নয়া কর্তৃপক্ষ পুজোর আগেই

অবশেষে বানতলা আর্থিক অঞ্চলের দায়িত্বে নবদিগন্ত

সব কিছু ঠিকঠাক চললে সল্টলেক সেক্টর ফাইভের পাশাপাশি বানতলা বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের দায়িত্বও পেতে চলেছে ‘নবদিগন্ত’। সরকারি সূত্রে খবর, পুজোর আগেই ১,১০০ একরের এই বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের কর্তৃত্ব পাচ্ছে তারা। সেক্টর ফাইভের দৈনন্দিন সমস্যা সামলে যে-অভিজ্ঞতা রয়েছে নবদিগন্তের, তার ভরসাতেই রাজ্য বানতলার ভার এই প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিতে চায়। নানা টানাপোড়েনের মাঝে পড়ে নবদিগন্তের ধাঁচে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ এত দিন বানতলার ভাগ্যে জোটেনি।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০১:১৩
Share:

সব কিছু ঠিকঠাক চললে সল্টলেক সেক্টর ফাইভের পাশাপাশি বানতলা বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের দায়িত্বও পেতে চলেছে ‘নবদিগন্ত’। সরকারি সূত্রে খবর, পুজোর আগেই ১,১০০ একরের এই বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের কর্তৃত্ব পাচ্ছে তারা। সেক্টর ফাইভের দৈনন্দিন সমস্যা সামলে যে-অভিজ্ঞতা রয়েছে নবদিগন্তের, তার ভরসাতেই রাজ্য বানতলার ভার এই প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিতে চায়। নানা টানাপোড়েনের মাঝে পড়ে নবদিগন্তের ধাঁচে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ এত দিন বানতলার ভাগ্যে জোটেনি।

Advertisement

২০০৯ সাল থেকেই ‘বানতলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ অথরিটি’ গড়ার বিষয়ে ভাবনাচিন্তার শুরু। বানতলায় রাস্তাঘাট, আলো, নিকাশি, জল-সহ বিভিন্ন নাগরিক পরিষেবার অভাব এখনও কাটেনি। নিরাপত্তা নিয়েও স্বস্তি নেই। সন্ধ্যে নামলেই গোটা এলাকা একটা ভুতুড়ে চেহারা নেয়। কিন্তু যে-সমস্যা এই আর্থিক অঞ্চলকে সবচেয়ে বেশি তাড়া করে ফিরেছে তা হল দূষণ।

২০১১ সালে বর্তমান সরকার এ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করলে তা সরকারের অন্দরমহলে মতানৈক্যের জেরে থমকে যায়। পুর দফতরের দাবি ছিল, এ বিষয়ে রাজ্য উদ্যোগী হলে, তার ঘাড়ের উপর চাপবে বাড়তি আর্থিক বোঝা। পার পেয়ে যাবে পরিকাঠামো গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কম দামে জমি পাওয়া নির্মাণ সংস্থা। আবার শিল্প দফতরের যুক্তি ছিল, বানতলার জন্য এই কর্তৃপক্ষ গড়লে উপকৃত হবে সেখানকার শিল্পমহল। তাই শুধু পুরনো কাসুন্দি না-ঘেঁটে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ তৈরি করা একান্ত জরুরি।

Advertisement

গত বছর ডিসেম্বরে সচিব স্তরের এক বৈঠকে এই সমাধানসূত্রকে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শিল্প সচিব চঞ্চলমল বাচাওয়াত, পুর সচিব বি পি গোপালিকা, তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের সচিব সতীশ তিওয়ারি ও শিল্প অধিকর্তা রূপেন চৌধুরী। বৈঠকে হাজির ছিলেন বানতলা চর্মনগরী ও তথ্যপ্রযুক্তি পার্কের নির্মাণ সংস্থার কর্ণধার জগমোহন ডালমিয়া ও অভিষেক ডালমিয়া।

এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পরেও টাউনশিপ অথরিটি তৈরি হয়নি। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের ক্ষোভ, দূষণ সমস্যায় প্রকল্প শেষ করেও কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। ধনসেরি ও ফোরাম প্রজেক্টস-এর বিশাল দু’টি বাড়ি তৈরি হয়ে গেলেও ভাড়া নিতে এগোচ্ছে না ছোট-বড় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা।

সেক্টর ফাইভ ও রাজারহাটে জমির অভাব। থাকলেও দাম আকাশছোঁয়া। চাহিদা ও সরবরাহের এই সমস্যার কিছুটা সমাধান করেছিল বানতলার কলকাতা আই টি পার্ক। ১৮টি সংস্থা জমি নিয়েছে এখানে। বাজার দরেই জমি কিনেছে কগনিজ্যান্ট, টেক মহীন্দ্রা ও আই-গেট পাটনির মতো সংস্থা। কিন্তু সেক্টর ফাইভ বা রাজারহাটের তুলনায় এখনও বানতলা ‘দুয়োরানি’ থেকে গিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ক্ষোভ।

মূলত এই দূষণের হাত থেকে বাঁচতেই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি একজোট হয়ে তৈরি করেছে পৃথক সংগঠন ‘কলকাতা আই টি পার্ক অ্যাসোসিয়েশন’। ১২০ একর জমি জুড়ে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প প্রকল্পের পাশেই রয়েছে চর্মনগরী। ফলে গোড়া থেকেই দূষণের সমস্যায় জেরবার কলকাতা আই টি পার্ক। বছর দুয়েক আগে সমাধানসূত্র হিসেবে বর্জ্য ও নিকাশি নালা পৃথক করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প প্রকল্পে ঢুকে পড়বে না চর্মনগরীর বর্জ্য। কিন্তু তাতেও বিশেষ ফল হয়নি।

অন্য দিকে চর্মশিল্পের দাবি, প্রথমে বানতলার ওই স্থান চর্মশিল্পের জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। তাই সেখানে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে কেন জমি দেওয়া হল, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ তারা। একই সঙ্গে তাদের অভিযোগ, অনিয়মিত জল সরবরাহের কারণে নিত্য সমস্যার মুখে পড়ে এই শিল্প। ফলে বাধ্য হয়েই গভীর নলকূপ বসিয়ে জল তুলতে হয়। দু’পক্ষেরই অভিযোগ, নজরদারির জন্য কর্তৃপক্ষ থাকলে সমস্যা এত দূর গড়াত না।

গত ছ’বছর ধরে ফাইল বন্দি এই পরিকল্পনা সময়সীমা মেনে বাস্তবায়িত হয় কি না, সেটাই এখন দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement