বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতার ত্রিসীমানায় নেই ভারত। কিন্তু তা নিয়ে বিপুল উন্মাদনাকে পুঁজি করে মোবাইলে ইন্টারনেট পরিষেবার ব্যবসা বাড়ানোর দৌড়ে সামিল এ দেশের টেলিকম শিল্প।
মেসি-রোনাল্ডো-নেইমারদের নিয়ে আগ্রহের অন্ত নেই ১২৪ কোটি ভারতীয়ের একটা বড় অংশের। এই উন্মাদনাকে মোবাইলের মাধ্যমে হাতের মুঠোয় পৌঁছে দিতে তাই হরেক মাসুলের পসরা নিয়ে বাজারে নেমেছে তারা। বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে দৌড়ে পাল্লা দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিএসএনএল-ও। মোবাইলে কথা বলা বা এসএমএসের মতো পরিষেবা থেকে আয় বৃদ্ধি ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। ফলে সংস্থাগুলি ঝুঁকছে নেট পরিষেবার পরিধি বাড়ানোর দিকেই।
বিশ্বকাপ ফুটবল বা ক্রিকেটের মরসুমে এসএমএস-সহ বিভিন্ন ভাবে খেলার টুকরো-টাকরা ঘটনা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার রেওয়াজ আগেই ছিল। এ বারও তা চলছে। তবে বছর কয়েক আগে সেই সব ‘আপডেট’-এর কদর ছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, দু’টি কারণে মোবাইলে ইন্টারনেট পরিষেবা তখনও ততটা জনপ্রিয় হয়নি। প্রথমত, স্মার্টফোন সহজলভ্য ছিল না। দ্বিতীয়ত, মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের অভ্যাসও এখনকার মতো ছড়ায়নি।
কিন্তু দিন বদলেছে। দেশের বাজারে কম দামি স্মার্টফোনের জোগান বেড়েছে। বিশেষ করে যুবক-যুবতীদের হাতে হাতে এখন স্মার্টফোন। তাকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেটের ব্যবহারও চড়চড় করে বাড়ছে। তাতে বাড়তি ইন্ধন জুগিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া-র নিত্য নতুন মাধ্যম।
ইন্টারনেট অ্যান্ড মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার তথ্য বলছে, ২০১৩-র জুনে ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১৯ কোটি। অক্টোবরে তা হয় ২০.৫ কোটি। তাঁদের মধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।
এয়ারটেল জানিয়েছে, গত দুই অর্থবর্ষের হিসেবে, তাদের গ্রাহক পিছু নেটের ব্যবহার বেড়েছে ২৭৭ এমবি বা প্রায় ৪৮%। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩৪%। আর এ থেকে তাদের আয় বেড়েছে প্রায় ৯৬%।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিএসএনএল-এর ক্যালকাটা টেলিফোন্স-এর দাবি, গত দু’বছরে জানুয়ারি-এপ্রিলের হিসেবে তাদের পরিষেবায় ইন্টারনেট ব্যবহারের বৃদ্ধি প্রায় ১০৫%। প্রিপেড গ্রাহকদের জন্য ক্যালকাটা টেলিফোন্স এনেছে ৭৮-১৫৫ টাকার বিশেষ ভাউচার।
বিশ্বকাপ ফুটবলের সময়ে ইন্টারনেট পরিষেবার চাহিদা আরও বাড়বে, দাবি টেলিকম শিল্পের। তাদের বক্তব্য, ইচ্ছে থাকলেও অনেকেই রাত জেগে খেলা দেখতে পারেন না। আর অফিস কাছারির ঠেলায় পরের দিন খেলার পুনঃপ্রচার দেখার সুযোগও হাতছাড়া হয়। কিন্তু স্মার্টফোনে ইচ্ছে মতো খেলার বিশেষ অংশ দেখার সুযোগ থাকে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, টিভি-র বদলে বড় মোবাইল ফোনের পর্দাতেই খেলা দেখার আগ্রহও ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে। দেখার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় খেলা নিয়ে চর্চার প্রবণতাও বাড়াচ্ছে নেটের ব্যবহার। এয়ারসেল-এর কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলের প্রধান সঞ্জীব গর্গের দাবি, শুধুমাত্র গত সপ্তাহেই নেট পরিষেবা থেকে সংস্থার আয় বেড়েছে প্রায় ১০%।
এয়ারসেল তাদের ইন্টারনেট পরিষেবার ‘প্ল্যান’ শুরু করেছে ৫ টাকা দিয়ে। রয়েছে তাদের ‘পকেট ইন্টারনেট ২৩’-এর মাসুল হার। বিশ্বকাপের বাজারে দ্রুতগতির থ্রিজি ইন্টারনেট পরিষেবা দিতে পিআই১৫৫ নামে আরও একটি প্রকল্প এনেছে তারা। অন্য দিকে, প্রিপেডে এয়ারটেলের বাজি ‘নাইট স্টোর’। তাদেরও দাবি, দ্রুতগতির টুজি ও থ্রিজি ইন্টারনেট পরিষেবা মিলবে।
বাঙালির ফুটবল প্রেমের কথা মাথায় রেখে থ্রিজি পরিষেবার উপর জোর দিচ্ছে ভোডাফোন। ৩০ দিনের জন্য ৬৫১ এবং ৮৫১ টাকার দুটি বিশেষ মাসুল হার চালু করেছে তারা।
পিছিয়ে নেই আর এক সংস্থা টাটা ডোকোমো-ও। প্রিপেডে গ্রাহকদের জন্য ৬৫-১৪৯ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের ভাউচার এনেছে তারা।