নেট ব্যবহারে উৎসাহী মুখ্যমন্ত্রীর কথা মাথায় রেখে গত বছরেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল সফটওয়্যার। লক্ষ্য ছিল রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের তথ্য হাতের মুঠোয় রাখা। এক বছর হতে চললেও এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে কোনও সবুজ সঙ্কেত পাওয়া যায়নি। ফলে তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের প্রশাসনিক ক্যালেন্ডার থেকেই এই ‘প্রজেক্ট মনিটরিং সিস্টেম’ (পিএমএস) বাদ দিয়ে দেওয়া হবে বলে সরকারি সূত্রের খবর। সংশ্লিষ্ট সূত্রের অভিযোগ, লাল ফিতের ফাঁসেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে পৌঁছয়নি এই সফটওয়্যার।
প্রজেক্ট মনিটরিং সিস্টেম বা পি এম এস-এর নামেই বোঝা যাচ্ছে এর কার্যকারিতা। মূলত উচ্চ পর্যায়ের নজরদারির জন্যই তৈরি হয় এই প্রযুক্তি। এক নজরে একগুচ্ছ প্রকল্পের হাল দেখে নিয়ে সেগুলির বর্তমান পরিস্থিতি জানিয়ে দিতে পারে পি এম এস। প্রকল্পের হাল বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে তিনটি রং। লাল, হলুদ ও সবুজ। ঝুঁকির পরিমাণ বুঝে নির্দিষ্ট রঙে চিহ্নিত করা হবে বিভিন্ন প্রকল্প। যে-প্রকল্পের জন্য দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, তার রং হবে লাল। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তার পরে আসবে হলুদ চিহ্নিত প্রকল্প। সবুজ প্রকল্প পরিকল্পনা মতোই চলছে।
কর্পোরেট মহলের সংজ্ঞায় এ ধরনের নজরদারি ব্যবস্থাকে বলা হয় ড্যাশবোর্ড রিপোর্টিং। প্রকল্পের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দ্রুত পদক্ষেপ করতেই এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি। সর্বোচ্চ স্তরে এই নজরদারির জন্য নিয়মিত তথ্য জোগাতে হয় প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত দফতরকে। ফাইল চালাচালি নয়। শুধু মাত্র মাউসে ক্লিক করেই জেনে নেওয়া যায় কোন প্রকল্প ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে।
শিল্পমহলের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বৈঠকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “ডু ইট ইমিডিয়েটলি।” চটজলদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে প্রযুক্তিকে মিলিয়ে দিতেই এই সফটওয়্যার তৈরি করা হয় বলে দাবি স্টেট ই-গভর্ন্যান্স মিশন টিমের। মুখ্যমন্ত্রী নিয়মিত টুইট পড়েন। ফেসবুকে অ্যাকাউন্টও রয়েছে। দলীয় প্রচারের কাজেও তিনি ব্যবহার করেছেন হটমেল-এর নির্মাতা সাবির ভাটিয়ার দক্ষতা। তবুও সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, আমলাতন্ত্রের জালেই এ হেন নেট-স্যাভি মুখ্যমন্ত্রীর টেবিলে পৌঁছয়নি এই সফটওয়্যার।
কিছুটা এই সফটওয়্যারের ধাঁচেই অবশ্য ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্পগুলির অনলাইন নজরদারি শুরু হয়েছে বছর দুয়েক আগে। কেন্দ্রের ‘মিশন মোড প্রজেক্টস’-এর কাজের খতিয়ান দিতেই তৈরি হয়েছে বিশেষ পোর্টাল। ভূমি ও ভূমি সংস্কার, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পঞ্চায়েত ও অর্থ দফতরের বিভিন্ন ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্প কেন্দ্রের টাকায় চলছে। ত্রৈমাসিক রিপোর্ট ছাড়াও মাঝে মধ্যেই সেই কাজের হিসেব চেয়ে পাঠাচ্ছে কেন্দ্র। সেই খতিয়ান দিতে চালু হয়েছে এই নজরদারি।