বেতন বন্ধ, বিক্ষোভ ব্লাড ব্যাগ কারখানার কর্মীদের

বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নেই ইলেকট্রো মেডিক্যালের

সংস্থা চাঙ্গা করার লক্ষ্যেই স্বাস্থ্য দফতরের হাতে দেওয়া হয় রাজ্য সরকারি সংস্থা ইলেকট্রো মেডিক্যাল অ্যান্ড অ্যালায়েড ইন্ডাস্ট্রিজ। কিন্তু দফতর বদলে আদৌ ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি। সরকারি সূত্রের মতে যার কারণ, ধুঁকতে থাকা সংস্থাটির কোনও ভাবেই আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। ব্যবসায়িক ভাবে লাভজনক করে তোলার মতো পরিকাঠামো ও বিপণন ক্ষমতা, কোনওটাই সংস্থার নেই।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৪ ০১:৩৮
Share:

কারখানা খোলার দাবিতে ধর্না শহরে সংস্থার মূল দফতরের সামনে। বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন শালিমার পেন্টস এবং হিন্দমোটরসের কর্মীরাও। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

সংস্থা চাঙ্গা করার লক্ষ্যেই স্বাস্থ্য দফতরের হাতে দেওয়া হয় রাজ্য সরকারি সংস্থা ইলেকট্রো মেডিক্যাল অ্যান্ড অ্যালায়েড ইন্ডাস্ট্রিজ। কিন্তু দফতর বদলে আদৌ ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি।

Advertisement

সরকারি সূত্রের মতে যার কারণ, ধুঁকতে থাকা সংস্থাটির কোনও ভাবেই আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। ব্যবসায়িক ভাবে লাভজনক করে তোলার মতো পরিকাঠামো ও বিপণন ক্ষমতা, কোনওটাই সংস্থার নেই।

এ দিকে, কারখানা খোলার দাবিতে গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ে সংস্থার মূল দফতরের সামনে লাগাতার ধর্না দিচ্ছেন ও অবস্থান বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ইলেকট্রো মেডিক্যাল-এর ব্লাড ব্যাগ ইউনিটে চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত ৪২ জন কর্মী। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বন্ধ হয়ে যাওয়া সংস্থা হিন্দমোটরস ও শালিমার পেন্টস-এর কিছু শ্রমিক।

Advertisement

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ধুঁকতে থাকা সংস্থা ইলেকট্রো মেডিক্যাল-এর দায়িত্ব স্বাস্থ্য দফতরকে দেওয়া হয়। এর আগে রাজ্য সরকারি সংস্থা ও শিল্প পুর্নগঠন দফতরের আওতায় ছিল তারা। রাজ্য সরকারি সূত্রের খবর, সংস্থা চাঙ্গা করার জন্যই এই দফতর পরিবর্তন। ইলেকট্রো মেডিক্যাল যে-ধরনের পণ্য উৎপাদন করতে দক্ষ, তার সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। সেই সূত্রেই স্বাস্থ্য দফতরের হাতে এই বেহাল সংস্থার ভার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য।

সংস্থার দু’টি কারখানা। বি টি রোডে এক্স-রে ফিল্ম ও এক্স-রে মেশিন উৎপাদনের কারখানা। এবং সল্টলেকে ব্লাড ব্যাগ তৈরির কারখানা। দু’টিতেই উৎপাদন বন্ধ। ব্লাড ব্যাগ কারখানার ব্যবসায়িক সম্ভাবনা খতিয়ে দেখেছে একটি উপদেষ্টা সংস্থা। সরকারি সূত্রের খবর, উপদেষ্টা সংস্থাও জানিয়ে দিয়েছে এই কারখানা চালানো যাবে না।

বিটি রোডের এক্স-রে কারখানাতেও উৎপাদন চালু করা সম্ভব নয়। কারণ ডিজিটাল এক্স-রের যুগে তাদের প্রযুক্তি অচল। উৎপাদন না-হলেও বিভিন্ন হাসপাতালের এক্স-রে এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন কর্মীরা। সেই সূত্রেই তাঁদের টিঁকে থাকার একটা ব্যবস্থা হবে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য দফতর। সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের অবশ্য দাবি, এটা স্থায়ী সমাধানসূত্র হতে পারে না। পরিকাঠামো, দক্ষতা ও বিপণনের মিশেল ছাড়া সংস্থা চালানো কঠিন।

এই খামতির কথা উঠে এসেছে শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রের কথায়। বণিকসভার একটি অনুষ্ঠানে এসে তিনি জানান, তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্রে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার তৈরি হয়েছে। সেখানে একাধিক এক্স-রে মেশিন কেনা হয়েছে। তবে তা সবই বিদেশি সংস্থার। তাঁর খেদ, ভারতে বা এ রাজ্যে কোথাও এখনও এ ধরনের যন্ত্র তৈরি হয় না। অথচ মেধা-সম্পদ হাতের কাছেই রয়েছে।

রাজ্য সরকারের এক আধিকারিকের দাবি, শুধু পরিকাঠামো ও উৎপাদন দক্ষতাই সব নয়। চাই ক্ষুরধার বিপণন কৌশলও। যা এ ধরনের সরকারি সংস্থায় থাকে না বললেই চলে।

দেশের ব্লাড ব্যাগের বাজার মূলত দু’টি সংস্থার দখলে রয়েছে। একটি কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা। আর একটি বেসরকারি সংস্থা। সেই বাজারে পা রাখার জন্য যে-ধরনের বিপণন ক্ষমতা প্রয়োজন, তা ইলেকট্রো মেডিক্যালের নেই। সরকারি সূত্রে খবর, রাজ্যে যে-বাজার রয়েছে, তার চার গুণ উৎপাদন করে বিক্রি করতে হবে। তবেই সংস্থা ব্যবসায়িক ভাবে লাভজনক জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবে। কারণ খুব কম লাভে এই ব্যবসা চলে। আর সেটা পুষিয়ে যেওয়ার জন্য চাই বড় মাপের বিক্রি।

সংস্থার ব্লাড ব্যাগ তৈরির কারখানায় উৎপাদন বন্ধ প্রায় আট বছর। প্রায় ৬ বিঘা জমির উপর তৈরি এই কারখানা ২০০১ সালে চালু হয়। ২০০২ সাল থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। কারখানার প্রথম দিন থেকেই যুক্ত রয়েছেন এখনকার ৪২ জন কর্মী। সকলেই চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত। তিন মাস পর পর চুক্তি পুনর্নবীকরণ হওয়ার কথা। দফতর বদল হওয়ার পরে নিজেদের ভবিষ্যৎ জানতে দুই দফতরেই দৌড়ঝাঁপ করছেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, কোথাও কোনও সদুত্তর মেলেনি। গত জুন মাস থেকে বেতনও পাননি। কারণ তাঁদের চুক্তিটি পুনর্নবীকরণ হয়নি।

সরকারি সূত্রের খবর, কারখানার জমি ও যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে এখনও সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কর্মীদের স্বার্থ ভেবেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। অস্থায়ী কর্মীদেরও কাজে লাগানোর কথা ভাবছে রাজ্য। যদিও সে বিষয়ে ব্লাড ব্যাগের ওই ৪২ জন কর্মীর সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি।

সল্টলেক সেক্টর ফাইভের কারখানায় এক সময়ে তৈরি হত ব্লাড ব্যাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, গড়ে বার্ষিক ১ কোটি টাকার ব্যবসা করত সংস্থা। ২০০৬-’০৭ পর্যন্ত দেশের বাজারের পাশাপাশি বাংলাদেশেও ব্লাড ব্যাগ সরবরাহ করত এই কারখানা। দৈনিক ৮০০ ব্ল্যাড ব্যাগ উৎপাদন দিয়ে শুরু হয়। তারপর ধীরে ধীরে সেই সংখ্যা প্রায় ৪৫০০ ব্যাগে পৌঁছে যায়। কর্মীদের অভিযোগ, শুধুমাত্র প্রশাসনিক উদাসীনতার জন্যই কারখানার এই বেহাল দশা। কারণ বিদেশ থেকে কোটি টাকার বেশি দামের মেশিন এনেও তা সঠিক ভাবে কাজে লাগানো হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন