হিন্দুস্তান মোটরস নিয়ে প্রথম ত্রিপাক্ষিক বৈঠকই ভেস্তে গেল।
উত্তরপাড়া কারখানায় কাজ বন্ধের (সাসপেনশন অব ওয়ার্ক) নোটিস ঝোলানো এই সংস্থার কর্তৃপক্ষ এবং কর্মী সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৃহস্পতিবার ওই বৈঠক ডেকেছিলেন রাজ্যের শ্রমসচিব অমল রায় চৌধুরি। কিন্তু অমলবাবু ও কর্মী ইউনিয়নগুলির অভিযোগ, এ দিন আলোচনায় আসা সংস্থা প্রতিনিধিরা আদৌ বৈঠকে অংশ নেওয়ার উপযুক্ত ছিলেন না। তাঁদের দাবি, সিইও বা অন্তত উচ্চ পদমর্যাদার প্রতিনিধিকে বৈঠকে আসতে হবে। ফলে এ দিন আলোচনা বাতিল করে দেন শ্রমসচিব। বৈঠকে উপস্থিত থাকার বিষয়ে সংস্থার সিইও-র আশ্বাস মেলায় আগামী মঙ্গলবার (১৭ জুন) ফের আলোচনার দিন স্থির হয়েছে।
হিন্দ মোটরের অবশ্য দাবি, এ দিনের বৈঠকেও যোগ্য উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিকেই পাঠিয়েছিলেন তারা।
সিটু প্রভাবিত ইউনিয়নের সভাপতি শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করেই উপযুক্ত পদমর্যাদার কাউকে পাঠাননি। আবার আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি দোলা সেনের দাবি, শ্রমসচিব বৈঠক ডাকলে, আরও উচ্চপদস্থ কর্তার সেখানে থাকা উচিত। অমলবাবু নিজেও বলেন, “মানব সম্পদ বিভাগের যে কর্তা এসেছেন, তিনি সংস্থার নীতির বিষয়ে কী জানেন? উনি কি সংস্থা নিয়ে কোনও কথা দিতে পারবেন? সিইও মলয় চৌধুরিকে ফোন করে জানতেও চেয়েছিলাম যে, কেন তিনি এলেন না। উনি বলেন, ওঁরা ব্যাঙ্কের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এটা আগে জানানো উচিত ছিল।” তবে ফোনে মলয়বাবুর আশ্বাস পেয়েই ১৭ জুন পরবর্তী বৈঠকের দিন ঠিক হয়েছে বলে জানান তিনি।
পরে রাজ্য ও ইউনিয়নের এই অভিযোগ কার্যত উড়িয়ে দিয়ে সংস্থা অবশ্য জানিয়েছে, শ্রম দফতরের আবেদন মেনেই ভাইস প্রেসিডেন্ট (কর্পোরেট এইচআর) বৈঠকে গিয়েছিলেন। তিনি সংস্থা পরিচালনায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি কর্মীদের চাহিদা ও বর্তমান অবস্থা ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রেও উপযুক্ত প্রতিনিধি। একই সঙ্গে তারা অবশ্য জানিয়েছে, শ্রম দফতরের নতুন সূচি মেনে সংস্থার প্রতিনিধিরা পরবর্তী বৈঠকে যাবেন।
বৈঠক না-হওয়ায় হতাশ শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “আমরা আলোচনা চালিয়ে যাব।” সংস্থা কর্তৃপক্ষ অন্যান্য বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও আমলাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য চিঠি দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২৪ মে হিন্দ মোটরের কর্মীরা কারখানার গেটে কাজ বন্ধের নোটিস দেখার পর সমস্যা মেটাতে ইতিমধ্যেই আলাদা ভাবে শ্রমিক সংগঠন ও সংস্থা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছে রাজ্য। সেই অর্থে আজই প্রথম ত্রিপাক্ষিক আলোচনার জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন সব পক্ষের প্রতিনিধিরা। বেলা দু’টোয় বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। সেই অনুযায়ী ছ’টি ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা একে একে সেখানে পৌঁছলে প্রথমে তাদের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলে রাজ্যের মনোভাব জানান শ্রমসচিব। এর মধ্যে সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট (কর্পোরেট এইচআর) অসীম ঘোষ সহকারীকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে এলে তাঁদের আলাদা ঘরে বসানো হয়। কিছুক্ষণ পরে শ্রমসচিবের ঘরে তাঁদের ডাক পড়ে। কিন্তু উপযুক্ত পদমর্যাদার কেউ না-থাকার অভিযোগে কিছুক্ষণের মধ্যেই বাতিল হয় বৈঠক।
এ দিন আলোচনা না হলেও কর্মী ইউনিয়নগুলি অবিলম্বে কর্মীদের প্রাপ্য বকেয়া মেটানো ও কারখানার দরজা খোলার দাবি জনিয়েছে। দোলাদেবীর অভিযোগ, হিন্দ মোটরের জমি বিক্রির অনুমতি আদায় করেও সরকারি শর্ত পূরণ না-করার দায় পূর্বতন বাম সরকারের উপর বর্তায়। কর্মীদের বকেয়া না পাওয়ার দায়ও কিছুটা সিটুর। উল্টো দিকে, শান্তশ্রীবাবুর অভিযোগ, “এ সব বলে ওঁরা রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চান।”
বাড়ল শিল্পোৎপাদন, কমলো খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধি
সংবাদ সংস্থা • নয়াদিল্লি
দেশের অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিল জোড়া সুখবর। এক দিকে, দু’মাস সরাসরি কমে যাওয়ার পর গত এপ্রিলে ৩.৪% বাড়ল শিল্পোৎপাদন। যা ১৩ মাসে সর্বোচ্চ। অন্য দিকে, মে মাসে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধি কমে হল ৮.২৮%। যা আবার ৩ মাসে সর্বনিম্ন। এপ্রিলে ওই হার (৮.৫৯%) ছিল ৩ মাসে সর্বোচ্চ। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শিল্প বৃদ্ধির হার বেড়েছে উৎপাদন, খনন, বিদ্যুৎ ও মূলধনী পণ্যের শিল্প কিছুটা ভাল করায়। আর মূল্যবৃদ্ধি কমার কারণ খাদ্যপণ্যের দাম নেমে আসা। যা দেখে আশায় বুক বাঁধছে শিল্প।