দুলছে বাজার

পতনে কেনা, উত্থানে বেচাই খোঁজ দেবে ভাল মুনাফার

স্থির আয় প্রকল্প যদি নিস্তরঙ্গ পুকুর হয়, তবে শেয়ার বাজার উত্তাল সমুদ্র। এখানে অগুনতি ঢেউয়ের পাশাপাশি চলে নিয়মিত জোয়ার-ভাটার খেলা। গত দশ দিনের বাজারের দিকে তাকালে ব্যাপারটি বেশ স্পষ্ট হবে যে-কোনও মানুষের কাছে। একই সপ্তাহে ঘটেছে বড় আকারের পতন এবং ভাল মাপের উত্থান। এই অনিশ্চয়তা আছে বলেই শেয়ার বাজারের এত আকর্ষণ বিশ্ব জুড়ে।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫৯
Share:

স্থির আয় প্রকল্প যদি নিস্তরঙ্গ পুকুর হয়, তবে শেয়ার বাজার উত্তাল সমুদ্র। এখানে অগুনতি ঢেউয়ের পাশাপাশি চলে নিয়মিত জোয়ার-ভাটার খেলা। গত দশ দিনের বাজারের দিকে তাকালে ব্যাপারটি বেশ স্পষ্ট হবে যে-কোনও মানুষের কাছে। একই সপ্তাহে ঘটেছে বড় আকারের পতন এবং ভাল মাপের উত্থান। এই অনিশ্চয়তা আছে বলেই শেয়ার বাজারের এত আকর্ষণ বিশ্ব জুড়ে।

Advertisement

গত বৃহস্পতিবারের আগের পাঁচ দিনে আতঙ্কগ্রস্ত বাজারে সেনসেক্স নামে ১,১২১ অঙ্ক। ২৮ হাজারের পর ভেঙে যায় ২৭ হাজারের বাধাও। এই জায়গা থেকেই আবার শুরু হয় ওঠা। বৃহস্পতিবার এক ধাক্কায় সেনসেক্স ওঠে ৪১৬ পয়েন্ট। পরের দিন আরও ২৪৫ অঙ্ক উঠে সপ্তাহ শেষে সেনসেক্স থিতু হয় ২৭,৩৭২ অঙ্কে। খানিকটা হলেও স্বস্তি ফেরে লগ্নিকারীদের মনে। বিশ্ব বাজারের কোনও কোনও ঘটনায় বাজার মাঝেমধ্যে ঝুঁকে পড়লেও দেশের কিছু আশাপ্রদ ঘটনা সামলে দিচ্ছে সূচককে। এই ধরনের বাজারে ‘পতনে ক্রয় এবং উত্থানে বিক্রয়’ নীতি মেনে চললে ভাল লাভের সম্ভাবনা।

পণ্য-পরিষেবা কর চালুর পথ সুগম করতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা গত বুধবার এক সংবিধান সংশোধনী বিল অনুমোদন করে। বিলটি শুক্রবার সংসদের চলতি অধিবেশনেই পেশ করা হয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক চললে ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে চালু হয়ে যেতে পারে বহু প্রতীক্ষিত পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি। আর্থিক সংস্কারের পথে এগিয়ে যাওয়ার এই খবরে কেটে যায় বিষাদের সুর। বাজারে আবার ফিরতে দেখা যায় লগ্নিকারীদের। সপ্তাহের শেষ দু’দিনে সেনসেক্স ওঠে ৭০১ অঙ্ক। হারানো জমির অনেকটাই পুনরুদ্ধার হয় মাত্র দু’দিনে।

Advertisement

কিছু কিছু ক্ষেত্রে উত্‌পাদনের ব্যাপারে পিছিয়ে পড়লেও সরকারের আশা, চলতি আর্থিক বছরে ভারতের অর্থনীতি এগোবে ৫.৫ শতাংশ হারে। সরকারের বিশ্বাস, মাঝারি মেয়াদে ভারতের জাতীয় উত্‌পাদন বৃদ্ধির হার ৭ থেকে ৮ শতাংশে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। বাজারও দুলছে এই নিয়ে আশা-নিরাশার উপর নির্ভর করে।

কেন্দ্রের ধারণা, মার্চ মাসের আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সম্ভবত সুদ কমাবে না। বাজারের কাছে সুখের কথা, পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার সাড়ে পাঁচ বছর পরে নেমেছে শূন্যতে। অক্টোবরে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ১.৭৭%। এর আগে প্রকাশিত হয়েছিল খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার ৪.৩৮ শতাংশে নেমে আসার খবর।

গত সপ্তাহে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম এক সময়ে নেমে আসে ৬০ ডলারেরও নীচে। ২০০৯-এর পরে এটিই অশোধিত তেলের সব থেকে কম দাম। মনে রাখতে হবে, এই ২০১৪ সালেই এক সময়ে ব্রিটেনে ব্রেন্ট ক্রুড-এর দাম উঠেছিল ব্যারেল পিছু সর্বোচ্চ ১১৫ ডলারে। তেলের দাম এতটা কমলেও ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি বেড়েই চলেছে মূলত সোনা আমদানি বেড়ে ওঠার কারণে। আমদানির কারণে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি এবং সপ্তাহের প্রথম তিন দিন বিদেশি লগ্নিকারীরা মোটা টাকার শেয়ার বিক্রি করায় ডলারের তুলনায় টাকার দাম এক সময়ে নেমে আসে ৬৩.৫৩ টাকায়, যা গত ১৩ মাসের মধ্যে সব থেকে কম। অর্থনীতির পক্ষে ডলারের এতটা মূল্যবৃদ্ধি অবশ্যই শুভ নয়। শেয়ার বাজার ঘুরে দাঁড়ানোয় শুক্রবার অবশ্য ডলারের দাম কিছুটা কমে থিতু হয় ৬৩.৩০ টাকায়। সব মিলিয়ে গত সপ্তাহে ভারতের বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার

কিছুটা স্ফীত হয়েছে। ২১৭ কোটি ডলার বেড়ে তা পৌঁছেছে ৩১,৬৮৩ কোটি ডলারে।

বিখ্যাত বস্ত্রনির্মাতা মন্টে কার্লো গত সপ্তাহে নথিবদ্ধ হয়েছে শেয়ার বাজারে। এদের সম্প্রতি আনা পাবলিক ইস্যুতে আবেদন ৭.৮৩ গুণ জমা পড়লেও প্রথম বাজার দর হতাশ করেছে লগ্নিকারীদের। ৬৪৫ টাকায় ইস্যু করা শেয়ার নথিবদ্ধ হয় ৫৮৫ টাকায় এবং পরে তা আরও কমে দাঁড়ায় ৫৬৬ টাকায়। নতুন ইস্যুর বাজারের কাছে এটি ভাল খবর নয়।

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এখনও সুদ কমানোর পথে না-হাঁটলেও স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ বেশ কিছু ব্যাঙ্ক তাদের কিছু মেয়াদি আমানতে সম্প্রতি সুদ কমিয়েছে। জমার উপর সুদ আকর্ষণীয় থাকায় এক দিকে যেমন আমানত বেড়ে উঠছিল, অন্য দিকে শিল্পে তেমন গতি না-আসায় ঋণের চাহিদা উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ছিল না। ফলে ব্যাঙ্কের ঘরে জমে উঠছিল বিশাল তহবিল। এই অলস তহবিল কমাতেই জমার উপর সুদ কমাচ্ছে ব্যাঙ্কগুলি। এতে অবশ্য অসুবিধায় পড়ছেন সুদ-নির্ভর অসংখ্য মানুষ।

যাঁরা বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি করছেন, তাঁদের জন্য ভাল খবর হল, এই অর্থবর্ষেও (২০১৪-১৫) প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমে ওঠা তহবিলের উপর তাঁরা সুদ পাবেন ৮.৭৫ শতাংশ হারে। মনে রাখতে হবে, এই সুদ পুরোপুরি করমুক্ত। ব্যাঙ্ক আমানতে বর্তমান সুদের হার ৮.৫০ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশ হলেও তার উপর রয়েছে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত আয়কর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন