কেয়ার্ন এনার্জির পরে এ বার কেয়ার্ন ইন্ডিয়ার ঘরেও করের নোটিস পাঠাল কেন্দ্রীয় আয়কর দফতর।
লন্ডন ভিত্তিক বেদান্ত গোষ্ঠীর শাখা সংস্থা কেয়ার্ন ইন্ডিয়া শুক্রবার জানিয়েছে, মোট ২০,৪৯৫ কোটি টাকার করের নোটিস পেয়েছে তারা। এর মধ্যে বকেয়া করের অঙ্ক ১০,২৪৮ কোটি টাকা। আর বাকি ১০,২৪৭ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে সুদ হিসেবে। তবে সংস্থার দাবি, আয়কর দফতরের পাঠানো এই নোটিসের সঙ্গে তারা একমত নয়। এবং নিজেদের স্বার্থরক্ষায় সব রকম পদক্ষেপের রাস্তা খোলা রাখছে তারা।
২০১১ সালে কেয়ার্ন ইন্ডিয়ায় থাকা নিজেদের সিংহভাগ মালিকানা বেদান্ত গোষ্ঠীকে বিক্রি করে দেয় কেয়ার্ন এনার্জি। সেখানে অংশীদারি তখন ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে তারা। তারও আগে ভারতের বাজারে প্রথম বার শেয়ার ছাড়ার পথ মসৃণ করতে কেয়ার্ন ইন্ডিয়া হোল্ডিংসের শেয়ার তুলে দেওয়া হয় কেয়ার্ন ইন্ডিয়ার হাতে। আয়কর দফতরের দাবি, ২০০৬-’০৭ সালে হওয়া ওই শেয়ার হস্তান্তরের সূত্রেই কেয়ার্ন ইন্ডিয়াকে করের এই নোটিস।
উল্লেখ্য, কেয়ার্ন ইন্ডিয়ার ঘরে করের এই ফতোয়া পাঠানোর তিন দিন আগেই একই ধরনের নোটিস নিয়ে আয়কর দফতরের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছে কেয়ার্ন এনার্জি। মঙ্গলবার কেয়ার্ন ইন্ডিয়ার পূর্বতন মূল সংস্থাটিকেও ১০,২৪৭ কোটি টাকা করের নোটিস পাঠিয়েছে কেন্দ্র। ২০০৬-’০৭ সালের ওই একই লেনদেনের জন্য। তাতে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে কেয়ার্ন এনার্জি।
শুধু তা-ই নয়, কেয়ার্ন এনার্জির পুরনো লেনদেনকে এ ভাবে করের জটিলতায় টেনে আনার জন্য বৃহস্পতিবারই রীতিমতো উষ্মা প্রকাশ করেছেন ব্রিটিশ বিদেশ সচিব ফিলিপ হ্যামন্ড। গতকাল অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে দেখা করার পরে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলে থাকেন বিনিয়োগ স্বাগত। কিন্তু ভারতকে লগ্নির আকর্ষণীয় গন্তব্য করে তুলতে শুধু শুক্নো প্রতিশ্রুতিতে চিঁড়ে ভিজবে না। সরকার যে সত্যিই লগ্নি ও শিল্পবান্ধব, তা কাজে প্রমাণ করতে হবে। আগে বন্ধ করতে হবে পুরনো লেনদেনের উপর কর বসানো। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলেও অর্থমন্ত্রী অবশ্য তাঁকে গতকালই বলেছেন যে, এ ক্ষেত্রে আইন আইনের পথেই চলবে।
হ্যামন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করার পরের দিনই যে ভাবে কেয়ার্ন ইন্ডিয়ার দরজায় করের নোটিস পৌঁছল, তাতে বিদেশি লগ্নিকারীদের কাছে কী বার্তা পৌঁছবে, তা নিয়ে শঙ্কিত শিল্পমহল। তাদের মতে, ভোডাফোন, শেল, আইবিএম এবং মাইক্রোসফটের পরে এ বার কেয়ার্নের সঙ্গেও কর নিয়ে সম্পর্ক তেতো হল কেন্দ্রের। তা-ও আবার এমন সময়ে, যখন ভারতকে লগ্নির আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরতে লন্ডনেই গিয়েছেন জেটলি।
তবে সেই দিক থেকে কিছুটা স্বস্তি জুগিয়েছেন ব্রিটিশ অর্থ সচিব প্রীতি পটেল। এ দিন লন্ডনে জেটলির সঙ্গে বৈঠকের পরে পটেল বলেন, ‘‘মনে হয় না যে, কেয়ার্নকে নোটিস পাঠানোর ঘটনা ব্রিটিশ লগ্নিকারীদের ভারতের প্রতি আস্থা টলিয়ে দেবে। সদ্য বাজেট পেশ করেছেন জেটলি। পুরোদমে চেষ্টা করছেন সেখানে রাখা প্রস্তাব বাস্তবে রূপায়িত করতে।’’ ফলে শুধু কেয়ার্ন-কে নোটিস পাঠানো ব্রিটিশ সংস্থাগুলির আস্থায় আঁচড় কাটবে না বলেই তাঁর দাবি।