২৫ থেকে ২৮শে ফের ধর্মঘটের ডাক

বেতন বৈষম্যের কারণেই দক্ষ কর্মী হারাচ্ছে ব্যাঙ্ক, অভিযোগ ইউনিয়নের

নীচে তলার কর্মী হোন বা অফিসার। কেন্দ্রীয় সরকারি দফতরে কাজে প্রথম যোগ দিয়ে তাঁরা যা বেতন পান, সরকারি বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের প্রারম্ভিক বেতন তার তুলনায় প্রায় ৩৮% কম। আর এই বেতন বৈষম্যের কারণেই দক্ষ, মেধাবী কর্মীদের ব্যাঙ্কে ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী সংগঠনগুলির। এই বৈষম্যের প্রতিবাদে ফের দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তারা।

Advertisement

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৪৯
Share:

নীচে তলার কর্মী হোন বা অফিসার। কেন্দ্রীয় সরকারি দফতরে কাজে প্রথম যোগ দিয়ে তাঁরা যা বেতন পান, সরকারি বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের প্রারম্ভিক বেতন তার তুলনায় প্রায় ৩৮% কম। আর এই বেতন বৈষম্যের কারণেই দক্ষ, মেধাবী কর্মীদের ব্যাঙ্কে ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী সংগঠনগুলির। এই বৈষম্যের প্রতিবাদে ফের দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তারা।

Advertisement

কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের সঙ্গে বেতনের ফারাক নিয়ে এই ক্ষোভ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে নতুন নয়। এ বার এ নিয়ে ইউনিয়ন নেতাদের অভিযোগ, বেতন এত কম হওয়ার কারণে দক্ষ কর্মীদের ধরে রাখাই এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাঙ্কে চাকরি পেয়েও তা ছেড়ে অন্যত্র যোগ দিচ্ছেন ৮ থেকে ১১ শতাংশ কর্মী এবং অফিসার। তাই ব্যাঙ্কে বেতন বৃদ্ধির প্রয়োজন প্রমাণ করতে এই তথ্যই দাখিল করতে চলেছেন তাঁরা।

বেতন বাড়ানো নিয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সংগঠন ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশন (আইবিএ)-এর সঙ্গে আলোচনায় ফের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে কর্মী সংগঠনগুলির। বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদে ২৫ তারিখ থেকে টানা চার দিন (২৫-২৮ ফেব্রুয়ারি) ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ব্যাঙ্ককর্মী এবং অফিসারদের যৌথ সংগঠন ইউনাইটেড ফোরাম অব ব্যাঙ্ক ইউনিয়ন্স (ইউএফবিইউ)। তাতেও দাবি মানা না-হলে, ১৬ মার্চ থেকে লাগাতার ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে তারা। দাবির সমর্থনে ২৫ ফেব্রুয়ারি এক দিনের ধর্মঘট করবেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্মীরাও।

Advertisement

অল ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সমীর ঘোষ বলেন, “আমরা এবং অল ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ওয়ার্কার্স ফেডারেশন উভয়েই ওই দিন ব্যাঙ্ককর্মীদের আন্দোলনের সমর্থনে ধর্মঘটে সামিল হব।”

এক দিকে, আইবিএ ১৩ শতাংশের বেশি বেতন বৃদ্ধিতে নারাজ। অন্য দিকে তা ১৯.৫ শতাংশের কম হতে পারে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ইউনিয়নগুলি। ইউএফবিইউ-র সদস্য অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজেন নাগরের দাবি, “শুরুতে ৩৫% বেতন বৃদ্ধির দাবি করেছিলাম। সেখান থেকে তা পর্যায়ক্রমে নামিয়ে আনা হয়েছে ১৯.৫ শতাংশে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাতেও রাজি নন। তাই বাধ্য হয়েই আন্দোলন।”

স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থ খানের অভিযোগ, এখন কেউ ব্যাঙ্কে করণিক পদে চাকরি পেলে, শুরুতে বেতন পান ১৮ হাজার টাকা। অফিসাররা ৩২ হাজার। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে তা যথাক্রমে ২৯ হাজার ও ৫২ হাজার টাকা। ফলে অনেকে ব্যাঙ্কের চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। মার খাচ্ছে গ্রাহক পরিষেবা। তাঁর যুক্তি, “১৯.৫% বেতন বাড়লেও ফারাক থাকবে। কিন্তু ১৩% বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব মেনে নিলে সাধারণ কর্মীদের বেতন হবে ২৩,০৪০ টাকা। তা মানা অসম্ভব।”

আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। ফলে এর মধ্যে সমস্যা না-মিটলে এবং ইউনিয়নগুলি ধর্মঘটের ব্যাপারে অচল থাকলে, বাজেটের দিনও ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অবশ্য বিরোধ মেটাতে ২০ ফেব্রুয়ারি কর্তৃপক্ষ ও ইউনিয়নগুলিকে বৈঠকে ডেকেছেন কেন্দ্রীয় শ্রম কমিশনার। কিন্তু সেখানে সমস্যা কতটা মিটবে, তা নিয়ে সংশয়ী ইউনিয়ন নেতারাই। রাজেনবাবু বলেন, “প্রতিবার ধমঘট ডাকা হলে, বৈঠক হয়। আমাদের আশঙ্কা, এ বারেরটিও তেমন রুটিনেই পরিণত হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন