নতুন সরকারের বাজেট পেশ হয়েছে এবং পাশও হয়ে গিয়েছে সংসদের উভয় কক্ষে। ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে কর সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য আমাদের জানাও হয়ে গিয়েছে। এই বাজেটের পরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের উপর কর ব্যবস্থা কেমন দাঁড়াল, সেটাই আমরা আজ দেখে নেব এক নজরে।
মিউচুয়াল ফান্ড:
• ইক্যুইটি-নির্ভর মিউচুয়াল ইউনিট ১২ মাসের বেশি সময় ধরে রেখে বিক্রি করে কোনও লাভ হলে তার উপর কোনও কর ধার্য হবে না। ১২ মাসের আগে বিক্রি করে লাভ হলে স্বল্পকালীন মূলধনী লাভ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তার উপর কর ধার্য হবে ১৫ শতাংশ।
• ঋণ নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে এ বারের বাজেটে। নতুন নিয়ম চালু হয়েছে বাজেট পেশের পরদিন অর্থাৎ ১১ জুলাই থেকে। অর্থাৎ ১০ জুলাই পর্যন্ত চালু ছিল আগের নিয়ম। আগে ১২ মাস ধরে রাখার পরে বিক্রি করে কোনও লাভ হলে তা দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভ হিসেবে গণ্য হত এবং পাওয়া যেত মূল্যবৃদ্ধি-সূচক (কস্ট ইনফ্লেশন ইনডেক্স) প্রয়োগের সুবিধা। এই সূচক প্রয়োগ করলে কর ধার্য হত ২০ শতাংশ হারে এবং প্রয়োগ না- করা হলে ১০ শতাংশ হারে। এ বার যে-পরিবর্তন আনা হয়েছে, তাতে বলা আছে, দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভে করছাড়ের সুবিধা পেতে হলে ১২ মাসের জায়গায় ইউনিট ধরে রাখতে হবে ৩৬ মাসের বেশি সময়। তবেই মিলবে দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভের উপর করের সুবিধা। এর কম সময় ধরে রেখে বিক্রি করে লাভ হলে কর দিতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করের হার অনুযায়ী। ফলে ধাক্কা খাবে ছোট মেয়াদের প্রকল্পগুলি।
• ইক্যুইটি নির্ভর প্রকল্প থেকে কোনও ডিভিডেন্ড পেলে তা প্রাপকের হাতে থাকবে পুরোপুরি করমুক্ত। কর দিতে হবে না সংশ্লিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ডকেও। প্রাপককে কর দিতে হয় না ঋণ নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রেও। তবে ঋণ নির্ভর প্রকল্পের বণ্টিত আয়ের উপর কর ধার্য হয় সব মিলিয়ে ২৮.৩৩ শতাংশ। এর ফলে কমে যায় আয় বণ্টনের পরিমাণ। ডেট ফান্ড, লিক্যুইড ফান্ড, ইনকাম ফান্ড ইত্যাদি প্রকল্প এই করের আওতায় পড়ে।
শেয়ার:
বাজারে নথিবদ্ধ কোনও শেয়ার ১২ মাসের বেশি সময় ধরে রেখে বিক্রি করে লাভ হলে তার উপর কোনও কর ধার্য হয় না। এর আগে বিক্রি করে লাভ হলে কর দিতে হবে ১৫% হারে।
বন্ড:
বন্ড এবং অ-রূপান্তরযোগ্য ডিবেঞ্চারের উপর প্রাপ্য সুদ ব্যাঙ্ক ফিক্সড ডিপোজিটের মতোই প্রযোজ্য হারে কর ধার্য হয়। এই সুদ থেকে উৎসমূলে কোনও কর কাটা (টিডিএস) হয় না, যদি সেই বন্ড বা এনসিডি শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ থাকে এবং তা রাখা হয় ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে। করমুক্ত বন্ডের সুদে কোনও কর ধার্য হয় না।
ফিক্সড ডিপোজিট:
মেয়াদি জমার উপর প্রাপ্য সুদের উপর কর ধার্য হয় প্রাপকের করের স্তর অনুযায়ী। ব্যাঙ্ক থেকে প্রাপ্ত সুদ বছরে ১০,০০০ টাকার বেশি হলে তা থেকে উৎসমূলে ১০ শতাংশ হারে সুদ কাটা হয় (‘প্যান’ দাখিল করা থাকলে)। অন্যথায় কাটা হবে ২০ শতাংশ হারে। কোম্পানি ডিপোজিটের ক্ষেত্রে কর কাটা হয় বার্ষিক সুদ ৫,০০০ টাকার বেশি হলে। যাঁদের করযোগ্য আয় নেই, তাঁরা ফর্ম ১৫ জি (বয়স ৬০ বছরের কম হলে) অথবা ফর্ম ১৫ এইচ (বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি হলে) সময় মতো দাখিল করলে উৎসমূলে কর কাটা হয় না।
অন্যান্য:
• পিপিএফ অ্যাকাউন্টে প্রাপ্য সুদ পুরোপুরি করমুক্ত। এই অ্যাকাউন্টে সর্বাধিক বাৎসরিক জমার পরিমাণ ২০১৪-’১৫ আর্থিক বছর থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১.৫ লক্ষ টাকা।
• উৎসমূলে ১০ শতাংশ কর কেটে নেওয়া মানে আপনার ‘দায়’ মিটে গেল। আপনি যদি ২০ অথবা ৩০ শতাংশ করের আওতায় পড়েন, তবে বাকি কর আপনাকে আলাদা করে জমা করতে হবে।
• সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে বছরে প্রাপ্ত মোট সুদ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত থাকে। সুদ এর বেশি হলে তা যোগ হয় অন্যান্য সূত্রের আয় থেকে।