বাড়িতে শৌচালয় ছিল না। সেই অভাবে মাঠে গিয়ে গত মাসে ধর্ষিত ও খুন হতে হয় উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁ জেলার কাটরা গ্রামের দুই কিশোরীকে। শুধু কাটরা নয়, এমন ঘটনার সাক্ষী দেশের অন্য এলাকাও। শৌচালয়ের অভাবে এখনও দেশের প্রায় ৬০% গ্রামীণ পরিবারের সদস্যদের খোলা মাঠই ভরসা। শুধু তাঁদের স্বাস্থ্যই নয়, সেখানকার মহিলাদের সুরক্ষাকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে এই সামাজিক পরিকাঠামোর অভাব। যা দূর করতে কেন্দ্র ও রাজ্য, উভয়েই কর্পোরেট দুনিয়ার সাহায্যপ্রার্থী।
গ্রামীণ এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ ও শৌচালয়ের মতো পরিকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে কর্পোরেট সংস্থার ভূমিকা নিয়ে সম্প্রতি ফিকি এক সভার আয়োজন করে। সেখানে এই দুই সামাজিক পরিকাঠামোর অভাবের ছবি স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরা হয়। সভার ফাঁকে কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের অন্যতম কর্তা সুজয় মজুমদার জানান, বাংলাদেশে যেখানে ৮০ শতাংশেরও বেশি এলাকায় শৌচালয় আছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশের গ্রামীণ এলাকায় মাত্র ৪০% বাড়িতে সেই সুবিধা রয়েছে। অন্য ভাবে বলতে গেলে প্রতি ১৮ কোটি বাড়ির মধ্যে ১০ কোটি বাড়ির সদস্যরাই পাকা শৌচালয়ের সুবিধা পান না।
তাঁর দেওয়া তথ্যেই স্পষ্ট, ভারত যতই বিশ্ব বাজারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হোক না-কেন, দেশের সামাজিক পরিকাঠামোয় এখনও অনেক যোজন পিছিয়ে। সুজয়বাবুর অবশ্য দাবি, কেন্দ্র ২০২২-এর মধ্যে ১০০% বাড়িতেই পাকা শৌচালয় নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এ জন্য প্রয়োজন ১.৫০ লক্ষ কোটি টাকা। তবে পঞ্চবার্ষিকী যোজনায় ২০১৭ পর্যন্ত কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে দেবে ৫৩ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা কোথা থেকে আসবে? সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সে জন্য কর্পোরেট দুনিয়ার মুখাপেক্ষী সরকার।
একই ভাবে বাড়িতে বা বাড়ির কাছে পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থার অভাবে অনেককেই দূরে যেতে হয়। সে ক্ষেত্রেও মহিলাদের নিরাপত্তার প্রশ্ন ওঠে। পাশাপাশি গ্রামবাসীদের জলবাহিত রোগ বৃদ্ধিরও শঙ্কা রয়েছে। কারণ পাইপের মাধ্যমে জল সরবরাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না-থাকলে ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ে। সে ক্ষেত্রে মাটিতে মিশে থাকা আর্সেনিকের মতো পদার্থের জন্য দূষিত জল ব্যবহারের সম্ভাবনা বেশি। গোটা দেশের মতোই এ রাজ্যেও পাইপের মাধ্যমে জল সরবরাহের ব্যবস্থা যে দূর্বল তা সুজয়বাবু এবং রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি ও পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্যেই স্পষ্ট।
সুজয়বাবুর হিসেবে, পশ্চিমবঙ্গে ৫৫-৬০% গ্রামীণ এলাকায় পাইপের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সেই জল ২০-২২ শতাংশের ঘরে পৌঁছয়। বাকিদের জল আনতে যেতে হয়। গোটা দেশের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান যথাক্রমে ৪৫% ও ১৮%। কেন্দ্র অবশ্য ২০২২-এর মধ্যে দেশের ৯০% গ্রামীণ এলাকায় পাইপের মাধ্যমে জল সরবরাহ ও ৮০% ঘরে তা পৌঁছনোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। এ জন্য প্রয়োজন প্রায় তিন লক্ষ কোটি টাকা। ২০১৭ পর্যন্ত পঞ্চবার্ষিকী যোজনায় কেন্দ্র ও রাজ্য দেবে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি।
রাজ্য অবশ্য ২০১৭-র মধ্যে ১০০% গ্রামীণ এলাকাতে শৌচালয় পরিকাঠামো তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে, জানিয়েছেন সুব্রতবাবু। একই সঙ্গে গ্রামীণ জনসংখ্যার অন্তত ৫০%-এর ঘরে বা ১০০ মিটারের মধ্যে পাইপের মাধ্যমে জল সরবরাহের ব্যবস্থা করবে রাজ্য। অর্থাৎ, তিন বছরেও রাজ্যের গ্রামীণ এলাকার বড় অংশ পাইপের মাধ্যমে জল সরবরাহ ব্যবস্থার আওতার বাইরে থাকবে। তবে সুব্রতবাবুর দাবি, রাজ্যের পরিকল্পনার আওতায় গ্রামে দৈনিক মাথাপিছু ৭০ লিটার পানীয় জলের স্থায়ী ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন তাঁরা। শুধু পরিকাঠামো নির্মাণ নয়, জল সরবরাহ ব্যবস্থা পরিচালনাতেও কর্পোরেটের সাহায্য জরুরি, মত সুজয়বাবুর। তাঁর বক্তব্য, পরিকাঠামো গড়লেই হয় না। তা পরিচালনার জন্য দক্ষতাও চাই, যার অভাব রয়েছে। তাই কর্পোরেট দুুনিয়ার সাহায্য চান তাঁরা। উল্লেখ্য, নতুন আইনে লভ্যাংশের নির্দিষ্ট অংশ সামাজিক দায় মেটাতে খরচ করতে হবে কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে।