দিল্লি ভোটের ফল নিয়ে দোলাচলে সূচক পড়ল ৪৯০ পয়েন্ট

মাত্র আট দিনেই সেনসেক্সের পতন ১৪৫৫ পয়েন্ট। এর মধ্যে সোমবার সূচক পড়েছে ৪৯০ পয়েন্ট। বাজার বন্ধের সময়ে তা থিতু হয় ২৮,২২৭.৩৯ অঙ্কে। এ দিনের পতনের অব্যবহিত কারণ হিসাবে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের বুথ ফেরত সমীক্ষায় বিজেপির পরাজয়ের ইঙ্গিতকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আজই প্রকাশিত হচ্ছে ভোটের ফলাফল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২৫
Share:

মাত্র আট দিনেই সেনসেক্সের পতন ১৪৫৫ পয়েন্ট। এর মধ্যে সোমবার সূচক পড়েছে ৪৯০ পয়েন্ট। বাজার বন্ধের সময়ে তা থিতু হয় ২৮,২২৭.৩৯ অঙ্কে। এ দিনের পতনের অব্যবহিত কারণ হিসাবে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের বুথ ফেরত সমীক্ষায় বিজেপির পরাজয়ের ইঙ্গিতকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আজই প্রকাশিত হচ্ছে ভোটের ফলাফল।

Advertisement

এ দিন ডলারের সাপেক্ষে টাকার দামও ৪৮ পয়সা পড়ে যায়। যার ফলে বিদেশি মুদ্রার বাজার বন্ধের সময়ে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬২.১৭ টাকা। বাজার সূত্রের খবর, বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি টাকায় শেয়ার বিক্রি করে তা ডলারে পরিণত করতে থাকার কারণেই বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়। বাড়ে মার্কিন মুদ্রার দামও।

প্রকৃতপক্ষে আট দিন আগে যে ছবিটা ছিল, সে দিকে একবার তাকালে দেখা যাবে, সেনসেক্স তখন ৩০ হাজার ছুঁই ছুঁই। একই তালে বাড়ছিল নিফ্টিও। সেই সময়েই ভাঁজ পড়েছিল বিশেষজ্ঞদের কপালে। কারণ, তখন তাঁরা বারে বারেই বলছিলেন, সূচকের এই উত্থান ঘটছে দেশের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন নিয়ে লগ্নিকারীদের আশায় ভর করে। যার সঙ্গে বাজারের মৌলিক উপাদানগুলির তেমন সামঞ্জস্য ছিল না। আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলের দাম পড়ার হাত ধরে আমদানি খাতে বিদেশি মুদ্রার খরচ কমায় বাণিজ্য ঘাটতি কমা, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এসএলআর কমানো (যা সুদের হার কমানোর পথ তৈরি করবে) এ সবের জেরে সুচক যে- গতিতে বাড়তে শুরু করে, তাতেই প্রমাদ গুনেছিলেন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। তাঁরা তখনই বাজারে বড় মাপের সংশোধন আসার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। প্রবীণ বাজার বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে বলেন, “তেজী এবং মন্দা ভাব সব সময়েই আগে-পিছে চলে। তবে বাজার স্বাভাবিকের থেকে বেশি গতিতে তেজী হয়ে গিয়েছিল। তাই এই মন্দা খুবই স্বাভাবিক।” বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাসই গত আট দিন ধরে বাস্তব আকার নিয়েছে।

Advertisement

কেন্দ্রে বিজেপি স্থায়ী সরকার গড়তে সমর্থ হয়েছে, এই বিশ্বাস লগ্নিকারীদের মনে গেঁথে গিয়েছে। এর ফলে আশার সঞ্চার হয়েছে যে, বিজেপি সরকার এ বার আর্থিক সংস্কারেরর ক্ষেত্রে বেশ কিছু পদক্ষেপ করবে। তার ইঙ্গিত অবশ্য ইতিমধ্যেই দিয়েছে তারা। কিন্তু রাজ্যসভায় তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। তাই লোকসাভায় নিজেদের জোরে বিল পাশ করিয়ে নিলেও রাজ্যসভায় গিয়ে হোঁচট খেতে হচ্ছে। এ বার রাজ্যগুলিতে বিজেপির পরাজয় হলে রাজ্যসভায় তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা বিশ বাঁও জলে চলে যাবে। সেই কারণেই দিল্লিতে বিজেপির পরাজয়ের ইঙ্গিতে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে বাজারে। পাশাপাশি, সম্প্রতি বিভিন্ন ব্যাঙ্কের যে-আর্থিক ফলাফল ঘোষিত হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, অনেক ব্যাঙ্কেরই অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা বাড়ায় টান পড়েছে তাদের নিট মুনাফায়। এটাও শেয়ার বাজারকে শঙ্কিত করে তুলেছে বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই।

এই সব কারণে বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলিও টানা শেয়ার বিক্রি করে চলেছে। সূচকের পতনে যা বিশেষ ভাবে ইন্ধন জোগাচ্ছে বলে বাজার সূত্রের খবর। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ওই সব সংস্থা গত শুক্রবারও ভারতের বাজারে ৯৬.৪৫ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।

তবে বাজার শীঘ্রই ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের এক বড় অংশ। অ্যাসোসিয়েশন অব ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ মেম্বার্স অব ইন্ডিয়া-র প্রাক্তন সভাপতি এবং সুমেধা ফিসকালের ডিরেক্টর বিজয় মুর্মুরিয়া মনে করেন, “বাজার আর খুব বেশি পড়বে বলে মনে হয় না। বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলিও খুব শীঘ্রই ফিরে আসবে এখানে। কারণ, এখনও সারা বিশ্বে ভারতের শেয়ার বাজারই বিনিয়োগের জন্য সব থেকে আকর্ষণীয় জায়গা।” একই সুরে অজিতবাবুও জানাচ্ছেন, “বাজার মাঝারি এবং দীর্ঘ মেয়াদে যে-বাড়বে, তাতে আমার কোনও সন্দেহ নেই।”

তবে বাজারের এই সংশোধনের প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন বি এন কে ক্যাপিটাল মার্কেটসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অজিত খান্ডেলওয়াল। তিনি জানান, “বাজার অনেকটাই কৃত্রিম ভাবে বেড়েছিল। তখনই বলেছিলাম ৩০ হাজার ছোঁয়ার আগে সেনসেক্সে বড় মাপের সংশোধন আসবে। এই সংশোধন শেয়ার বাজারকে আরও মজবুত জমির উপর দাঁড়াতে সাহায্য করবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন