বিদেশি লগ্নিকারীদের উদ্দেশে ইতিবাচক বার্তা পাঠাল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
৩,২০০ কোটি টাকার কর নিয়ে ভোডাফোন বনাম কেন্দ্রের বিবাদে বম্বে হাইকোর্ট ভোডাফোনের পক্ষেই রায় দিয়েছিল। সেই রায় নিয়ে আর জলঘোলা না-করার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। মন্ত্রিসভায় ঠিক হল, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন জানানো হবে না।
২০১০ সালে ভোডাফোন গোষ্ঠীরই দু’টি সংস্থার মধ্যে শেয়ার হস্তান্তরের উপর মনমোহন সরকারের জমানায় ৩২০০ কোটি টাকার কর চাপিয়েছিল আয়কর দফতর। ভোডাফোন যুক্তি দেয়, এই লেনদেন করের আওতায় পড়ে না। কিন্তু মনমোহন সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, শেয়ারের দাম কম করে দেখানো হলে তার উপর কর বসতে পারে। গত বছর জানুয়ারিতে আদালতে আবেদন জানায় ভোডাফোন। অক্টোবরে আদালত রায় দেয়, ভোডাফোনকে কর দিতে হবে না। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহাতগি পরামর্শ দেন, রায়ের বিরুদ্ধে ফের আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আজ মন্ত্রিসভা সেই সিদ্ধান্তেই সিলমোহর বসিয়েছে।
এ দেশে বিদেশি লগ্নির হিসেবে ভোডাফোন প্রথম স্থানে। তাদের সঙ্গে মনমোহন সরকারের কর নিয়ে বিবাদের জেরেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতে লগ্নি করার উৎসাহ হারায় বলে মনে করে শিল্পমহল।
পাশাপাশি, অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ভোডাফোন-হাচিসন ব্যবসায়িক লেনদেনের উপরে ২০ হাজার কোটি টাকার করের দাবি নিয়েও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগোচ্ছে মোদী সরকার। আদালতের বাইরে ওই বিবাদ মেটাতে এখন আন্তর্জাতিক স্তরে কেন্দ্র ও ভোডাফোনের মধ্যে বোঝাপড়ার চেষ্টা চলছে। এ জন্য বাড়তি সময়ও দিয়েছে নয়াদিল্লি। ভোডাফোন ছাড়াও শেল, আইবিএম, নোকিয়ার সঙ্গে কর-বিবাদ চলছে। এই মামলাগুলিতেও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগোচ্ছে মন্ত্রক।
প্রসঙ্গত, ২০০৭-এ হংকঙের হাচিসন-এসার সংস্থায় হাচিসন হোয়ামপোয়া-র শেয়ার কিনে নেয় ভোডাফোন। কিন্তু এ জন্য ভারতে কর জমা দেয়নি তারা। যুক্তি ছিল, চুক্তি সই হয়েছে বিদেশে। ফলে কর দাবি করতে পারে না কেন্দ্র। কিন্তু তার উপরে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার কর চাপায় কেন্দ্র। জরিমানা ও সুদ মিলিয়ে যা দাঁড়ায় ২০ হাজার কোটি। সুপ্রিম কোর্ট ভোডাফোনের পক্ষে রায় দেয়। ২০১২-য় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় বাজেটে নতুন এই ‘রেট্রোস্পেকটিভ’ আইন এনে পুরনো ব্যবসায়িক লেনদেনের উপরে কর বসানোর ব্যবস্থা করেন। ভোডাফোন গোষ্ঠীর সিইও ভিট্টোরিও কোলাও নিজে দিল্লিতে এসে প্রণববাবুর সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু অর্থ মন্ত্রক কর নিয়ে নিজের সিদ্ধান্তেই অটল ছিল। শিল্পমহল মনে করে, পুরনো লেনদেনে নতুন করে কর বসায় দেশের কর আইন সম্পর্কে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। তারপরই বিদেশি লগ্নিকারীরা ভারত থেকে মুখ ফেরান।
বিদেশি লগ্নিকারীদের ফের ভারতমুখো করতে আজ সেই ভোডাফোনের সঙ্গেই ২০১০-এর মামলায় কর বিবাদে না-যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল মোদী সরকার। টেলি- যোগাযোগ মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “গোটা বিশ্বের লগ্নিকারীদের কাছে এটা স্পষ্ট বার্তা। আমরা নিষ্ফল আইনি বিবাদ এড়াতে চাইছি।” সরকার যে ইউপিএ-র আমলে তৈরি জট ছাড়ানোরই চেষ্টা করছে, তা জানিয়ে রবিশঙ্কর বলেন, “লগ্নিকারীরা মনে করছিলেন, এ দেশের কর নীতিতে নিশ্চয়তা নেই। সরকার ও লগ্নিকারীদের অবস্থানের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়েছিল। আজকের সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক বার্তাই রয়েছে।”
অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির ব্লগেও সেই মনোভাবেরই ইঙ্গিত মিলেছে। দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম থেকে ফিরে তিনি লিখেছেন, ৩০ বছর পরে ভারতে একটি দল পূর্ণ গরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে বলা হচ্ছে, তিনি সংস্কারের পক্ষে ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ৪টি অর্ডিন্যান্স থেকেই স্পষ্ট, সংস্কার নিয়ে সরকার বদ্ধপরিকর। লগ্নিকারীরা ভারত সম্পর্কে যথেষ্ট উৎসাহী। তাই দাভোসে ভারত কেন্দ্রিক বৈঠকগুলিতে ভিড় উপচে পড়েছে। জেটলির বক্তব্য, এই উৎসাহকে লগ্নিতে রূপান্তরের চেষ্টাই করছে কেন্দ্র।