প্রায় দু’মাস বন্ধ থাকা হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের কারখানা চালু হওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে রাজ্যের প্লাস্টিক শিল্প। পেট্রোকেম বন্ধের জেরে কাঁচামালের অভাবে ধুঁকতে থাকা এই শিল্পের আশা, যে ভাবে হোক চলতি মাসের মধ্যেই চালু হতে পারে কারখানা। নইলে পুজোর মুখে শ্রমিকদের বেতন দেওয়াই সমস্যা হবে বলে আশঙ্কা তাদের।
মূলত পেট্রোকেমে তৈরি পণ্যের ভরসায় গড়ে ওঠা অনুসারী শিল্প আড়ে-বহরে নেহাত কম নয়। পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্বাঞ্চলে ৫,০০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগে তৈরি হয়েছে প্লাস্টিক শিল্প। রয়েছে ২,৫০০ কারখানা। যার সিংহভাগই এ রাজ্যে। এই সমস্ত কারখানায় কাজ করেন ৫০ হাজারেরও বেশি কর্মী।
পেট্রোকেমের কারখানায় ন্যাপথা চূর্ণের সঙ্গে কিছু রাসায়নিক মিশিয়ে তৈরি হয় ‘প্লাস্টিক গ্র্যানিউলস’ বা প্লাস্টিকের দানা। পলিপ্রপিলিন, এইচডিপিই, পিই এবং এলডি নামে বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকের দানাও তৈরি হয় এখানে। এর মধ্যে আবার এইচডিপিই উৎপাদনের ক্ষেত্রে পেট্রোকেম প্রথম সারির সংস্থা। বোতল, খেলনা, বালতি, ক্যারি ব্যাগের মতো বিভিন্ন জিনিস তৈরির জন্য এইচডিপিই ব্যবহার হয়। ফলে এখন সেই কাঁচামালে ঘাটতি টের পাওয়া যাচ্ছে ওই সমস্ত নিত্য ব্যবহার্য পণ্য তৈরি করতে গিয়ে। অথচ শুধু এ রাজ্যেই এ ধরনের জিনিসের বাজার অন্তত ৫০০ কোটি টাকার। পূর্বাঞ্চলে ৮০০ কোটি। কাঁচামালের অভাবে তা ক্রমশ হাতছাড়া হচ্ছে বলে প্লাস্টিক শিল্পের আশঙ্কা।
রাজ্যের প্লাস্টিক শিল্পের দাবি, ৫০% উৎপাদন করেও পূর্বাঞ্চলে হলদিয়া পেট্রোকেমের ৪০% বাজার রয়েছে। সেই সূত্রেই হলদিয়া পেট্রোকেম থেকে ৮০% কাঁচামাল পেতেন তাঁরা। প্রতি মাসে ১৭ হাজার টন কাঁচামাল সরবরাহ করত পেট্রোকেম। পরে উৎপাদন কমলেও সেই জোগানের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার টন। কিন্তু এখন তা-ও পুরোটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চূড়ান্ত দুর্ভোগ শুরু হয়েছে। রিলায়্যান্স, ইন্ডিয়ান অয়েল ও গেইলের মতো সংস্থার কাছ থেকে পর্যাপ্ত কাঁচামাল পাওয়া কঠিন। কারণ পশ্চিম ও উত্তর ভারতে কাঁচামাল জোগান দেওয়ার পরে এ রাজ্যের জন্য তাদের হাতে বিশেষ কিছু থাকে না। ফলে সব মিলিয়ে এখন মাসে প্রায় ১৫ হাজার টন কাঁচামালের ঘাটতি হচ্ছে।
রাজ্যের প্লাস্টিক শিল্পের এই দুর্দশার মধ্যেই ইন্ডিয়ান প্লাস্টিক ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট প্রদীপ নায়ার অবশ্য জানান, আগামী বছরে কলকাতায় এই শিল্পের জাতীয় স্তরের প্রদর্শনী ‘ইন্ডপ্লাস্ট’ অনুষ্ঠিত হবে।