অবশেষে সঙ্কট কাটার আশা স্পাইসজেটে। সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত, আগামী কালই কেন্দ্রের কাছে ২০ কোটি ডলারের (১২০০ কোটি টাকা) পুনরুজ্জীবন প্রকল্প পেশ করছে সংস্থা।
ওই সূত্র জানিয়েছে, স্পাইসজেটকে বাঁচাতে মার্কিন ব্যাঙ্কিং ও আর্থিক পরিষেবা সংস্থা জেপি মরগ্যান চেজ-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে সেখানে এই টাকা ঢালার প্রস্তাব দিয়েছেন অজয় সিংহ। যিনি ২০০৫ সালে স্পাইস প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও ২০১০-এ তাঁর কাছ থেকে মালিকানা কিনে নেয় কলানিধি মারানের সান গোষ্ঠী। তারা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে স্পাইসকে চাঙ্গা করতে গোষ্ঠীর তরফে বিপুল পরিমাণ লগ্নির ঝাঁপি নিয়ে এগিয়ে আসা এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। হাতে নেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সংস্থায় তাদের লোকসানের অঙ্ক ৪০ কোটি ডলার বা ২৪০০ কোটি টাকা।
ওই ১২০০ কোটি টাকা দিয়ে জেপি মরগ্যান চেজ ও অজয় সিংহ সস্তার বিমান পরিষেবা সংস্থা স্পাইসজেটের সিংহভাগ মালিকানা মারানের হাত থেকে কিনে নিতে চান এক মাসের মধ্যেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, ঘোরতর আর্থিক সঙ্কটে পড়া সংস্থাটির উড়ান যাতে আর থমকে না-যায়, সেই লক্ষ্যেই তড়িঘড়ি অক্সিজেন জোগাতে উঠেপড়ে লেগেছেন সম্ভাব্য লগ্নিকারীরা। যে-কারণে বেসরকারি ইক্যুইটি সংস্থা ইন্ডিগো পার্টনার্স এবং টিপিজি ক্যাপিটাল-এর সঙ্গেও কথা বলেছেন সিংহ।
কেন্দ্রও ইতিমধ্যেই স্পাইসকে বাঁচাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। ইউপিএ সরকারের আমলে কিংফিশার এয়ারলাইন্স বন্ধ হওয়ার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েই স্পাইসকে বাঁচাতে চায় তারা। কারণ, কিংফিশার বন্ধের জেরে কাজ হারাতে হয়েছিল বহু কর্মীকে, বিক্ষোভও দানা বাঁধে শিল্পমহলে। বিমান মন্ত্রকের কাছে শুক্রবার স্পাইসের পুনরুজ্জীবন প্রকল্প জমা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে বিমানমন্ত্রী অশোক গজপতি রাজু বলেন, “স্পাইসজেট চালু রাখার ব্যাপারে যথাসম্ভব সহযোগিতা করছি। কিন্তু সমস্যাটি যেহেতু সংস্থার নিজস্ব, তাই টিকে থাকতে গেলে তাদেরই উদ্যোগী হয়ে হিসাবের খাতা থেকে ক্ষতি মুছে ফেলতে হবে।” প্রসঙ্গত, স্পাইসজেটের লগ্নিকারীরা ইতিমধ্যেই সংস্থায় ১৭ কোটি টাকা জুগিয়েছেন। এর ভিত্তিতে তেল সংস্থাগুলির বকেয়া মিটিয়েছে তারা। ফলে ফের সময়সূচি মেনে আকাশে ডানা মেলছে সংস্থার উড়ান। বিমান মন্ত্রকের সূত্র বলেছে, গত ২৪ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশি-বিদেশি পাওনাদারদের কাছে স্পাইসের বকেয়া এক লাফে ৯৯০ কোটি থেকে বেড়ে ছুঁয়েছিল ১২৩০ কোটি টাকা। বিমানের লিজদাতা-সহ বিদেশি সংস্থাগুলিরই প্রাপ্য ৬২৪ কোটি থেকে বেড়ে হয় ৭৪২ কোটি।
পুনরুজ্জীবন প্রকল্প নিয়ে আশার আলো দেখা গেলেও বিমানমন্ত্রী অবশ্য সাফ জানিয়েছেন কেন্দ্র স্পাইসজেটের আর্থিক দায় নেবে না। তাঁর কথায়, “সরকার কেন বিমান সংস্থার দায়িত্ব নেবে? আমরা শুধু চাই বিভিন্ন সংস্থার হাত ধরে বেশি প্রতিযোগিতা, বাড়তি উড়ান ও সর্বোপরি বিভিন্ন প্রান্তের মধ্যে আরও বেশি বিমান সংযোগ।”
ভাড়া ২০ হাজারে বাঁধার ইঙ্গিত। বিমান সংস্থাগুলি যাতে যাত্রীদের থেকে অত্যধিক ভাড়া দাবি করতে না-পারে, তার জন্য ইকনমি শ্রেণির সর্বোচ্চ ভাড়া ২০ হাজার টাকায় বেঁধে দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে কেন্দ্র। বিমান মন্ত্রক এক বিবৃতিতে এই ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে স্পষ্ট কিছু ঘোষণা করেনি। সম্প্রতি স্পাইসজেটের উড়ান বসে যাওয়ায় অন্য সংস্থাগুলি ভাড়া লাগামছাড়া বাড়িয়ে দেয়। ভুগতে হয় যাত্রীদের। যাত্রা বাতিল করতেও বাধ্য হন অনেকে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই ভাড়া বেঁধে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। পাশাপাশি, বিপুল ছাড়ে টিকিট বিক্রির উপরও কিছুটা বিধিনিষেধ আনার পক্ষপাতী তারা। প্রসঙ্গত, এ ধরনের ছাড় স্পাইসের লোকসানের অন্যতম কারণ। কেন্দ্রের আশঙ্কা, এ ব্যাপারে কড়াকড়ি না-আনলে ছাড় নিয়ে একে অপরের সঙ্গে লড়াইয়ের জেরে দেশের বেশ কিছু সংস্থা গুটিয়ে যেতে পারে।