ধার কমাতে শেয়ার ছাড়বেন মিত্তল • ন্যূনতম আমদানি মূল্য ভারতে

সস্তার চিনা পণ্যে বিশ্ব জুড়ে বিপাকে ইস্পাত শিল্প

তেল যেমন, ইস্পাতও খানিকটা তেমনই। বিশ্ব বাজারে তেলের মতো ইস্পাতের চাহিদাও তলানিতে। অথচ উপচে পড়ছে জোগান। ফলে গত দু’বছরে দু’য়েরই দাম নেমেছে হুড়মুড়িয়ে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ব্রাসেলস ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:৫২
Share:

তেল যেমন, ইস্পাতও খানিকটা তেমনই।

Advertisement

বিশ্ব বাজারে তেলের মতো ইস্পাতের চাহিদাও তলানিতে। অথচ উপচে পড়ছে জোগান। ফলে গত দু’বছরে দু’য়েরই দাম নেমেছে হুড়মুড়িয়ে। এই পরিস্থিতিতেও বিভিন্ন দেশ উৎপাদন ছাঁটাইয়ে রাজি না-হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে তল পাচ্ছে না অশোধিত তেলের দাম। আবার তেমনই সারা দুনিয়ার ইস্পাত-বাজার ছেয়ে গিয়েছে চিনা সংস্থাগুলির সস্তা পণ্যে। ফলে ঘাড়ে চেপে থাকা ধারের বিপুল বোঝা কমাতে খাবি খাচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম ইস্পাত নির্মাতা আর্সেলর-মিত্তলও। এ জন্য নতুন করে ৩০০ কোটি ডলারের শেয়ার ছাড়ার পরিকল্পনা করছে তারা। অবিলম্বে উৎপাদন কমাতে চিনের কাছে আর্জি জানিয়েছে ইউরোপ। আর দেশীয় সংস্থাগুলিকে কিছুটা স্বস্তি দিতে শুক্রবারই ইস্পাত পণ্য আমদানির ন্যূনতম মূল্য বেঁধে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে নয়াদিল্লি।

বিশ্ব জুড়ে বাজারের এমন বেহাল দশায় মুশকিলে পড়েছে ভারতের ইস্পাত সংস্থাগুলিও। এই অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ২,১২৭.২৩ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে টাটা স্টিলের। অবস্থা বেগতিক বুঝে নতুন কারখানা গড়ার পরিকল্পনাও আপাতত মুলতুবি রাখছে টাটা স্টিল-সহ বিভিন্ন সংস্থা। চিন থেকে আসা ইস্পাত পণ্যের সঙ্গে দামের লড়াইয়ে যুঝে উঠতে খাবি খাচ্ছে প্রায় সকলে। অনেকেরই অভিযোগ, চিনে চাহিদায় ভাটার কারণে উৎপাদন খরচের থেকেও কমে বিশ্বের সর্বত্র ইস্পাত পণ্য রফতানি করছে সে দেশের সংস্থাগুলি।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে ১৭৩টি ইস্পাত পণ্যের ন্যূনতম আমদানি মূল্য বেঁধে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। জানিয়েছে, তাদের দাম প্রতি টনে অন্তত ৩৪১ থেকে ৭৫২ ডলার হলে, তবে তা বাইরে থেকে এনে বিক্রি করা যাবে ভারতের বাজারে। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে ইস্পাত সংস্থাগুলি। উৎপাদন খরচের থেকেও কম দামে পণ্য বিক্রির (ডাম্পিং) জন্য চিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তাদের দাবি, আগের বছরে অত্যন্ত কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে ইস্পাত শিল্প। এ বছরেও বাজার সে ভাবে চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই কেন্দ্রের এই ঘোষণা কিছুটা স্বস্তি জোগাবে।

বিশ্বে ইস্পাত শিল্পের দশা কতটা বেহাল, তার জ্বলন্ত উদাহরণ আর্সেলর-মিত্তল। অনাবাসী ভারতীয় লক্ষ্মী মিত্তলের এই সংস্থা বিশ্বের বৃহত্তম ইস্পাত নির্মাতা। উৎপাদন ক্ষমতার বিচারে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রায় দ্বিগুণ। পৃথিবীর মোট ইস্পাতের ৬% একাই তৈরি করে তারা। ২০১৫ সালে এ হেন আর্সেলর-মিত্তলের পুঞ্জীভূত লোকসান হয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি ডলার। এক বছরে শেয়ারের দর কমেছে ৬০%। ঘাড়ে চেপে বিপুল দেনার বোঝাও।

অবস্থা এতটাই সঙ্গিন যে, এই মুহূর্তে বিক্রি বা মুনাফা বাড়িয়ে ধার কমানোর রাস্তা সে ভাবে দেখতে পাচ্ছে না আর্সেলর-মিত্তল। তাই দেনা কমাতে ৩০০ কোটি ডলারের নতুন শেয়ার ছাড়তে চায় তারা। সেই সঙ্গে স্পেনের গাড়ি-যন্ত্রাংশ নির্মাতা গেস্তাম্প-এ নিজেদের ১০০ কোটি ডলারের অংশীদারিও বেচে দিচ্ছে সংস্থা।

লক্ষ্মী মিত্তল স্পষ্ট জানাচ্ছেন, আমেরিকা ও ইউরোপের বাজারে ইস্পাতের চাহিদা আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু চিন নিজদেদের ও বিশ্ব বাজারের চাহিদার তুলনায় ঢের বেশি ইস্পাত উৎপাদন করছে। সারা পৃথিবীতে জলের দরে তা বিক্রিও করছে চিনা সংস্থাগুলি। তাই দাম ক্রমাগত কমছে। নেমে এসেছে ১২ বছরের সবচেয়ে নীচে। ফলে কঠিন হচ্ছে মুনাফার মুখ দেখা।

২০০৮ সালের বেজিং অলিম্পিকের আগে চিন জুড়ে ঢেলে সাজা হয় পরিকাঠামো। আকাশ ছোঁয় ইস্পাতের চাহিদা। দামও বেড়েছিল তাল মিলিয়ে। কিন্তু অলিম্পিকের পরে সেই চাহিদা আর ফেরেনি। প্রথমে বিশ্ব জোড়া মন্দার প্রভাব। তারপরে এখন চিনা অর্থনীতির ঝিমিয়ে পড়া— এই লাগাতার আক্রমণে ধুঁকছে ইস্পাত সংস্থাগুলি। তার উপর বিশ্বের অর্ধেক ইস্পাতই তৈরি হয় চিনে। ফলে নিজেদের বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন সস্তায় তা সর্বত্র রফতানি করছে তারা। ২০১৫ সালেই তার পরিমাণ ছিল ১১.২ কোটি টন।

সেই কারণেই ইস্পাতের বাজারের হাল ফেরাতে উৎপাদন ছাঁটাইয়ের জন্য চিনকে অনুরোধ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। চিনও সম্প্রতি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেড় কোটি টন উৎপাদন কমানোর। কিন্তু বাজারে চাহিদা-জোগানের যা বিশাল ফারাক, তাতে ওইটুকু উৎপাদন কমানোয় চিঁড়ে কতটা ভিজবে, তা নিয়ে সন্দিহান সকলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন