তিন সংস্থার সঙ্গে মিশিয়ে ডিপিএল বাঁচানোর ইঙ্গিত

ঘোরতর আর্থিক সঙ্কটে প্রায় পঙ্গু রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থা ডিপিএল। ব্যাঙ্কগুলিও এখন ডিপিএল-কে ঋণ দিতে চাইছে না। এই পরিস্থিতিতে সংস্থার এক একটি বিভাগ অন্য তিনটি রাজ্য সরকারি সংস্থার সঙ্গে মিশিয়েই ডিপিএলকে বাঁচানোর ইঙ্গিত দিল রাজ্য। শীঘ্রই এ বিষয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:২৭
Share:

ঘোরতর আর্থিক সঙ্কটে প্রায় পঙ্গু রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থা ডিপিএল। ব্যাঙ্কগুলিও এখন ডিপিএল-কে ঋণ দিতে চাইছে না। এই পরিস্থিতিতে সংস্থার এক একটি বিভাগ অন্য তিনটি রাজ্য সরকারি সংস্থার সঙ্গে মিশিয়েই ডিপিএলকে বাঁচানোর ইঙ্গিত দিল রাজ্য। শীঘ্রই এ বিষয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ডিপিএলের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হবে রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের হাতে। পাশাপাশি, সংস্থার পরিষেবা এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিকাঠামো তুলে দেওয়া হতে পারে যথাক্রমে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা এবং বিদ্যুৎ সংবহন সংস্থার হাতে।

প্রসঙ্গত, গত ২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষে ডিপিএলের ২০০ কোটি টাকা লোকসান হয়। চলতি ২০১৪-’১৫ সালে ইতিমধ্যেই লোকসান ১০০ কোটি টাকা ছুঁয়েছে।

Advertisement

বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের এক কর্তা এ প্রসঙ্গে জানান, ডিপিএলের উৎপাদন ব্যবস্থা হাতে নেওয়া কতটা লাভজনক, তা খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই একটি কমিটি গড়া হয়েছে। কমিটি দুর্গাপুরে ডিপিএল কারখানায় গিয়ে সমীক্ষা শুরু করবে। ২৬ সেপ্টেম্বর কমিটি রিপোর্ট দিলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ডিপিএলের প্রথম দু’টি ইউনিট (৩০ মেগাওয়াট করে) বহু বছর আগে থেকেই বন্ধ। গত বছর ৭৭ মেগাওয়াটের আরও ৩টি ইউনিট বন্ধ করা হয়। বছরের শেষ দিকে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে। চালু থাকা ষষ্ঠ ও সপ্তম ইউনিট দু’টির উৎপাদন অনিয়মিত হয়ে পড়ে। বেশ কিছুদিন টানা উৎপাদনশূন্য ছিল সংস্থাটি। পরিস্থিতি এমন হয় যে, কর্মীরা নির্দিষ্ট সময়ে বেতন পাননি।

কারখানা ছাড়াও দুর্গাপুর সিটি সেন্টার, সেপকো, বিধাননগর, নডিহা, সগড়ভাঙা, ডিপিএল কলোনি, এমএ এমসি কলোনি, এইচএফসিএল কলোনি এলাকায় গৃহস্থালির বিদ্যুৎ জোগায় ডিপিএল। মেরামতির কারণে ষষ্ঠ ইউনিটটি বন্ধ। তবে সম্প্রতি চালু হয়েছে সপ্তম ইউনিট। দৈনিক উৎপাদন গড়ে ২০০-২১০ মেগাওয়াট। দিনে চাহিদা মিটে যাচ্ছে। কিন্তু রাতে ২৫০ মেগাওয়াটের চাহিদা মেটাতে বাকি বিদ্যুৎ গ্রিড থেকে কিনছে ডিপিএল। ৯ জুলাই বর্ধমান থেকে ২৫০ মেগাওয়াটের অষ্টম ইউনিটের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এখনও সেটিতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়নি।

বাম আমলে তৎকালীন বিদ্যুৎমন্ত্রী মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্থার আধুনিকীকরণ হয়। ২০০৭-’০৮ অর্থবর্ষে ডিপিএল লাভ করে প্রায় ৮০ কোটি টাকা। অথচ বর্তমানে সেই সংস্থার ঘাড়ে কয়েকশো কোটি টাকা লোকসানের খাঁড়া। বর্তমান বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত গত ফেব্রুয়ারিতে জানান, ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সপ্তম ইউনিটের মেরামতি হবে। পাশাপাশি, এসার অয়েলের কাছে কোল-বেড মিথেন নিয়ে ডিপিএলে ৩০০ মেগাওয়াটের প্রাকৃতিক গ্যাস-চালিত নতুন ইউনিট গড়া হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

কিন্তু তার আগেই রাজ্য ডিপিএলকে অন্য সংস্থার সঙ্গে মেশাতে উদ্যোগী হওয়ায় ক্ষুব্ধ আইএনটিটিইউসি-র ডিপিএল ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর কার্যকরী সভাপতি অমর মণ্ডল। তিনি বলেন, “দক্ষ পরিচালন ব্যবস্থা না-থাকাতেই সংস্থার করুণ দশা।” আইএনটিইউসি-র ডিপিএল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন-এর সাধারণ সম্পাদক উমাপদ দাস বলেন, “কর্মী সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা না-করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন