লক্ষ্য বাড়তি রাজস্ব

বাড়ি কেনায় মধ্যবিত্তকে সুবিধা স্ট্যাম্প ডিউটিতে

নির্মাণ ও আবাসন শিল্পে রাজ্য সরকারের নেক-নজর অব্যাহত। শুক্রবার বাজেট পেশ করে অমিত মিত্র জানান, যে-সমস্ত সম্পত্তির মূল্য ৩০ লক্ষ টাকার বেশি, সেগুলি রেজিস্ট্রি করার সময়ে অতিরিক্ত ১% স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হয়। এই ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে ৪০ লক্ষ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ ৪০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মূল্যের সম্পত্তির ক্ষেত্রে এখন ৭ শতাংশের বদলে ৬% স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হবে।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২৯
Share:

নির্মাণ ও আবাসন শিল্পে রাজ্য সরকারের নেক-নজর অব্যাহত।

Advertisement

শুক্রবার বাজেট পেশ করে অমিত মিত্র জানান, যে-সমস্ত সম্পত্তির মূল্য ৩০ লক্ষ টাকার বেশি, সেগুলি রেজিস্ট্রি করার সময়ে অতিরিক্ত ১% স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হয়। এই ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে ৪০ লক্ষ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ ৪০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মূল্যের সম্পত্তির ক্ষেত্রে এখন ৭ শতাংশের বদলে ৬% স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হবে।

রাজ্য সরকারের দাবি, মধ্যবিত্তদের হাতের নাগালে মাথা গোঁজার ঠাঁই এনে দিতেই এই ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধুই মধ্যবিত্ত-বাজার চাঙ্গা করতে এই পদক্ষেপ নয়। নির্মাণ শিল্পকে নতুন প্রাণ দিতেও ৪০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দামের বাড়ির উপর স্ট্যাম্প ডিউটি কমানো হয়েছে। তাঁদের যুক্তি, রাজ্যে উৎপাদন ও বড় শিল্পের সংখ্যা নগণ্য হওয়ায় সে বাবদ রাজস্ব আদায়ের রাস্তা অপরিসর। ফলে রাজ্যের আর্থিক বৃদ্ধির পেছনে নির্মাণ শিল্পের ভূমিকা ক্রমশ বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে এই শিল্প মার খেলে রাজ্যের বৃদ্ধিও মার খাবে। আর্থিক টানাটানিতে জেরবার রাজ্য সরকার সেই পরিস্থিতি সামাল দিতেই এই সুবিধার প্রস্তাব দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

ভ্যাটের পরেই স্ট্যাম্প ডিউটি থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করে রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই রাজস্ব আদায়েও মার খেয়েছে রাজ্য। ২০১৪-’১৫ সালে স্ট্যাম্প ডিউটি থেকে ৫৩৯৯.০৬ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছিল রাজ্য। বাস্তবে তা হয়নি। ৪২৫৭.১১ কোটি টাকা স্ট্যাম্প ডিউটি থেকে আয় করেছে সরকার। অর্থাৎ স্ট্যাম্প ডিউটির ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার থেকে ২১ শতাংশ কম আয় করেছে অমিতবাবুর দফতর।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, রাজ্যের আশা এক শতাংশ স্ট্যাম্প ডিউটি কমলে চাহিদা বাড়বে। বাড়বে রেজিস্ট্রি করার প্রবণতাও। সব মিলিয়ে সরকারি কোষাগারে টাকা আসবে। উপদেষ্টা সংস্থা কেপিএমজি-র কর বিশেষজ্ঞ রাজর্ষি দাশগুপ্ত জানান, সাধ্যের মধ্যে বাড়ি দিতে পারলে ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে বাধ্য। বাজার বড় করার এই সরকারি পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। বাজেটে ২০১৫-’১৬ সালে স্ট্যাম্পে ডিউটি থেকে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫৯৭.৬৭ কোটি ধরা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের দাবি, নির্মাণ শিল্প যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা প্রমাণ করেছে গত মাসে রাজ্য সরকার আয়োজিত শিল্প সম্মেলন ‘গ্লোবাল বেঙ্গল সামিট’। গত মাসে আয়োজিত এই সম্মেলনে রাজ্যের মুখ রেখেছে নির্মাণ শিল্পই। ২২টি উপনগরী গড়ার জন্য রাজ্য সরকারকে ৭৬০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে তারা।

নির্মাণ শিল্পের সংগঠন ক্রেডাই-এর অন্যতম কর্তা হর্ষবর্ধন পাটোডিয়ার দাবি, যে-মধ্যবিত্ত বাজার এ রাজ্যের আবাসন শিল্পের ভরসা, সরকারি পদক্ষেপের ফলে সেই বাজারের চাহিদাও বাড়বে লাফিয়ে লাফিয়ে। একই সুরে জৈন গোষ্ঠীর ঋষি জৈন ও প্রাইমার্ক গোষ্ঠীর সিদ্ধার্থ পাসারি জানান, মূলত ক্রেতাদের দিকে নজর রেখেই এই সুবিধা। তবে আখেরে আবাসন শিল্পও লাভবান হবে। ক্রেডাই-এর প্রাক্তন কর্তা প্রদীপ সুরেকার মতে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মধ্যবিত্ত ফ্ল্যাটের দামও বেড়েছে। সে ক্ষেত্রে স্ট্যাম্প ডিউটি কমানোয় স্বস্তি পাবেন ক্রেতারা।

গত বছরের গোড়াতেও ঘুরিয়ে স্ট্যাম্প ডিউটি কমিয়েছিল রাজ্য সরকার। ফ্ল্যাট, বাড়ি-সহ সম্পত্তির বাজার দরের সঙ্গে সরকারি মূল্যায়নের ফারাক কমানোর কথা জানিয়েছিলেন অমিতবাবু। সাধারণত সরকারি মূল্যায়নের উপরে ভিত্তি করেই স্ট্যাম্প ডিউটির হিসেব কষা হয়। ফলে মূল্যায়ন কমলে, সব মিলিয়ে ফ্ল্যাট বাবদ খরচের বোঝাও কমবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন