকারের ভাঁড়ারেই নেই, সেখান থেকে অর্থ বরাদ্দ হবে কী করে?

অর্থ মন্ত্রক সূত্রেরও ব্যাখ্যা, জিএসটি থেকে আয় ভাল নয়। প্রতি মাসে ১ লক্ষ কোটি টাকা আয়ের আশা করা হলেও, ডিসেম্বরে তা পূরণ হয়নি। অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে সেই আয় বাড়ার সম্ভাবনাও কম। বিশেষত জিএসটি-তে আরও করের বোঝা কমানো, কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর পরে।

অর্থ মন্ত্রক আজ সরকারি ঋণের ছবি নিয়ে ‘স্ট্যাটাস পেপার’ প্রকাশ করে জানিয়েছে, সরকারের দেনার বোঝা কমছে। রাজকোষ ঘাটতি মেটাতে কেন্দ্র মূলত বাজার থেকে ধার করছে। জিডিপি-র তুলনায় ঋণের হার, রাজস্ব আয়ের তুলনায় সুদ মেটানোর খরচের মতো মাপকাঠি বলছে, ধারের পরিমাণ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু সিএজি-র সাম্প্রতিক রিপোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্য ছুঁতে সরকার খাদ্য, সার বা সেচের ভর্তুকির জন্য সরকারি সংস্থাগুলিকে দিয়ে ধার করাচ্ছে। অথচ ওই অঙ্ক বাজেটে দেখানো হচ্ছে না।

তা বলে লোকসভা ভোটের আগে খয়রাতি থেকে সরে আসা মোদী সরকারের পক্ষে মুশকিল। কিন্তু তা করতে গিয়ে ঘাটতি বাড়লে, আখেরে তার ধাক্কা আর্থিক বৃদ্ধিতে লাগতে পারে বলে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন