বেঙ্গল শ্রীরাম প্রকল্পের লভ্যাংশের দাবি ছাড়ল গাড়ি সংস্থা

রাজ্যের সঙ্গে রফা হিন্দমোটরের

বেঙ্গল শ্রীরাম-কে উত্তরপাড়া কারখানার উদ্বৃত্ত জমি বেচে পাওয়া বাড়তি অর্থ নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে বিরোধ বেধেছিল হিন্দুস্তান মোটরসের। আপাতত সেই বিরোধ মিটেছে। বেঙ্গল শ্রীরামের প্রকল্পের লভ্যাংশের যে-অংশ লোকসানে চলা গাড়ি সংস্থাটির প্রাপ্য, রাজ্যের বকেয়া মেটাতে সেই অর্থের দাবি ছেড়ে দিচ্ছে হিন্দমোটরস। সেই বাবদ বেঙ্গল শ্রীরাম ১৯৪.৪৭ কোটি টাকা রাজ্যকে সরাসরি দিয়ে দেবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০২:০৪
Share:

বেঙ্গল শ্রীরাম-কে উত্তরপাড়া কারখানার উদ্বৃত্ত জমি বেচে পাওয়া বাড়তি অর্থ নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে বিরোধ বেধেছিল হিন্দুস্তান মোটরসের। আপাতত সেই বিরোধ মিটেছে। বেঙ্গল শ্রীরামের প্রকল্পের লভ্যাংশের যে-অংশ লোকসানে চলা গাড়ি সংস্থাটির প্রাপ্য, রাজ্যের বকেয়া মেটাতে সেই অর্থের দাবি ছেড়ে দিচ্ছে হিন্দমোটরস। সেই বাবদ বেঙ্গল শ্রীরাম ১৯৪.৪৭ কোটি টাকা রাজ্যকে সরাসরি দিয়ে দেবে।

Advertisement

সংস্থার আর্থিক হাল ফেরাতে বাম আমলে ৩১৪ একর জমি বিক্রির আর্জি জানিয়েছিল হিন্দুস্তান মোটরস। তাদের বক্তব্য ছিল, পুনরুজ্জীবন প্রকল্পের জন্য ৮৫ কোটি টাকা প্রয়োজন। এবং তা জমি বিক্রি করেই আসবে। তাতে সম্মতি দেয় বাম সরকার। তবে রাজ্যের শর্ত ছিল জমি বেচে শুধু ওই অঙ্কের টাকাই তুলতে পারবে সংস্থা।

কিন্তু বাস্তবে বেঙ্গালুরুর সংস্থা শ্রীরাম প্রপার্টিজ-কে জমি বিক্রি করে ২৮৫ কোটি টাকা পায় তারা। ওই জমিতে বেঙ্গল শ্রীরাম হাইটেক সিটি সংস্থার তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক, আবাসন ও অন্যান্য সামাজিক পরিকাঠামো গড়ার কথা ছিল। গোল বাধে বাড়তি ২০০ কোটি নিয়েই। রাজ্য ওই বাড়তি অর্থ দাবি করে। পরে হিন্দমোটর নীতিগত ভাবে টাকা ফেরতের কথা মেনে নিলেও বেহাল আর্থিক দশার কারণে তা মেটাতে অপারগ বলে জানায়।

Advertisement

এ দিকে, এই বাড়তি অর্থ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে পড়ে জটে জড়িয়ে যায় বেঙ্গল শ্রীরামের প্রকল্পও। কাজ শুরু না-হওয়ায় হাতছাড়া হয় তাদের তথ্যপ্রযুক্তি পার্কের বিশেষ আর্থিক অঞ্চল (সেজ) তকমা। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্পের জন্য আমেরিকার দুই সংস্থার সঙ্গেও গাঁটছড়া বেঁধেছিল বেঙ্গালুরুর সংস্থাটি। কিন্তু প্রকল্পটি নিয়ে টানাপড়েনে মার্কিন দুই সংস্থা পরে প্রকল্পটি ছেড়ে বেরিয়ে যায়।

বেঙ্গল শ্রীরামের সঙ্গে হিন্দুস্তান মোটরসের যে-চুক্তি হয়, তাতে বলা হয়েছিল, ২০০৭ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর আবাসন ব্যবসায় নামতে পারবে না গাড়ি সংস্থাটি। সেই শর্ত মানলে জমি বিক্রি ছাড়াও বেঙ্গল শ্রীরামের প্রকল্পের লভ্যাংশ থেকে ৪% অর্থ পাবে তারা। জমি বিক্রির অর্থ নিয়ে দ্বন্দ্ব মেটাতে বছর দু’য়েক আগে রাজ্য সরকার, বেঙ্গল শ্রীরাম ও হিন্দুস্তান মোটরস একটি রফাসূত্র তৈরি করেছিল। সেখানে বকেয়া মেটানো নিয়ে সমঝোতায় আসতে ওই ৪% অর্থকেই ভিত্তি ধরা হয়।

হিন্দুস্তান মোটরস বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়েছে, ওই ৪% অর্থ থেকেই মেটানো হবে রাজ্যের বকেয়া ১৯৪.৪৭ কোটি টাকা। এবং বেঙ্গল শ্রীরাম সরাসরি রাজ্য সরকারকে তা দেবে। কী পদ্ধতিতে সেই অর্থ দেওয়া হবে, তা ঠিক করবে রাজ্য। এ ব্যাপারে এ দিন উত্তরপাড়া কারখানার কর্তা মলয় চোধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

রফাসূত্র বার হওয়ায় আটকে থাকা বেঙ্গল শ্রীরামের প্রকল্প শুরুর সম্ভাবনা উজ্জ্বল হল। প্রকল্পের যে-সব ছাড়পত্র বাকি, সেগুলি নেওয়ার কাজ ফের শুরু হবে বলে খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। তবে কবে থেকে কাজ শুরু হবে, তা জানা যায়নি।

তবে রফাসূত্রের মাধ্যমে জমি ও রাজ্যের বকেয়া প্রাপ্যের বিতর্ক মিটলেও হিন্দমোটরের পুনরুজ্জীবনের বিষয়টি অবশ্য স্পষ্ট নয়। সংস্থাটি আগেই জানিয়েছে, সম্ভাব্য লগ্নিকারীর সঙ্গে জোট বাঁধার বিষয়টি তারা সক্রিয় ভাবে খতিয়ে দেখছে। এমন সংস্থার খোঁজ চলছে, যারা সংস্থায় টাকা ঢালতে পারবে বা বাজারে নতুন মডেলের গাড়ি আনতে পারবে।

এ দিকে, হিন্দমোটরের পুঞ্জীভূত লোকসান নিট সম্পদের চেয়ে বেশি হওয়ায় রুগ্ণতার তকমা পেতে সংস্থাটি বিআইএফআর-এ গিয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর সেখানে প্রথম শুনানি কার্যত ভেস্তে যায়। এ সংক্রান্ত কোনও কাগজপত্র কর্মী ইউনিয়ন, ব্যাঙ্ক-সহ অপর পক্ষ না-পাওয়ায় ওই দিন শুনানি হয়নি। পরবর্তী শুনানি আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন