বৈষম্য বহাল থাকলে বন্ধ লেনদেন

নেটে কম দামে পণ্য বিক্রির বিরোধিতায় এককাট্টা দোকানিরা

বই বিক্রেতা ও প্রকাশকেরা আগেই তোপ দেগেছিলেন। এ বার নামী-দামি বৈদ্যুতিন পণ্য নির্মাতাদের বিরুদ্ধে পথে নামল সংশ্লিষ্ট পণ্য বিক্রেতারাও। তাঁদের দাবি, ই-কমার্স সংস্থাগুলি যে-দামে পণ্য বেচতে পারছে, তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো দামে বিক্রির সুবিধা তাঁদের মতো সাধারণ দোকানগুলিকেও দিতে হবে। না -হলে ওই সব ব্র্যান্ড বয়কট করবেন তাঁরা।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫৯
Share:

বই বিক্রেতা ও প্রকাশকেরা আগেই তোপ দেগেছিলেন। এ বার নামী-দামি বৈদ্যুতিন পণ্য নির্মাতাদের বিরুদ্ধে পথে নামল সংশ্লিষ্ট পণ্য বিক্রেতারাও। তাঁদের দাবি, ই-কমার্স সংস্থাগুলি যে-দামে পণ্য বেচতে পারছে, তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো দামে বিক্রির সুবিধা তাঁদের মতো সাধারণ দোকানগুলিকেও দিতে হবে। না -হলে ওই সব ব্র্যান্ড বয়কট করবেন তাঁরা।

Advertisement

বেশ কিছুদিন ধরেই নেট বাজারের কাছে জমি হারাচ্ছে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইলের দোকান। বিক্রেতাদের বিভিন্ন সংগঠনের অভিযোগ, ক্রেতা কমছে মূলত দামের ফারাকের কারণেই, যা ২ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর এই অসম প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধেই সোচ্চার ছোট-বড় দোকানিরা। একজোট হয়ে হিউলেট প্যাকার্ড, ডেল, লেনোভো, আসুস, ক্যানন, এসারের মতো বহুজাতিককে তারা সাফ জানিয়েছে, দামের বৈষম্য দূর না-করলে দু’পক্ষের লেনদেন বন্ধ থাকবে। ফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া আইটি অ্যাসোসিয়েশন্স গত ২১ নভেম্বর বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের দাবি, ই-কমার্স নিয়ে আইন না-থাকায় ব্যবসা হারানোর চিন্তা বাড়ছে দোকানিদের।

দাবি না-মানলে এ বার লেনদেন বন্ধ করে দেওয়ার সময়সীমা ঠিক করেছেন তাঁরা। সেই সূত্রেই সোমবার কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা ও উত্তর-পূর্ব ভারতে সব দোকান বন্ধ রাখা হয়। ৭ ডিসেম্বর ফের বৈঠকে বসবে ফেডারেশন। তখনও নির্মাতা ও বড় ডিস্ট্রিবিউটররা দামের সমস্যা না-মেটালে পশ্চিমবঙ্গ-সহ অন্যান্য রাজ্যে দোকান বন্ধ রাখা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।

Advertisement

ভারতে দোকান থেকে কম্পিউটার ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাদি বিক্রির পরিমাণ বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকা। এ রাজ্যে দোকানের সংখ্যা প্রায় ৮০০। বিক্রেতাদের সংগঠনের তরফে বি হরি জানান, পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক ব্যবসার পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা। নেট বাজার যেমন ইচ্ছে তাই দাম হেঁকে ক্রেতা টানলে সেই ব্যবসা তলানিতে ঠেকবে বলে তাঁর ক্ষোভ। ফেডারেশনের অভিযোগ, ফ্লিপকার্ট, অ্যামাজন, স্ন্যাপডিলের মতো সংস্থা ব্যবসায়িক ক্ষতি স্বীকার করেই কম দামে জিনিস বেচছে। তাদের হিসেব, এক টাকা আয় করতে তারা দু’টাকা লোকসান করছে। কিন্তু এই খামতি পূরণ করছে দেশি-বিদেশি তহবিল।

এখন লগ্নিকারীদের অন্যতম প্রিয় গন্তব্য ভারতের ই-কমার্স। তার কারণ এখানে এই ব্যবসার বৃদ্ধির হার। গুগ্ল ও ফরেস্টারের সাম্প্রতিক যৌথ সমীক্ষা বলছে, ২০১৬ সালে ই-কমার্স ব্যবসার অঙ্ক ১৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছে যাবে। এখন তা ৩০০ কোটি। আর ব্যবসার এই রমরমার কারণ অবশ্যই ক্রেতার সংখ্যা ও ক্রমবর্ধমান মহিলা ক্রেতা। ২০১৪-য় নেট বাজারে ক্রেতার সংখ্যা ৩.৫ কোটি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে তা ১০ কোটি।

ই-কমার্সে বিক্রীত পণ্যের ৭৫% কম্পিউটার, মোবাইল-সহ বৈদ্যুতিন পণ্যগুলির দখলে। তবে বৃদ্ধির হার তুলনায় কম, মাত্র ৩৫%। জামাকাপড় বিক্রির হার গত বছরের তুলনায় ৬৪% বেড়েছে। কিন্তু বৈদ্যুতিন পণ্যের বিক্রির পরিমাণ বিক্রেতাদের দুশ্চিন্তায় ফেলছে।

প্রায় ৫০% ব্যবসা দিচ্ছে ছোট-মাঝারি শহর। এমনকী এর আওতায় ঢুকে পড়ছে বর্ধিষ্ণু গ্রামগুলিও। প্রায় ৯% অনলাইন রিটেল ব্যবসা জোগাচ্ছে গ্রামাঞ্চল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন