বিপণন কৌশলে সামিল আঙুলে ভোটের কালিও

বিজ্ঞাপনে নির্বাচনের উপস্থিতি নতুন নয়। কিন্তু শুধু তাতে আটকে না-থেকে ছাড় দিয়ে ক্রেতা টানার বিপণন কৌশলেও এ বার পুরোদস্তুর সামিল গণতন্ত্রের সব থেকে বড় উৎসব ভোট। পুজো, পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু করে ভ্যালেন্টাইন্স ডে বছরভর প্রায় যে কোনও উৎসব বা বিশেষ দিনেই এখন ক্রেতা টানতে ছাড় (সেল) দেওয়ার কথা ঘোষণা করে বিভিন্ন সংস্থা।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৪ ০২:১৮
Share:

বিজ্ঞাপনে নির্বাচনের উপস্থিতি নতুন নয়। কিন্তু শুধু তাতে আটকে না-থেকে ছাড় দিয়ে ক্রেতা টানার বিপণন কৌশলেও এ বার পুরোদস্তুর সামিল গণতন্ত্রের সব থেকে বড় উৎসব ভোট।

Advertisement

পুজো, পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু করে ভ্যালেন্টাইন্স ডে বছরভর প্রায় যে কোনও উৎসব বা বিশেষ দিনেই এখন ক্রেতা টানতে ছাড় (সেল) দেওয়ার কথা ঘোষণা করে বিভিন্ন সংস্থা। এ বার সেই তালিকায় হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়েছে ভোটও। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কোথাও রেস্তোরাঁর বিলে ছাড় মিলছে, তো কোথাও পেট্রোল পাম্পে। এমনকী জুতো কেনা কিংবা বিউটি পার্লারেও ছাড় দিচ্ছে কেউ কেউ। তবে শর্ত সকলেরই এক। ওই ছাড় পেতে আগে ভোট দিতে হবে। আঙুলে থাকতে হবে তার কালির চিহ্ন।

কর্পোরেট দুনিয়া অবশ্য মনে করছে, ভোটে ছাড় শুধু ক্রেতা টানার চাবি নয়। তাঁদের সঙ্গে পোক্ত সম্পর্ক (বন্ডিং) তৈরির মোক্ষম হাতিয়ারও। ফলে এর মাধ্যমে নিজেদের দায়িত্বশীল ভাবমুর্তিও ঝালিয়ে নিচ্ছে তারা। ছাড়ের কথা জানিয়ে এসএমএস পাঠাচ্ছে ভোটারদের মোবাইলে।

Advertisement

যেমন, দেশ স্বাধীন হওয়ার বছরে পথ চলতে শুরু করা মেট্রো-শু মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে সরাসরি ১০% ছাড়ের বার্তা পাঠাচ্ছে ক্রেতাদের। জানাচ্ছে, আঙুলে কালির ছাপ দেখালেই ওই ছাড় দেবে তারা। একই ভাবে বাজারে নেমেছে বিভিন্ন রেস্তোরাঁ, বিউটি পার্লার, পেট্রোল পাম্প ইত্যাদিও। কোথাও ১০-১৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে, তো কোথাও মিলছে বিনামূল্যে পানীয়। ছাড় পাওয়া যাচ্ছে গো-আইবিবোয় বিমানের টিকিট কাটলেও। অন্যান্য মেট্রো শহরের মতো কলকাতায় রেস্তোরাঁ বা বিউটি পার্লারে এ ধরনের ছাড় এখনও ব্যাপক ভাবে না-ছড়ালেও, বিভিন্ন সংস্থার সারা দেশে দেওয়া ছাড়ের সুবিধা পাচ্ছে এই শহর।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভোটে শুধু সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে খেলা দেখার ভূমিকা আগেই ছেড়েছে কর্পোরেট সংস্থাগুলি। যে কারণে ভোটারদের সচেতনতা বৃদ্ধি, ওয়েবসাইটে বিভিন্ন কেন্দ্রের সঙ্গে ভোটারদের পরিচিতি ঘটানো, ভোটার তালিকায় নথিভুক্তি সব ক্ষেত্রে আগেই এগিয়ে এসেছে তারা। সক্রিয় থেকেছে পুরো প্রক্রিয়ায়। ভোটকে ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে সাড়া ফেলে দেওয়া বিভিন্ন বিজ্ঞাপন-ক্যাম্পেনও। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে সরাসরি ক্রেতাদের ‘ইনসেন্টিভ’ দিতেও পিছপা হচ্ছে না তারা।

বিজ্ঞাপন-গুরু রাম রায়ের মতে, নির্বাচনের মতো রাজসূয় যজ্ঞের কাঁধে ভর দিয়ে বিজ্ঞাপনের সুযোগ হাতছাড়া করা কাজের কথা নয়। তিনি বলেন, “এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ তথা ক্রেতার সঙ্গে ‘বন্ডিং’ করা সহজ। ভোট দেওয়ার অধিকারের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার সঙ্গে জড়িত কর্পোরেট সংস্থাগুলির দায়িত্বশীল ভাবমূর্তি। তাই যে কোনও ব্র্যান্ডের কাছে এটা আক্ষরিক অর্থেই সুবর্ণ সুযোগ।”

দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রচারের দায়িত্বে থাকা বিজ্ঞাপন সংস্থার এক কর্তা বলেন, “ভারতে ভোট অনেকটা ক্রিকেটের মতো। বক্সঅফিস হিট করবেই। তাই সমাজের সমস্ত স্তরে পৌঁছে যাওয়ার জন্য এটি একটি মোক্ষম মাধ্যম।”

২০০৮ সালে টাটা টি-র ‘জাগো রে’ ক্যাম্পেন সাড়া ফেলেছিল। এ বারও বিশেষ বিজ্ঞাপনী প্রচার করছে তারা। ভোটার সচেতনতার প্রচারে নেমেছে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার, হিরো মোটোকর্প, আইটিসির মতো সংস্থাও।

এগিয়ে এসেছে প্রযুক্তি সংস্থাগুলিও। গুগ্ল ইন্ডিয়ার ‘নো ইওর ক্যান্ডিডেট’-এ পিনকোড টাইপ করলেই স্ক্রিনে ভেসে উঠছে এলাকার ভোট প্রার্থীদের যাবতীয় তথ্য। সংস্থার মুখপাত্র পরমা রায়চৌধুরীর দাবি, বহুজাতিক হিসেবে এ দেশের মানুষের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করতেও এই ভোটকে বেছেছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন