আর্থিক সঙ্কট আর আইনি জটিলতা তো আছেই। এ বার অনিশ্চয়তার মাসুল গুনে বাজার হারানোর পালা হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস (এইচপিএল)-এর।
প্রায় পাঁচ মাস আগে বন্ধ হওয়া এই সংস্থার দরজা ফের কবে খুলবে, তা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে রাজ্য এবং চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। আশার কথা শোনাননি কারখানা কর্তৃপক্ষও। ফলে তৈরি হয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা। আর তা এড়াতে বাধ্য হয়েই এখন আমদানি ও অন্য উৎপাদকদের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে কাঁচামালের জন্য বরাবর পেট্রোকেমের উপর নির্ভর করে আসা বহু প্লাস্টিক পণ্য নির্মাতাকে। তাই দ্রুত সেই বাজার খোয়াচ্ছে এইচপিএল। এমনকী পরে কারখানা খুললেও, সেই হারানো বাজার ফিরে পাওয়া কতটা সম্ভব হবে, সে বিষয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্ট শিল্পমহল। ইন্ডিয়ান প্লাস্টিক্স ফেডারেশনের অন্যতম কর্তা প্রদীপ নায়ারের মতে, “কারখানা খুলতে যত দেরি হবে, তত বেশি বাজার হারাবে পেট্রোকেম।”
এ রাজ্যের প্লাস্টিক শিল্পমহল জানাচ্ছে, প্রায় পাঁচ মাস হতে চলল এইচপিএলে উৎপাদন বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে চিন-সহ নানা দেশ থেকে সেই কাঁচামাল আমদানি বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে তারা। কিনছে ছোট স্থানীয় সংস্থার কাছ থেকেও।
ফেডারেশনের দাবি, এইচপিএল যতটা কাঁচামাল জোগান দিত, ব্যবসা চালাতে এখন তার প্রায় ২৫ শতাংশই পূরণ করতে হচ্ছে আমদানি করে ও অন্যান্য সংস্থার থেকে কিনে। প্লাস্টিক শিল্পের মতে, মানের দিক থেকে এইচ পি এলের কাঁচামালই সব থেকে ভাল। কিন্তু জোগান এ ভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়লে, তার ভরসায় ব্যবসা করবে কোন সংস্থা? ফলে রুজি-রুটি বাঁচাতে বাইরে থেকে কাঁচামাল কিনতে হচ্ছে তাদের। শুধু তা-ই নয়, কোনওক্রমে টিকে থাকতে কাঁচামালের বদলে তৈরি পণ্য আমদানি করেও বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে কিছু ছোট সংস্থা। আর এই সব কারণেই তারা মনে করছে, এর পর দরজা খুলেও এই হারানো বাজার ফিরে পাওয়া বেশ কঠিন হবে পেট্রোকেমের পক্ষে।
পেট্রোকেমের কারখানায় ন্যাপথা চূর্ণের সঙ্গে কিছু রাসায়নিক মিশিয়ে তৈরি হয় ‘প্লাস্টিক গ্র্যানিউলস’ বা প্লাস্টিকের দানা। পলিপ্রপিলিন, এইচডিপিই, পিই এবং এলডি নামে বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকের দানা তৈরি হয় এখানে। এর মধ্যে এইচডিপিই উৎপাদনে পেট্রোকেম প্রথম সারির সংস্থা। বোতল, খেলনা, বালতি, ক্যারি ব্যাগের মতো পণ্য তৈরিতে এইচডিপিই ব্যবহৃত হয়।
রাজ্যের প্লাস্টিক শিল্পের দাবি, উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র ৫০% ব্যবহার করা সত্ত্বেও পূর্বাঞ্চলে প্রায় ৪০% বাজার রয়েছে পেট্রোকেমের। বন্ধের আগে সেখান থেকে ৮০% কাঁচামাল পেতেন তাঁরা। ফি মাসে ১৭ হাজার টন কাঁচামাল সরবরাহ করত সংস্থা। এখন জোগান পুরো বন্ধ হওয়ায় চূড়ান্ত দুর্ভোগে তাঁরা। তার উপর রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ, ইন্ডিয়ান অয়েল বা গেইলের মতো সংস্থার কাছ থেকেও পর্যাপ্ত কাঁচামাল পাওয়া শক্ত। কারণ, পশ্চিম ও উত্তর ভারতে তা জোগান দেওয়ার পরে রাজ্য-সহ পূর্বাঞ্চলের জন্য তাদের হাতে অবশিষ্ট তেমন কিছু থাকে না। প্রথম মাসে সেই ঘাটতি ছিল প্রায় ১৫ হাজার টন। এখন অবশ্য তা কিছুটা কমে ১১ হাজার টন।
প্লাস্টিক শিল্পের অভিযোগ, এ নিয়ে রাজ্যের বা চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর কর্ণধার পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের কাছে আর্জি জানিয়ে লাভ হয়নি। ফলে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে তাদের। মাসে ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে রাজ্যও।