আরও উত্থানের রসদ মজুত বাজারে

অবশেষে সেনসেক্সের ‘এভারেস্ট জয়’। উঁচু কোনও শৃঙ্গজয়ের পরে পর্বতারোহীরা সেখানে বেশিক্ষণ থাকেন না। আবহাওয়া খারাপ হতে পারে, এই ভয়ে নেমে আসেন। সেনসেক্সের বেলায় এ বার কিন্তু সেটি খাটছে না। বাজারের আবহাওয়াবিদদের মতে, ২৯ হাজারের উচ্চতাতেও আবহাওয়া খারাপ হওয়ার তেমন লক্ষণ নেই। উত্তেজনার যথেষ্ট রসদ এখনও মজুত আছে বাজারে। অর্থাৎ সূচকের ‘বেস ক্যাম্পে’ নেমে আসার কোনও কারণ নেই। এভারেস্টের উপর তো মহাকাশ আছে। অতি উৎসাহীরা বলছেন, আকাশই এখন সূচকের ওঠার ঊর্ধ্বসীমা। এই জোরালো আশার কারণগুলি এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:২৪
Share:

অবশেষে সেনসেক্সের ‘এভারেস্ট জয়’। উঁচু কোনও শৃঙ্গজয়ের পরে পর্বতারোহীরা সেখানে বেশিক্ষণ থাকেন না। আবহাওয়া খারাপ হতে পারে, এই ভয়ে নেমে আসেন। সেনসেক্সের বেলায় এ বার কিন্তু সেটি খাটছে না। বাজারের আবহাওয়াবিদদের মতে, ২৯ হাজারের উচ্চতাতেও আবহাওয়া খারাপ হওয়ার তেমন লক্ষণ নেই। উত্তেজনার যথেষ্ট রসদ এখনও মজুত আছে বাজারে। অর্থাৎ সূচকের ‘বেস ক্যাম্পে’ নেমে আসার কোনও কারণ নেই। এভারেস্টের উপর তো মহাকাশ আছে। অতি উৎসাহীরা বলছেন, আকাশই এখন সূচকের ওঠার ঊর্ধ্বসীমা। এই জোরালো আশার কারণগুলি এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।

Advertisement

চিনের অর্থনীতি আগের তুলনায় এখন মন্থর। অন্য দিকে ভারতের অর্থনীতিতে বৃদ্ধির আশা প্রবল। রাশিয়া-সহ কয়েকটি রাষ্ট্রের অর্থনীতি এখন বেশ বিপাকে। এই অবস্থায় ভারতই লগ্নির শ্রেষ্ঠ জায়গা।

ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক আগামী মার্চ থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত প্রতি মাসে ৬,০০০ কোটি ইউরো মূল্যের বন্ড বাজার থেকে কেনার সিদ্ধান্তে ইউরোপে অর্থের জোগান ভাল রকম বাড়বে। ফলে চাঙ্গা হয়ে উঠবে ইউরোপীয় অর্থনীতি। উজ্জ্বল হবে ইউরোপে ভারতের রফতানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা।

Advertisement

তেলের দাম এখন তলানিতে। এর ফলে বিদেশি মুদ্রার খরচ ভাল রকম কমেছে ভারতের মতো তেল আমদানিকারী দেশগুলির। এই কারণে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

মূল্যবৃদ্ধি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসায় সুদ ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটতে শুরু করেছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আর সুদের হার কমার সঙ্গে সঙ্গে চাঙ্গা হবে বিভিন্ন শিল্প। তেজী থাকবে শেয়ার বাজার। চলতি সপ্তাহের বড় খবর, মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার ভারত সফর। ভারতীয় অর্থনীতির কাছে এই সফরের গুরুত্ব বিরাট। এই সফরকে কেন্দ্র করে কত লগ্নি ভারতে আসে এবং বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারত কতটা নতুন সুবিধা পায়, তা দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট বহু মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। বিভিন্ন অগ্রণী মার্কিন সংস্থার সঙ্গে ভারতের কী কী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তার উপর নজর থাকবে শেয়ার বাজারের। কোনও চমক থাকলে তার প্রভাব পড়বে মঙ্গলবার বাজার খুললে।

আশা, চলতি আর্থিক বছরের শেষ তিন মাসে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার অনেকটাই উঠবে। এর প্রতিফলন পড়বে বিভিন্ন সংস্থার আর্থিক ফলাফলে। তা যদি হয়, তবে সূচক তেজী না-থাকার কারণ নেই।

২৮ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় বাজেট। এটিই অর্থমন্ত্রী হিসেবে অরুণ জেটলির প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট। কিছু চমক থাকলেও থাকতে পারে। সম্ভাবনা আছে ভর্তুকি কমার। যে-টাকা সাশ্রয় হবে, তা বিনিয়োগ করা হতে পারে পরিকাঠামো উন্নয়নে। গত সপ্তাহে দাভোসে দেওয়া জেটলির এই ইঙ্গিত বাস্তবে মিললে খুশি হবে শেয়ার বাজার।

২০১৪ ছিল প্রত্যাশার বছর। ২০১৫ হবে প্রত্যাশা পূরণের শুরু। প্রত্যাশার ভিতে চেপে সেনসেক্স পৌঁছেছে ২৯ হাজারে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সামগ্রিক উন্নতি ঘটতে শুরু করলে এই ভিত ক্রমশই মজবুত হবে। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার ভয় থাকবে না।

সব মিলিয়ে দেশের পরিবেশ বেশ অনুকূল। পাশাপাশি চাঙ্গা বিশ্ব বাজারও। নজিরভাঙা জায়গায় পৌঁছেছে ভারতের বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার। গত সপ্তাহে ২৬৬ কোটি ডলার বেড়ে তা ছুঁয়েছে ৩২,২১৪ কোটি ডলার। বিদেশি লগ্নি বৃদ্ধি এবং আমদানি কমার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিলগ্নিকরণ এবং নতুন করে কয়লা খনি ও স্পেকট্রাম নিলামের পথ ধরে মার্চ মাসের মধ্যে মোটা টাকা আসবে সরকারের ঘরে। মজবুত হবে সরকারের আর্থিক অবস্থা। এই রকম পরিস্থিতিতে শেয়ার বাজারের বেশ ভাল থাকারই কথা।

শেয়ার সূচক এখন সর্বোচ্চ জায়গায়। এতটা ওঠার পরে কিছুটা সংশোধন অস্বাভাবিক নয়। তবে অনুকূল শর্তগুলি এখন এতটাই জোরালো যে, সংশোধন বেশি দিন স্থায়ী হতে পারবে না। এই পরিস্থিতিতে ভাল শেয়ার ধরে রাখার পরামর্শই দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্য দিকে প্রতিটি পতনে কেনা যেতে পারে বাছাই করা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, গাড়ি, গৃহঋণ সংস্থা এবং নির্মাণ ও পরিকাঠামো সংস্থার শেয়ার। একটু সাবধান থাকতে হবে মিড ক্যাপ এবং স্মল ক্যাপ শেয়ার বাছাই করার ব্যাপারে।

ব্যাঙ্ক স্থাপনের পথে ধীরে হলেও দৃঢ় পদক্ষেপে এগোচ্ছে ভারতীয় ডাক বিভাগ। ব্যাঙ্কের প্রাথমিক মূলধন হবে ৫০০ কোটি টাকা। পরে অর্থ সংগ্রহ করা হতে পারে পাবলিক ইস্যুর মাধ্যমে। অথবা শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ হতে পারে এই ব্যাঙ্ক। দেশে ডাকঘরের সংখ্যা ১.৫৫ লক্ষ। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে আছে ১.৪০ লক্ষ শাখা। ডাকঘর ব্যাঙ্কে পরিণত হলে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে যেতে পারে প্রত্যন্ত গ্রামে। গ্রামাঞ্চলে অন্যান্য ব্যাঙ্কের শাখার সংখ্যা সর্বসাকুল্যে ৩৫,০০০। ডাকঘরের বিভিন্ন প্রকল্পে আছে সাধারণ মানুষের কম-বেশি ৬ লক্ষ কোটি টাকা।

অন্য দিকে, লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনার অধীনে এখনও পর্যন্ত সারা দেশে ১১.৫ কোটি নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। ভর্তুকি সরাসরি পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এই সব অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন