অরুণ জেটলি
প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসার পর থেকেই নরেন্দ্র মোদী রাজ্যগুলির হাতে আরও বেশি অর্থ ও ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলছেন। এ বারের বাজেটেও সেই মোদী-মন্ত্রই প্রতিধ্বনিত হতে পারে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের ইঙ্গিত, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে রাজ্যগুলির হাতে আরও বেশি অর্থ তুলে দেওয়ার কথা বাজেটেই ঘোষণা করতে পারেন অরুণ জেটলি।
ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কর বাবদ আয়ের ৩২ শতাংশ এখন রাজ্যগুলির মধ্যে বিলি করে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রকল্প বাবদ অর্থ সাহায্য ও অনুদান যোগ করলে কেন্দ্রীয় তহবিলের প্রায় ৪২% অর্থ রাজ্যগুলির হাতে চলে যায়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর ওয়াই ভি রেড্ডির নেতৃত্বাধীন চতুর্দশ অর্থ কমিশন সম্প্রতি সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, ওই রিপোর্টে রাজ্যের হাতে আরও বেশি পরিমাণ অর্থ তুলে দেওয়ার কথা বলেছে কমিশন। মোদী সরকারের ভাবনা-চিন্তার সঙ্গে যা সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এখনও পর্যন্ত আর্থিক সংস্কারের পথে আঞ্চলিক দলগুলিকে পাশে পায়নি কেন্দ্র। রাজ্যসভায় কংগ্রেসের পাশাপাশি এই দলগুলির মিলিত বিরোধিতায় বিল পাশ করাতে না পেরে অর্ডিন্যান্সের পথ নিতে হয়েছে। রাজ্যের হাতে আরও বেশি অর্থ তুলে দিয়ে মোদী সরকার আঞ্চলিক দলগুলিকে পাশে পাওয়ার রাজনৈতিক চেষ্টা করছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। মন্ত্রিসভার এক সদস্যের যুক্তি, “এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। প্রধানমন্ত্রী প্রথম দিন থেকেই ‘কো-অপারেটিভ ফেডারেলিজম’ বা কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার কথা বলছেন। তাঁর ধারণা, বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে অর্থনৈতিক অসাম্য দেশের আর্থিক বৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সেই কারণেই রাজ্যের হাতে আরও বেশি অর্থ তুলে দেওয়ার প্রয়োজনের কথা বলেছেন তিনি। যাতে রাজ্যগুলি নিজস্ব প্রয়োজন মতো উন্নয়নে ব্যয় করতে পারে।”
চতুর্দশ অর্থ কমিশনের রিপোর্ট এখনও প্রকাশ করা হয়নি। এমন নয় যে অর্থ কমিশনের সব সুপারিশ মেনে নিতে কেন্দ্রীয় সরকার বাধ্য। সরকারি সূত্রের খবর, কমিশনের সুপারিশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের আলোচনা হয়েছে। সুপারিশ মানা হলে কেন্দ্রীয় কর বাবদ আয়ের প্রায় ৫০% অর্থই রাজ্যের হাতে তুলে দেবে কেন্দ্র। এই অর্থ পুরোপুরিই নিজের এলাকার উন্নয়নের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যয় করতে পারবে রাজ্য সরকার। এ বছরের ১ এপ্রিল থেকেই আগামী পাঁচ বছর চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সূত্র মেনে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে অর্থ বণ্টন করা হবে। সেই অনুযায়ীই বাজেটের অঙ্ক কষতে হবে অরুণ জেটলিকে। ২৮ ফেব্রুয়ারি জেটলি যখন বাজেট পেশ করবেন, তখনই রাজ্যগুলির হাতে কতখানি বাড়তি অর্থ ও ক্ষমতা তুলে দেওয়া হবে, তা স্পষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা।
কর বাবদ আয়ের ভাগ ছাড়াও রাজ্যের যোজনায় সাহায্য, অনুদান ও বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যকে অর্থ দিয়ে থাকে কেন্দ্র। অধিকাংশ রাজ্যই দাবি তুলেছে, কেন্দ্রীয় অনুদানে যে-সব প্রকল্প চলে, তার অর্থ সরাসরি রাজ্যের হাতে তুলে দেওয়া হোক। রাজ্য স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ করুক। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে নরেন্দ্র মোদীও একই দাবি করতেন। চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশেও সেই সুরই রয়েছে বলে সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত।
একশো দিনের কাজ, ইন্দিরা আবাস যোজনা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনার মতো ৬৬টি প্রকল্প চালায় কেন্দ্র। গত বাজেটে পরিকল্পনা খাতে ৫ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। তার মধ্যে ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকাই বরাদ্দ হয়েছিল এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিতে। এগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি তুলে দেওয়া বা একই ক্ষেত্রের প্রকল্পগুলিকে মিশিয়ে দেওয়া নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করছে মোদী সরকার। নীতি আয়োগের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে উপ গোষ্ঠীও তৈরি করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ওই গোষ্ঠী খতিয়ে দেখবে, এখন যে ৬৬টি কেন্দ্রীয় প্রকল্প রয়েছে, তার কতগুলি চলা প্রয়োজন, কতগুলি বন্ধ করে দেওয়া উচিত এবং কতগুলি রাজ্যের হাতে সরাসরি তুলে দেওয়া উচিত।