যান্ত্রিক ত্রুটিতে বন্ধ হলদিয়া পেট্রোকেম

পুজোর মুখে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ রাখা হল হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস (এইচপিএল)। সরকারি সূত্রের দাবি, রবিবার সকালেই কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হলদিয়া পেট্রোকেমের এম ডি উত্তম কুমার বসু জানিয়েছেন, “যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্লান্ট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ন্যাপথা ক্র্যাকার ইউনিটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মেশিন ‘চার্জ গ্যাস কম্প্রেসার’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৪ ০৩:২২
Share:

পুজোর মুখে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ রাখা হল হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস (এইচপিএল)।

Advertisement

সরকারি সূত্রের দাবি, রবিবার সকালেই কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হলদিয়া পেট্রোকেমের এম ডি উত্তম কুমার বসু জানিয়েছেন, “যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্লান্ট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ন্যাপথা ক্র্যাকার ইউনিটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মেশিন ‘চার্জ গ্যাস কম্প্রেসার’। এই যন্ত্রেই ত্রুটি দেখা দিয়েছে। সেই কারণেই ইউনিটটি বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আর এটিই যেহেতু মূল ইউনিট, তাই এটি বন্ধ রাখলে, অন্য ইউনিটগুলিও চালু রাখা যাবে না।” তিনি আরও বলেন যে, এই মেশিনটিতে এর আগেও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। তবে এ বারের সমস্যাটি নতুন ধরনের। প্রসঙ্গত, অতীতেও যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য প্লান্ট বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এ যাত্রায় কবে ফের কারখানা চালু হবে, সে ব্যাপারে অবশ্য স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। সরকারি সূত্রে দাবি, ওই যন্ত্রটি মেরামতির আগে দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। এ দিন রবিবার হওয়ায় কর্মীদের হাজিরা ছিল ন্যূনতম।

সংস্থা সূত্রে খবর, এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ এগ্জিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা হলদিয়া প্লান্টের প্রধান অশোককুমার ঘোষ সব ইউনিট বন্ধ করার নির্দেশ দেন। তারপরই মূল প্লান্ট ন্যাপথা ক্র্যাকার ইউনিট বন্ধ করা হয়। ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় এইচডিপিই, এলএলডিপি, পিপি, পিডিএইচইউ, বিউটাডাইন, বেঞ্জিনের মতো প্রায় ৮টি প্লান্ট। ন্যাপথা ক্র্যাকার ইউনিটে ন্যাপথা চূর্ণ করার পরে সেগুলি নানা পলিমার প্রোডাক্ট উৎপাদন করার জন্য বিভিন্ন প্লান্টে যায়। তাই মূল প্লান্ট বন্ধ হওয়ায় অন্যগুলিও বন্ধ করে দিতে হয়। উল্লেখ্য, সম্প্রতি পাইপলাইনের কাজের জন্য ৭ দিন বন্ধ রাখা হয় এইচডিপিই প্লান্ট-ও।

Advertisement

সংস্থা নিয়ে দীর্ঘ টালবাহানা চলাকালীন গত প্রায় আট মাস প্লান্টে রুটিন মাফিক রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয়নি বলেই সরকারি সুত্রের খবর। তাদের দাবি, ত্রুটি সারানোটাই এখন অগ্রাধিকার পাবে। সংস্থা সূত্রেও জানা গিয়েছে, গত আড়াই বছর ধরে যন্ত্রপাতির বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কারখানা বন্ধ করা হয়নি। তার কারণ, কারখানার উৎপাদন ক্ষমতার ১০০% ব্যবহার করা হয়নি, আপাতত তার ৫০ শতাংশেরও কম ব্যবহৃত হচ্ছে। যেখানে এই ইউনিটে প্রতি ঘন্টায় ২৬০ মেট্রিক টন ন্যাপথা চূর্ণ করার ক্ষমতা রয়েছে, সেখানে চূর্ণ করা হচ্ছিল ১০০-১১০ মেট্রিক টন।

এইচপিএলের হলদিয়া শাখার ডেপুটি ম্যানেজার গৌতম চট্ট্যোপাধ্যায় জানান, ন্যাপথা ক্রাকার ইউনিটে যান্ত্রিক সমস্যা বেশ কিছু দিন ধরেই ভোগাচ্ছিল। মূলত ১) হিট এক্সচেঞ্জ, ২) স্টিম লিকেজ ও ৩) ভাইব্রেশনের সমস্যা ছিল। জাপান থেকে বিশেষজ্ঞরা এসে দেখেও গিয়েছেন। তবে এ দিনের যান্ত্রিক ত্রুটি সে কারণেই কিনা, তা নিয়ে কিছু বলতে পারেননি গৌতমবাবু।

পুজোর আগে হঠাৎ করে এ ভাবে কারখানা বন্ধ হওয়ায় ফের সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কর্মীরা। কারণ এমনিতেই আর্থিক ভারে জর্জরিত সংস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে বারেবারেই প্রশ্ন উঠেছে। সংস্থার রাশ কার হাতে যাবে, সে বিতর্ক গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। এর মধ্যে রাজ্য তাদের শেয়ার নিলামে বিক্রির জন্য আবেদনপত্র চাইলে ইন্ডিয়ান অয়েল তাতে সাড়া দেয়। তারপর অবশ্য রাজ্য ফের সংস্থার অন্যতম অংশীদার পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে রফার সিদ্ধান্তই নিয়েছে। পরিচালন পর্ষদের শেষ বৈঠকের পরে সে কথা জানিয়েছিলেন পূর্ণেন্দুবাবুই। রাজ্য মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত, পরিচালনার ভার দেওয়া হবে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীকেই। নিলামে যে-দরে ইন্ডিয়ান অয়েল শেয়ার কিনতে চেয়েছিল, সেই দরেই রাজ্য নিজের শেয়ার বেচবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, বিতর্ক পুরো না -মিটলেও এ সবের মধ্যেই ধীরে ধীরে তাদের বাজার কিছুটা হলেও ফিরে পাচ্ছিল এইচপিএল। এই অবস্থায় কারখানা বন্ধ হওয়ায় নতুন করে ধাক্কা খেল সংস্থা, মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন