বাতিল করতে হবে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প

সঞ্চয়ের খতিয়ান নিন কমপক্ষে প্রতি ছ’মাসে

বড়ই পরিবর্তনশীল আমাদের এই জগৎ। অনেক কিছুই নিয়মমাফিক ঘটে না। পাল্টে যায় রাতারাতি। একই ছবি আর্থিক দুনিয়াতেও। পরিবর্তন সেখানেও ঘটে যায় অত্যন্ত দ্রুত। অহরহ উঠছে-পড়ছে শেয়ার দর, সুদের হার, সোনা, সম্পত্তি এবং ডলারের দাম। নিজেদের দেশের নানা রকম ঘটনা ছাড়াও আমাদের অর্থনীতির উপর বিদেশি প্রভাব এখন খুবই প্রকট।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৫ ০১:৩৩
Share:

বড়ই পরিবর্তনশীল আমাদের এই জগৎ। অনেক কিছুই নিয়মমাফিক ঘটে না। পাল্টে যায় রাতারাতি। একই ছবি আর্থিক দুনিয়াতেও। পরিবর্তন সেখানেও ঘটে যায় অত্যন্ত দ্রুত। অহরহ উঠছে-পড়ছে শেয়ার দর, সুদের হার, সোনা, সম্পত্তি এবং ডলারের দাম। নিজেদের দেশের নানা রকম ঘটনা ছাড়াও আমাদের অর্থনীতির উপর বিদেশি প্রভাব এখন খুবই প্রকট। ফলে আজ যা সত্য, কাল তা আর নাও হতে পারে। আজ যা ভাল, কাল তা ততটা ভাল না-ও লাগতে পারে। অর্থাৎ অর্থের দুনিয়াতে কোনও কিছুই স্থিতিশীল নয়।

Advertisement

এই কারণে খুবই প্রয়োজন মাঝেমধ্যে নিজের সঞ্চয়, বিমা এবং বিনিয়োগের পর্যালোচনা। যেমন ঘর-বাড়ি অপরিচ্ছন্ন হয়ে গেলে গোছগাছ করার দরকার পড়ে, অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাতিল করতে হয়, তেমন একই কাজ করা জরুরি নিজের সঞ্চয় ও বিনিয়োগের ব্যাপারেও। তিন থেকে ছ’মাস অন্তর এই কাজটি করতে পারলে নিঃসন্দেহে আপনার লগ্নির উৎকর্ষ বাড়বে।

হিসেব-নিকেশ করে দেখে নিতে হবে, আপনার যা প্রাপ্য তা পাচ্ছেন কি না। যে-লগ্নি বাজারের তুলনায় কম গতিতে বাড়ছে, তা অন্য কোথাও সরিয়ে নিতে হবে কি না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই বিষয়ে বিনিয়োগ-পরামর্শদাতাদের সাহায্য নেওয়া লাভজনক হতে পারে। আজ আমরা একনজরে দেখে নেব, অন্ততপক্ষে ছ’মাস অন্তর সঞ্চয় এবং লগ্নি পর্যালোচনা করার সময়ে ঠিক কোন কোন বিষয়ের উপর নজর রাখা উচিত।

Advertisement

১) যদি ব্যাঙ্ক, ডাকঘর এবং মিউচুয়াল ফান্ডে অতীতে কোনও মেয়াদি জমা করে থাকেন, তবে তার মেয়াদ শেষ হয়েছে কি না দেখতে হবে। সেটা হয়ে থাকলে জমা টাকা তুলে নেওয়া অথবা রিনিউ করার ব্যবস্থা করুন অবিলম্বে।

২) দেখে নিন শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডে ঘোষিত ডিভিডেন্ড আপনার অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে কি না। না-পড়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখুন বা ই-মেল করুন।

৩) সেভিংস অ্যাকাউন্টে বেশি টাকা জমে উঠলে, কিছু টাকা রেখে বাকিটা মেয়াদি জমা অথবা বেশি আয়যুক্ত প্রকল্পে লগ্নি করুন।

৪) ব্যাঙ্ক এবং মিউচুয়াল ফান্ডে প্রয়োজন অনুযায়ী কে ওয়াই সি নবীকরণ করুন। মিউচুয়াল ফান্ডগুলি এখন নতুন করে কে ওয়াই সি চাইছে। আগের ছ’মাসে কোনও লেনদেন না-হয়ে থাকলে শেয়ার ট্রেডিং অ্যাকাউন্টেও নতুন করে কে ওয়াই সি জমা করুন।

৫) চেক বইয়ের পাতা ফুরিয়ে এলে আবেদন করে নতুন একটি বই আনিয়ে নিন।

৬) খুব ভাল করে দেখে নিন জীবনবিমা এবং স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম দেওয়ার সময় হয়েছে কি না। এটা অত্যন্ত জরুরি ব্যাপার। মনে রাখবেন, স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম সময়ের মধ্যে জমা না-করলে পলিসি বাতিল হয়ে যেতে পারে। নষ্ট হতে পারে অর্থ।

৭) যে-সব মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্পে আপনার লগ্নি করা আছে, দেখে নিন গত ১/৩ বছরে সেখানে কেমন আয় অথবা বৃদ্ধি হয়েছে। বাজারে চালু রিটার্নের তুলনায় কম হয়ে থাকলে লগ্নি ভাল প্রকল্পে সরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবুন। একই কথা প্রযোজ্য শেয়ারের ক্ষেত্রেও।

৮) ব্যাঙ্ক লকারের বার্ষিক ফি জমা করা না-হয়ে থাকলে অবিলম্বে তা করে ফেলুন।

৯) কর সাশ্রয়ের জন্য প্রয়োজন মতো লগ্নি করা না-হয়ে থাকলে এখনই তা শুরু করুন। গোটা বিষয়টি সম্পন্ন করুন মার্চের মধ্যে।

১০) আয়কর দফতরের ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজের ২৬এএস ফর্মে কেটে নেওয়া করের (টিডিএস) তথ্য দেখে নিন। নিশ্চিত করুন এর প্রতিফলন যেন আপনার আয়কর রিটার্নে থাকে।

১১) কোনও ক্ষেত্রে কর কম কাটা হলে অবশিষ্ট কর নিজে জমা করুন।

১২) আগের ছ’মাসে নতুন নতুন যতগুলি লগ্নি করেছেন ও পুরনো লগ্নি ভাঙিয়েছেন, তা নথিবদ্ধ করুন আপনার সঞ্চয়ের তথ্য রাখার ডায়েরিতে।

১৩) একক নামে কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট অথবা প্রকল্পে টাকা বিনিয়োগ করা হয়ে থাকলে তাতে দ্বিতীয় ব্যক্তির নাম সংযোজন করুন। সম্ভব না-হলে নমিনির নাম নথিবদ্ধ করুন।

১৪) বয়স যদি ৬০ বছর পূর্ণ হয়ে গিয়ে থাকে, তবে অবশ্যই দেখে নিন, প্রযোজ্য বিভিন্ন প্রকল্পে প্রবীণ নাগরিকের প্রাপ্য সুবিধা আপনি পাচ্ছেন কি না। না-পেলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন