বাঁধনছাড়া উত্থানে নতুন শৃঙ্গ টপকাতে পারে সূচক

অনেক দিন পরে শেয়ার বাজার আবার বাঁধনছাড়া। এমন উন্মুক্ত উত্থান মানুষ বহু দিন দেখেননি। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসামাত্রই যেন সব নিরাশা দূর হয়েছে। সরকারের কাজকর্ম দেখে প্রতিদিন শক্তিশালী হচ্ছে আশার স্তম্ভগুলি। আর এরই প্রতিফলন পড়ছে শেয়ার সূচকে। সেনসেক্স এবং নিফ্টি দুই সূচকই সর্বকালীন উচ্চতায়। এখনও যা দম আছে তাতে মনে হয় না, এখানেই থামবে।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৪ ০২:৪১
Share:

অনেক দিন পরে শেয়ার বাজার আবার বাঁধনছাড়া। এমন উন্মুক্ত উত্থান মানুষ বহু দিন দেখেননি। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসামাত্রই যেন সব নিরাশা দূর হয়েছে। সরকারের কাজকর্ম দেখে প্রতিদিন শক্তিশালী হচ্ছে আশার স্তম্ভগুলি। আর এরই প্রতিফলন পড়ছে শেয়ার সূচকে। সেনসেক্স এবং নিফ্টি দুই সূচকই সর্বকালীন উচ্চতায়। এখনও যা দম আছে তাতে মনে হয় না, এখানেই থামবে। আশাবাদীরা সূচককে আগামী দিনে আরও অনেক উপরে দেখতে চাইছেন। বুল-রা বাজারে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বেয়ার-দের দূরবিন দিয়ে দেখলেও চোখে পড়ছে না।

Advertisement

হঠাৎ বাজার এত তেজী হল কেন? এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কারণগুলি:—

মোদী সরকারের প্রতি উত্তরোত্তর মানুষের আস্থা বৃদ্ধি।

Advertisement

সুদ না-কমলেও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি বাজারের পছন্দ হওয়া।

এসএলআর ০.৫ শতাংশ হ্রাস পাওয়ায় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় ৪০,০০০ কোটি টাকার জোগান বাড়ার সম্ভাবনা।

সুদ আর না-বাড়ানো এবং মূল্যবৃদ্ধি একটু কমলেই সুদ কমানোর ইঙ্গিত।

৫ থেকে ৬ শতাংশ হারে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা।

এল নিনোর প্রভাব কমার পূর্বাভাস। অর্থাৎ আগে যতটা ভাবা হয়েছিল, বৃষ্টিপাতে ঘাটতি ততটা না-ও হতে পারে।

বিদেশি লগ্নিতে জোয়ার আসা।

মে মাসে চিনে শিল্পোৎপাদন বাড়ায় ভারতীয় ইস্পাত শিল্পে চাঙ্গা ভাব।

ভাল সংখ্যায় ছোট লগ্নিকারীদের বাজারে যোগদান।

বাজেট থেকে বহু কিছু পাওয়ার আশা।

এপ্রিল মাসে পরিকাঠামো শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধি।

চলতি খাতে ঘাটতি অনেকটাই কমে আসা।

বিদেশি মুদ্রা-তহবিল ফুলে-ফেঁপে ওঠায় টাকার মূল্যবৃদ্ধি। ভারতে তথা বিশ্ব বাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্য হ্রাস।

যা আশা করা হয়েছিল, তার তুলনায় বছরের শেষ তিন মাসে ভাল কোম্পানি ফলাফল প্রকাশ।

প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা।

ইউরোপে নতুন আর্থিক ত্রাণ ঘোষণা।

বহু মাস পরে গাড়ি বিক্রি বৃদ্ধি।

ভাল শিল্প এবং লগ্নির পরিবেশের আশা।

এত সব কারণ একসঙ্গে উদয় হওয়ায় বাজারের না-উঠে উপায় কী!

এতগুলি অনুকূল শর্ত শুক্রবার সেনসেক্স-কে পৌঁছে দেয় ২৫,৩৯৬ অঙ্কে, যা এই সূচকের সর্বকালীন রেকর্ড উচ্চতা। ওই দিন মুম্বই সূচক বাড়ে ১.৫১%। চার দিক থেকে আসা গরম হাওয়ায় ভর করে গত সপ্তাহে সেনসেক্স মোট ওঠে ১,১৭৯ পয়েন্ট বা ৪.৮৯%। ১৬ মে উত্তেজনার বাজারে শেয়ার বিক্রি করতে না-পারার জন্য যাঁরা আফসোস করছিলেন, তাঁরা মাত্র সপ্তাহ তিনেকের মধ্যেই বেশির ভাগ শেয়ারকে পেয়ে গেলেন আগের অথবা তার থেকেও বেশি উচ্চতায়। শুক্রবার ওএনজিসি, হিরো মোটোকর্প-সহ রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে বেশ কয়েকটি নামী শেয়ার। গত সপ্তাহের শেষে নথিবদ্ধ সব শেয়ারের মোট বাজার দর ছিল ৮৯,৩১,৮৯৮ কোটি টাকা।

এরই মধ্যে কাজ আরম্ভ করে দিয়েছে নতুন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রক। শুরু হয়ে গিয়েছে বাজেটের জন্য প্রহর গোনা। নতুন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সেরে ফেলেছেন বাজেট নিয়ে শিল্পপতিদের সঙ্গে আলোচনা। জানতে চেয়েছেন, কোন শিল্প কী আশা করছে নতুন সরকারের প্রথম বাজেট থেকে। শিল্পপতিদের তরফে পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) এবং প্রত্যক্ষ কর বিধিকে দ্রুত বাস্তবায়িত করার আর্জি জানানো হয়েছে। অনুরোধ করা হয়েছে, অতীত দিন থেকে কার্যকর করা আয়কর আইনের বিশেষ ধারা প্রত্যাহার করার। বাজেট থেকে সাধারণ মানুষ এবং শিল্প-বাণিজ্য মহলের এ বার বিরাট আশা। সেই অনুযায়ী ফল মিললে বাজারে তেজী ভাব বজায় থাকবে। প্রাপ্তিতে ঘাটতি হলে সূচকের মুখ ভার হতে পারে। মনে রাখতে হবে, সরকার গঠিত হয়েছে পাঁচ বছরের জন্য। সুতরাং আসা মাত্রই সবাইকে খুশি করার তাগিদ সরকারের নেই। বরং দীর্ঘমেয়াদি গঠনমূলক কাজে সম্ভবত সরকার মন দেবে। এতে আখেরে সবারই ভাল হবে। সরকার আর্থিক সংস্কারের পথে হাঁটলে খুশি হবে বিদেশি লগ্নিকারীরা। বাজেটে শিল্প এবং কর্মসংস্থানের জন্য ব্যবস্থা থাকলে তা বাজারের চাঙ্গা ভাব ধরে রাখতে সাহায্য করবে। বাজার এতটা ওঠার পরে প্রতিবার যেমন হয়, ছোট লগ্নিকারীরা বাজারে প্রবেশ করতে শুরু করেছেন। এটি বাজারের জন্য কাম্য হলেও লগ্নিকারীদের কিন্তু এত উঁচু বাজারের ঝুঁকির কথা মাথায় রাখতে হবে।

এত কাল এক রকম ঝিমিয়ে ছিল ইক্যুইটির নতুন ইস্যু-র বাজার। কোল ইন্ডিয়া-র পরে বড় মাপের কোনও ভাল ইস্যু বাজারে আসেনি। সরকার শিল্প সম্পর্কে সদর্থক পদক্ষেপ করলে এবং শেয়ার বাজার চাঙ্গা থাকলে অনেক কোম্পানিই আবার নতুন প্রকল্প হাতে নিতে ভরসা পাবে। ফলে আসতে শুরু করবে নতুন ইস্যু। এই আশায় ভর করে বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে এলঅ্যান্ডটি এবং ভেল-এর মতো মূলধনী পণ্য নির্মাণকারী সংস্থাগুলি। বাজারে আসতে শুরু করেছে নতুন মিউচুয়াল প্রকল্পও। ভাল লাভের দেখা মিলেছে প্রায় প্রত্যেক পুরনো ইক্যুইটি নির্ভর প্রকল্পে। পাশাপাশি অত্যন্ত ভাল আয়ের সুযোগ আছে লিক্যুইড এবং শর্ট টার্ম ফান্ডে। সব মিলিয়ে বর্তমান তো ভালই, ভবিষ্যৎ সম্পকের্র্ও অনেকটাই আশা রাখা যায়। এই পরিস্থিতিতে সেনসেক্সের পরের লক্ষ্য হবে ২৬,০০০ এবং নিফ্টি-র ৮,০০০। এই দুই সূচকের দাম ও আয়ের অনুপাত বা পি ই রেশিও বাজার এতটা ওঠার পরেও ২০-র আশেপাশে। বর্তমান পরিস্থিতির বিচারে একে খুব উঁচু বলা যায় না। অর্থাৎ সূচকের আরও উপরে ওঠার জায়গা থাকছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন