প্রকাশ্যে আসতে পারে কেন্দ্র-রাজ্য চাপান-উতোর

উত্তরবঙ্গে চা শিল্পের পরিস্থিতি দেখতে আসছেন সীতারামন

আমন্ত্রণ জানিয়েও গুয়াহাটিতে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে সাড়া মেলেনি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, শিলিগুড়িতে কি আসবেন পশ্চিমবঙ্গের কোনও সরকারি প্রতিনিধি? সব কিছু ঠিকঠাক চললে আগামী মাসের গোড়াতেই চা শিল্পের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে উত্তরবঙ্গে আসার কথা কেন্দ্রীয় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমন্ত্রণ পেলে সেই বৈঠকে রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে সংশয়ে শিল্পমহল। বিশেষ করে যখন বন্ধ চা বাগানকে ঘিরে কেন্দ্রের সঙ্গে চাপান-উতোরে জড়িয়েছে রাজ্য সরকার।

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৩৯
Share:

আমন্ত্রণ জানিয়েও গুয়াহাটিতে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে সাড়া মেলেনি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, শিলিগুড়িতে কি আসবেন পশ্চিমবঙ্গের কোনও সরকারি প্রতিনিধি? সব কিছু ঠিকঠাক চললে আগামী মাসের গোড়াতেই চা শিল্পের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে উত্তরবঙ্গে আসার কথা কেন্দ্রীয় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমন্ত্রণ পেলে সেই বৈঠকে রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে সংশয়ে শিল্পমহল। বিশেষ করে যখন বন্ধ চা বাগানকে ঘিরে কেন্দ্রের সঙ্গে চাপান-উতোরে জড়িয়েছে রাজ্য সরকার।

Advertisement

মাস তিনেক আগে দেশে চা শিল্পের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গুয়াহাটিতে মালিকপক্ষ, কর্মী ইউনিয়ন ও সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন সীতারামন। ন্যূনতম মজুরি থেকে শুরু করে চা-কে জাতীয় পানীয়ের স্বীকৃতি দেওয়ার মতো নানা দাবি বিভিন্ন পক্ষ থেকে উঠেছিল। ক্ষুদ্র চা চাষিদের বিষয়টিও আলোচিত হয় সেখানে। টি বোর্ড সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে হাজির থাকার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও এ রাজ্য থেকে কোনও প্রতিনিধি তাতে যোগ দেননি। যদিও অসমের তরফে মন্ত্রী ও আমলারা ওই বৈঠকে ছিলেন।

শিলিগুড়িতেও একই রকম বৈঠক হওয়ার কথা। প্রাথমিক ভাবে সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত, ৩ ফেব্রুয়ারি ওই বৈঠক হতে পারে। সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা, বৈঠকে বেশি গুরুত্ব পেতে পারে বন্ধ চা বাগানের বিষয়টি। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বন্ধ বাগানগুলি পরিদর্শনও করতে পারেন। উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গে পাঁচটি চা বাগান বন্ধ। আরও বেশ কয়েকটির অবস্থা খারাপ। বন্ধ বাগানগুলিকে ঘিরে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিরোধী বিজেপি-র মধ্যে নতুন করে রাজনৈতিক চাপান-উতোর চলছে।

Advertisement

তবে গত মাসে নবান্নয় রাজ্যের মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্রের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, বন্ধ চা বাগান খোলা ও সার্বিক ভাবে চা শিল্পের উন্নয়নে দু’পক্ষ কী ভাবে এক সঙ্গে কাজ করতে পারে, সে নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। আর একটি সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়।

তার আগে উত্তরবঙ্গের বন্ধ চা বাগানে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য সরকার দাবি তুলেছিল যে, বাগান খোলার দায় কেন্দ্রের। এ জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠিও দিয়েছিলেন সীতারামনকে। তারপর রাজ্যের মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্র ও পদস্থ আমলাদের সঙ্গে বৈঠক করতে কলকাতায় আসেন বাণিজ্য মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব রজনী রঞ্জন রশ্মি।

কিন্তু কোন পথে বন্ধ বাগানের তালা খুলবে, সে ব্যাপারে বৈঠকের পরেও মেলেনি রফাসূত্র।

বন্ধ বাগান খোলার বিষয়টি নিয়ে চাপান-উতোর অবশ্য নতুন নয়। ইউপিএ আমলেই তত্‌কালীন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জয়রাম রমেশ কেন্দ্রীয় চা আইন সংশোধনের পথে হাঁটার চেষ্টা করেও সফল হননি। কারণ সংশ্লিষ্ট শিল্পের মতে, আইন সংশোধন করলেই শুধু হবে না। বাগানগুলির কাছে বিভিন্ন সংস্থার বিপুল বকেয়া রয়েছে। সেগুলি যেমন আইনি জটিলতায় আটকে, তেমনই শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা মেটানোর দায় কে মেটাবে, তা স্পষ্ট নয়।

পাশাপাশি, টি বোর্ডের দাবি, বাগানের জমির লিজ দেয় রাজ্য সরকার। সে ক্ষেত্রে মালিক বাগান বন্ধ করলে তাঁর লিজ বাতিল করে অন্য কারও হাতে তা তুলে দিক রাজ্য। কিন্তু তা হলে বাগানের সমস্ত দায় রাজ্যের উপর চলে আসতে পারে, এই আশঙ্কায় রাজ্য আপাতত কেন্দ্রীয় আইনের দিকেই বল ঠেলছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। এই পরিস্থিতিতে সীতারামন উত্তরবঙ্গে এলে বন্ধ বাগানের বিষয়টি সামনে চলে আসবে বলেই মনে করছে তারা।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী উত্তরবঙ্গে এলে তাঁর সফরের ব্যাপারে দায়িত্বে থাকবে টি বোর্ড-ই। এই সফরকে স্বাগত জানিয়েছে চা শিল্প। বাগান মালিকদের সংগঠন কনসাল্টেটিভ কমিটি অব প্লান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সেক্রেটারি জেনারেল মনোজিত্‌ দাশগুপ্ত অবশ্য বলেন, “আমরা এ খবর শুনেছি। তবে সরকারি ভাবে এখনও কেউ কিছু জানায়নি। আমন্ত্রণ পেলে রাজ্যের চা শিল্পের পরিস্থিতি তুলে ধরব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন