স্মরণ। শনিবার কলকাতার বাড়িতে।—নিজস্ব চিত্র।
চলে গেলেন টাটা স্টিলের প্রাক্তন কর্ণধার রুসি মোদী। শুক্রবার রাত সাড়ে এগারোটায় আলিপুরের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ফেলেন অর্ধ শতকেরও বেশি সময় টাটা গোষ্ঠীর ইস্পাত সংস্থার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষটি। বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।
অক্সফোর্ডের ক্রাইস্ট চার্চ কলেজ থেকে পড়ার পাঠ শেষ করে ১৯৩৯ সালে টাটা গোষ্ঠীর ইস্পাত সংস্থায় (তখন নাম ছিল টিস্কো) যোগদান। এর পর সেখানে দীর্ঘ ৫৩ বছরের কেরিয়ারে ধাপে ধাপে শীর্ষে উঠে এসেছেন তিনি। ১৯৮৪ সালে হয়েছেন টাটা স্টিলের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর। ১৯৯৩ সালে যখন সংস্থা ছাড়ছেন, তখন আক্ষরিক অর্থেই টাটা স্টিল মহীরুহ। সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা প্রযুক্তি ব্যবহারে ঝোঁক, কর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ আদায়ের ক্ষমতার মতো নানা গুণ তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছিল বলে মনে করে শিল্পমহল।
প্রথম সারির কর্পোরেট কর্তা হওয়ার চাপ সামলেও জীবনকে সব সময় প্রাণভরে বাঁচতে চেয়েছেন তিনি। তা সে পিয়ানোর সামনে হোক বা তাসের টেবিলে। যে কারণে এ দিন পাঠানো বিবৃতিতে টাটা স্টিল তাঁকে স্মরণও করেছে এমন এক জন মানুষ হিসেবে, যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত চুটিয়ে উপভোগের জ্বলজ্যান্ত নিদর্শন রেখে গেলেন।
১৯৮৯ সালে পদ্মভূষণের সম্মান যেমন এসেছে, তেমনই কর্মজীবনের শেষ দিকে তিক্ত হয়েছিল টাটা গোষ্ঠীর এমেরিটাস চেয়ারম্যান রতন টাটার সঙ্গে সম্পর্ক। একটা সময় অনেকের ধারণা ছিল, জে আর ডি টাটার পর টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধার হবেন মোদীই। বাস্তবে তা ঘটেনি। এ দিন বিবৃতিতে রতন টাটা বলেছেন, টাটা স্টিলে রুসি মোদী ছিলেন এক প্রতিষ্ঠান। চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রির কথায়, টাটা স্টিলকে দেশের প্রথম সারির সংস্থা করার পিছনে অবদান রয়েছে মোদীর।
শনিবার আলিপুরে তাঁর বাড়ি চুপচাপ। দেওয়ালে নানা ছবি আর শিল্প সামগ্রী। যা সংগ্রহের শখ ছিল তাঁর। ভাইপো জিমি জানালেন, রবিবার দেহ মর্গ থেকে বাড়ি আনা হবে। সেখানে সকাল ন’টা থেকে এগারোটা পর্যন্ত শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পর অন্ত্যেষ্টি হবে কেওড়াতলা শ্মশানে। এমনিতে এই শহরে পার্সিদের সৎকার হয় বেলেঘাটার ‘টাওয়ার অব সাইলেন্স’-এ। কিন্তু জিমি জানাচ্ছেন, “জেঠুর ইচ্ছে ছিল, শেষকৃত্য শ্মশানে হোক।” সোমবার অস্থিভস্ম নিয়ে যাওয়া হবে মোদীর দীর্ঘ দিনের কর্মস্থল জামশেদপুরে। সেখানে মায়ের পাশেই সমাহিত করা হবে তাঁকে।