নিয়ম লঙ্ঘনের জেরে সোমবার দেশি-বিদেশি ১৪টি গাড়ি সংস্থাকে মোট ২,৫৪৫ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল প্রতিযোগিতা কমিশন। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে উচ্চ পর্যায়ে আবেদন করা হবে বলে মঙ্গলবার জানাল মহীন্দ্রা অ্যান্ড মহীন্দ্রা এবং টাটা মোটরস।
তিন বছর ধরে তদন্তের পর সোমবারের নির্দেশে কমিশন জানিয়েছিল, বিক্রি পরবর্তী পরিষেবা এবং যন্ত্রাংশ ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার নিয়ম ভেঙেছে সংস্থাগুলি। কমিশনের অভিযোগ, গাড়ি সংস্থাগুলি নিজেদের ডিলার এবং আসল যন্ত্রাংশ নির্মাতাদের উপর এমন ভাবে চুক্তি চাপায়, যে খোলা বাজারে সঠিক দামে উপযুক্ত যন্ত্রাংশ মেলাই মুশকিল হয়ে পড়ে। ফলে এক অর্থে ওই সমস্ত চুক্তি মারফত বাজারে আসল যন্ত্রাংশ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করত সংস্থাগুলি। এতে এক দিকে যেমন দেশের গাড়ি যন্ত্রাংশ ব্যবসার সম্প্রসারণ হতে পারেনি, তেমনই অন্য সংস্থা থেকে আসল যন্ত্রাংশ কেনার সুযোগও সীমিত হয়ে পড়েছে। ফলে তা বেশি দাম দিয়ে কিনতে বাধ্য হয়েছেন ক্রেতারা। এই অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার কারণেই প্রতিটি সংস্থার তিন বছরের গড় ব্যবসার ২% জরিমানা করা হয়েছে বলে জানায় কমিশন। ৬০ দিনের মধ্যে যা জমা দিতে হবে সংস্থাগুলিকে।
সংস্থাগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি জরিমানা করা হয়েছে টাটা মোটরসকে (১,৩৪৬.৪৬ কোটি টাকা)। এর পর রয়েছে মারুতি-সুজুকি (৪৭১.১৪ কোটি), মহীন্দ্রা (২৯২.২৫ কোটি)। আর বাদবাকি সংস্থাগুলি হল টয়োটা কির্লোস্কর (৯৩.৩৮ কোটি), জেনারেল মোটরস (৮৪.৫৮ কোটি), হোন্ডা সিয়েল (৭৮.৪৭ কোটি), স্কোডা অটো ইন্ডিয়া (৪৬.৩৯ কোটি), ফোর্ড ইন্ডিয়া (৩৯.৭৮ কোটি), ফিয়াট ইন্ডিয়া (২৯.৯৮ কোটি), মার্সিডিজ বেঞ্জ (২৩.০৮ কোটি), বিএমডব্লিউ ইন্ডিয়া (২০.৪১ কোটি), হিন্দুস্তান মোটরস (১৩.৮৫ কোটি), ফোক্সভাগেন ইন্ডিয়া (৩.২৫ কোটি) এবং নিসান মোটরস (১.৬৩ কোটি)।
কমিশনের তদন্তে প্রকাশ, কিছু সংস্থা বিদেশে ক্রেতাদের জন্য বিশেষ পরিষেবা চালু করলেও, দেশে সে রকম ব্যবস্থা নেয়নি। এই সব নিয়ে ১৮০ দিনের মধ্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে কমিশন।
কমিশন জানিয়েছে, আসল যন্ত্রাংশ নির্মাতাদের নিজেদের ব্র্যান্ড নামেই পণ্য বিক্রি করতে দিতে হবে। সে জন্য রয়্যালটি পাবে গাড়ি সংস্থা। তার চুক্তিও করতে হবে প্রতিযোগিতা আইন মেনে।
এ দিন অবশ্য জরিমানার বিরুদ্ধে উচ্চ পর্যায়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে মহীন্দ্রা। আবেদনের কথা জানিয়েছে টাটা মোটরসও। অন্য সংস্থাগুলি অবশ্য এ নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছয়নি। হোন্ডা কারস-এর মুখপাত্র জানান, নির্দেশ পেলে তবেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আবার যন্ত্রাংশ সরবরাহ বাড়াতে ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি ফোর্ডের। উল্লেখ্য, ২০০২ সালের প্রতিযোগিতা আইন অনুযায়ী, প্রতিযোগিতা কমিশনের নির্দেশের বিরুদ্ধে ৬০ দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে (কমপ্যাট) যেতে পারে কোনও সংস্থা।