বেহিসেবি বিমান কিনেই বিপত্তি, মত বিশেষজ্ঞদের

কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে ধারে জ্বালানি, বিকেল গড়িয়ে উড়ল স্পাইসের বিমান

জ্বালানি কেনার টাকা ছিল না স্পাইসজেটের কাছে। সরবরাহকারী সংস্থাগুলি জানিয়ে দিয়েছিল, বাকিতে তেল দেবে না তারা। এই অবস্থায় বুধবার সকাল থেকে দেশ জুড়ে স্পাইসজেটের সমস্ত বিমান বসিয়ে দিতে হয়। গত ছ’মাস ধরে নগদ টাকা দিয়েই জ্বালানি কিনছে স্পাইস। কিন্তু, মঙ্গলবার রাত থেকে টাকার অভাবে তা বন্ধ হয়ে যায়। বেশ কিছু বিমান বসিয়ে দেওয়ার পরেও এই মূহূর্তে দিনে প্রায় ৩ কোটি টাকা নগদ দিয়ে জ্বালানি কিনতে হয় তাদের।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:১১
Share:

জ্বালানি কেনার টাকা ছিল না স্পাইসজেটের কাছে। সরবরাহকারী সংস্থাগুলি জানিয়ে দিয়েছিল, বাকিতে তেল দেবে না তারা।

Advertisement

এই অবস্থায় বুধবার সকাল থেকে দেশ জুড়ে স্পাইসজেটের সমস্ত বিমান বসিয়ে দিতে হয়। গত ছ’মাস ধরে নগদ টাকা দিয়েই জ্বালানি কিনছে স্পাইস। কিন্তু, মঙ্গলবার রাত থেকে টাকার অভাবে তা বন্ধ হয়ে যায়। বেশ কিছু বিমান বসিয়ে দেওয়ার পরেও এই মূহূর্তে দিনে প্রায় ৩ কোটি টাকা নগদ দিয়ে জ্বালানি কিনতে হয় তাদের। জানা গিয়েছে, বুধবার দুপুরের পরে কেন্দ্রের অনুরোধে ধারে তেল দিতে রাজি হয় জ্বালানি সংস্থাগুলি। বলা হয়, আরও ১৫ দিন ধারে তেল দেওয়া হবে। তার পরে আর নয়। বিকেলের পরে আকাশে আবার ডানা মেলে স্পাইসের বিমান। এ দিনই কলানিধি মারানের মূল সংস্থা সান-এর তরফে জানানো হয়েছে, স্পাইসকে বাঁচাতে এই মুহূর্তে নগদ টাকা ঢালা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কোনও ব্যাঙ্ক ঋণ দিলে গ্যারান্টর হতে পারে সান।

কেন এমন অবস্থা হল স্পাইসের?

Advertisement

দেড় বছর আগেও ছিল শুধু ৩৩টি বোয়িং ৭৩৭ বিমান। তার পর স্পাইস আচমকাই কেনে ১৫টি ৯০ আসনের বোম্বার্ডিয়ার বিমান। এর কারণ? সেই সময়ে দক্ষিণ ভারতের ব্যবসায়ী কলানিধি মারান সংস্থাটি কিনে নেন। তাঁরই ইচ্ছা অনুযায়ী ঠিক হয়, দক্ষিণের ছোট ছোট শহরে ছোট বিমান চালানো হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেটাই শেষের শুরু।

ভারতের আকাশ দাপিয়ে বেড়ানো অন্য সস্তার বিমান পরিষেবা সংস্থা ইন্ডিগোর সঙ্গে তুলনা টেনে এক বিশেষজ্ঞ বলেন, “যে-সময়ে ইন্ডিগোর হাতে সব মিলিয়ে ৮৫টি বিমান ছিল, তারা মোট ৩৭টি শহর থেকে উড়ান চালাচ্ছিল। আর মাত্র ৪৮টি বিমান নিয়ে স্পাইস চলছিল ৪৬টি বিমানবন্দর থেকে! পরিকল্পনার অভাব ছাড়া আর কী! দক্ষিণ ভারতের ছোট শহর থেকে যাত্রী হবে কি না, তার সমীক্ষা না-করেই চালু হয় উড়ান।” তা ছাড়াও দু’ধরনের বিমান চালানো, সমান্তরাল দু’টি বিমান সংস্থা চালানোর খরচ বহন করার মতো, মন্তব্য করেন এক বিশেষজ্ঞ। তাঁর কথায়, “বোয়িং-এর পাইলট, বিমানসেবিকা, ইঞ্জিনিয়ার সবই বোম্বার্ডিয়ারের চেয়ে আলাদা। দু’দল কর্মী, আলাদা যন্ত্রাংশ চাই।” ইন্ডিগো শুধুমাত্র এয়ারবাস ৩২০ বিমান চালায়।

প্রশ্ন উঠেছে, স্পাইসজেটের মতো ইন্ডিগোও তো ঘোষিত সস্তার বিমান পরিষেবা সংস্থা। গত অর্থবর্ষেও লাভের মুখ দেখেছে তারা। একই পরিস্থিতিতে একটি সংস্থা যেখানে লাভ করছে, অন্যটি কেন মৃত্যুপথযাত্রী? কিছু দিন আগে মুখ থুবড়ে পড়েছিল কিংফিশার। অভিযোগ ওঠে, অত্যধিক আড়ম্বরের জন্য বেহিসেবি খরচ করতে গিয়েই শেষ পর্যন্ত ডুবেছিল বিজয় মাল্যের সংস্থা। কিন্তু, স্পাইসের ক্ষেত্রে তো সেই যুক্তি খাটে না। তা হলে কেন এই দুরবস্থা?

এখানেই উঠে এসেছে এক বছর আগে কেনা ওই ১৫টি বিমানের কথা। এক বিশেষজ্ঞের কথায়, “এক দিকে জ্বালানির চড়া দাম, অন্য দিকে সস্তায় টিকিট দেওয়ার চাপ এই দুইয়ের মাঝে টিঁকে থাকতে চাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।” অভিযোগ, যা কোনও দিনই ছিল না স্পাইসের। জানা গিয়েছে, ২০২৫ পর্যন্ত কোন রুটে উড়ান চালানো হবে, কতগুলি বিমান কেনা হবে, তার সমস্ত পরিকল্পনা তৈরি ইন্ডিগোর। আর উল্টো দিকে দেনায় ডুবেছে স্পাইস। পাওনাদারদের অর্থ মেটাতে বাজার থেকে একসঙ্গে নগদ টাকা তোলার জন্য সাত-আট মাস ধরে মাঝেমধ্যেই কখনও এক লপ্তে ১ টাকার, কখনও ১০০ টাকার টিকিট বিক্রি করেছে সংস্থা। ফলে বাড়ে সামগ্রিক লোকসান।

ভয়ানক সমস্যায় পড়েছেন স্পাইসের যাত্রীরা। টিকিট বাতিল করলেও, টাকা ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না। এজেন্টরা স্পাইসের টিকিট বিক্রি কার্যত বন্ধ করে দিয়েছেন। শেষ মূহূর্তে টিকিট দিতে প্রচুর টাকা চাইছে অন্য সংস্থাগুলি। বুধবার কলকাতা থেকে বেঙ্গালুরু যাওয়ার স্পাইসের টিকিট বাতিল হয়ে যায় অদ্রিজা মুখোপাধ্যায়ের। জানতে পারেন এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিট মিলছে ৩৬ হাজার টাকায়! ফলে যাত্রা বাতিল করতে হয়। এ দিন কলকাতা বিমানবন্দরে স্পাইস কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কেউ দাঁড়িয়েছিলেন বাতিল টিকিটের টাকা ফেরত নিতে, কেউ জরুরি পরিস্থিতির কথা জানিয়ে স্পাইসের কর্মীদের কাছে অন্য কোনও বিমানে টিকিট কেটে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছিলেন। বুধবার বিকেল পর্যন্ত দেশের সর্বত্র বিমান বসে যাওয়ায় কলকাতা থেকে স্পাইসের প্রথম উড়ান ছাড়ে বিকেলের পরে। ১৯টির জায়গায় কলকাতা থেকে সারা দিনে মাত্র চারটি উড়ান চালানোর কথা জানিয়েছে স্পাইস। জনৈক কর্মী বলেন, “উড়ান যাবে জানি। তবে, কোনও নির্ধারিত সময় নেই।”

তথ্য সহায়তা: সায়নী ভট্টাচার্য

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন