কীটনাশক বিধি ছোট চা চাষির জন্য প্রয়োগ ঘিরে বিভ্রান্তি

গোড়ায় গলদ। টি বোর্ড চা গাছে কীটনাশক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলেও এ সংক্রান্ত নতুন বিধি আগাগোড়াই বিভ্রান্তিকর। তা রূপায়ণের স্পষ্ট কোনও নির্দেশিকাও নেই। অথচ চা গাছে কীটনাশক ব্যবহার নিয়ে নানা অভিযোগ উঠছে। কোথাও কোথাও অনুমোদনহীন কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে বলেও অভিযোগ।

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৫৭
Share:

গোড়ায় গলদ।

Advertisement

টি বোর্ড চা গাছে কীটনাশক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলেও এ সংক্রান্ত নতুন বিধি আগাগোড়াই বিভ্রান্তিকর। তা রূপায়ণের স্পষ্ট কোনও নির্দেশিকাও নেই। অথচ চা গাছে কীটনাশক ব্যবহার নিয়ে নানা অভিযোগ উঠছে। কোথাও কোথাও অনুমোদনহীন কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে বলেও অভিযোগ। আবার কীটনাশক বৈধ হলেও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে চা গাছে তার অবশিষ্ট থেকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে। বিভ্রান্তি আরও বেড়েছে বড় বাগানের মতো ক্ষুদ্র চা চাষিদেরও কীটনাশক নিয়ে এই নতুন ব্যবহারবিধি মেনে চলার নির্দেশ জারি করা নিয়ে।

প্রশ্ন উঠেছে, কেউ যদি বিধি না- মানেন, তা হলে সেই চাষিকে খুঁজে বার করা হবে কী করে? টি বোর্ড বড় বাগানের মতো ছোট চা চাষিদের কাছেও শুধু মুচলেকা চেয়েই ক্ষান্ত। কিন্তু চা শিল্প জানতে চায়, যেখানে অনেক ক্ষুদ্র চা চাষির সরবরাহ করা পাতা একসঙ্গে মিশিয়ে এজেন্ট কারখানায় দেন, সেখানে ত্রুটিযুক্ত পাতাই বা চিহ্নিত হবে কী করে? এ সবের স্পষ্ট জবাব নেই কারও কাছে।

Advertisement

চা শিল্প ও টি বোর্ডের অবশ্য দাবি, ভারতীয় চায়ে কীটনাশক ব্যবহার নিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই। এই চা নিরাপদ। তবুও এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে গত বছর থেকেই নতুন ‘প্লান্ট প্রোটেকশান কোড’ (পিপিসি) চালু করেছে টি বোর্ড, যেখানে বিভিন্ন কীটনাশক বা রাসায়নিকের নাম ও ব্যবহার নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

সেখানেই বলা হয়, বিক্রেতাকে বড় বাগানগুলি এই মর্মে মুচলেকা দেবে যে, তারা পিপিসি মেনেই চা তৈরি করেছে ও নিষিদ্ধ কোনও কীটনাশক বা রাসায়নিক ব্যবহার করেনি। বড় ও সংগঠিত বাগানগুলির তাতে সাধারণ ভাবে আপত্তি না-থাকলেও তারা গোটা ব্যবস্থাটির কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তাদের যুক্তি, যেহেতু এখন চা শিল্পে ৩০ শতাংশেরও বেশি পাতার জোগায় ক্ষুদ্র চাষিরা, তাই একই মুচলেকা তাঁরাও না-দিলে বড় বাগানগুলি কী ভাবে তাঁদের দায় নেবে? এই পরিপ্রেক্ষিতে ঠিক হয়, নতুন বছর থেকে ক্ষুদ্র চাষিদেরও মুচলেকা দিতে হবে।

চা শিল্পের একাংশের অবশ্য দাবি, মুচলেকাই যথেষ্ট নয়। গোড়ার গলদ নিয়েও ভাবতে হবে। কারণ ক্ষুদ্র চা চাষিরা ছোট জমিতে চাষ করেন। বড় বাগানের মতো তা অনেক সময়েই ঘেরা থাকে না। ফলে পাশের জমিতে অন্য কিছু চাষ হলে এবং সেখানে ব্যবহৃত কীটনাশক চা বাগানে চলে এলেও (যদি তা চায়ের ক্ষেত্রে অনুমোদিত না হয়) চা গাছের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। পাশাপাশি, ক্ষুদ্র চা চাষিরা এজেন্টদের মাধ্যমে ‘বটলিফ’ কারখানা বা বড় বাগানে পাতা বেচেন। কিন্তু সেগুলি সংগৃহীত হয় একত্রে। ফলে পরে কোনও ক্ষুদ্র চাষির চা গাছে কীটনাশকের ব্যবহারবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে কি না, তা কী ভাবে খুঁজে বার করা হবে, সেটি স্পষ্ট নয়।

শুধু তাই নয়, এ রাজ্যে প্রত্যেক ক্ষুদ্র চাষি যে প্রতি বার একই বাগান বা বটলিফ কারখানাকে পাতা বেচেন এমন নয়। সে ক্ষেত্রে আজ এ বাগান তো কাল ও বাগানে পাতা বিক্রি হলে একই ভাবে ত্রুটিযুক্ত বাগানের পাতা চিহ্নিত করাও সমস্যার।

তাদের আরও অভিযোগ, কেনিয়ায় চা পাতার গুণমান গোড়াতেই পরীক্ষা হয়। মান না-মানলে পাতা নেয় না কোনও কারখানা। তবে এখানে এ রকম ব্যবস্থা আরোপ করলে রাজনৈতিক বাধার মুখে পড়তে হতে পারে কারখানাকে।

তবে এ দেশেও ক্ষুদ্র চাষিদের পাতা সংগ্রহ ও বাগানে জোগানের সময়েই তা যাতে আলাদা করে রাখা যায়, সেই ব্যবস্থা চালু করা জরুরি বলে মনে করে চা শিল্পের একাংশ। সে ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে কোনও বাগানের পাতায় কীটনাশক ব্যবহারের বিধি অমান্যের হদিস মিললে, সকলকে কাঠগড়ায় না-তুলে সংশ্লিষ্ট বাগানকে চিহ্নিত করা সহজ হবে।

পিপিসি-কে স্বাগত জানালেও তাঁদের সংগঠন সিস্টা-র প্রেসিডেন্ট বিজয়গোপাল চক্রবর্তীর দাবি, টি বোর্ড কিছু কর্মশালা করেছে। কিন্তু অনেকেই এর আওতার বাইরে। সরকারি তরফেও যথেষ্ট প্রচার হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। যদিও পাল্টা প্রশ্ন উঠছে, এ নিয়ে গত বছর থেকে কথা শুরু হলেও তাঁরা নিজেরাই কেন উদ্যোগী হননি? বিজয়গোপালবাবুর দাবি, সংগঠনগত ভাবেও সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছিলেন তাঁরা। তবে লুপার-ক্যাটারপিলার ও চা-মশার দাপটে চা গাছ নষ্ট হচ্ছে। অথচ সেগুলি নিয়ন্ত্রণে কোন ধরনের কীটনাশক দরকার, তা পিপিসি-তে বলা নেই। এই অভিযোগ সত্যি কি না, তা যাচাই করে দেখছে টি বোর্ড।

বিজয়গোপালবাবুর বক্তব্য, পিপিসি- তে কীটনাশক ও অন্য রাসায়নিকের বিজ্ঞানসম্মত বা মূল নাম আছে। কিন্তু ক্ষুদ্র চা চাষিদের বেশির ভাগই ওষুধের মতো বিভিন্ন সংস্থার ‘ব্র্যান্ড’ বা বাণিজ্যিক নামই জানেন। ফলে সমস্যা সেখানেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন