হঠাৎ সুদ কমায় স্বস্তি, পৌষ মাস এখন চলবে শেয়ার বাজারে

অবশেষে শুরু সুদ কমা। এই পথে রঘুরাম রাজন কতটা সফল হবেন, তা এখনই বলা না-গেলেও বহু প্রতীক্ষার পরে সুদ কমায় বেজায় খুশি শেয়ার বাজার। পৌষ মাসের শেষ দিনে এক ধাক্কায় বাজার ওঠে ৭২৯ পয়েন্ট। গত সাত মাসে এটিই এক দিনে সব থেকে বড় উত্থান। উত্থান চলে পরের দিনেও। পরিস্থিতি যে-ভাবে বদলাচ্ছে তাতে মনে হয়, ভারতীয় অর্থনীতি এবং শেয়ার বাজারে ‘পৌষ মাস’ এখন চলবে।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:২৪
Share:

অবশেষে শুরু সুদ কমা। এই পথে রঘুরাম রাজন কতটা সফল হবেন, তা এখনই বলা না-গেলেও বহু প্রতীক্ষার পরে সুদ কমায় বেজায় খুশি শেয়ার বাজার। পৌষ মাসের শেষ দিনে এক ধাক্কায় বাজার ওঠে ৭২৯ পয়েন্ট। গত সাত মাসে এটিই এক দিনে সব থেকে বড় উত্থান। উত্থান চলে পরের দিনেও। পরিস্থিতি যে-ভাবে বদলাচ্ছে তাতে মনে হয়, ভারতীয় অর্থনীতি এবং শেয়ার বাজারে ‘পৌষ মাস’ এখন চলবে।

Advertisement

ক্ষীণ আশা ছিল, ৩ ফেব্রুয়ারি ঋণনীতি পর্যালোচনার সময়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমালেও কমাতে পারে। কিন্তু এত দিন অপেক্ষা না-করে রাজনের এই চকিত সিদ্ধান্ত বাজার সত্যিই আশা করেনি। অপ্রত্যাশিত এই প্রাপ্তির উচ্ছ্বাস ধরা পড়ে সূচকের বড় উত্থানে।

শুধু শেয়ার বাজারই নয়, সুদের এই সামান্য পতনে সদর্থক স্পন্দন দেখা দিয়েছে গোটা অর্থনীতিতেই। এরই মধ্যে ঋণের উপর সুদ কমানোর কথা ঘোষণা করেছে কয়েকটি ব্যাঙ্ক। অন্যরাও হয়তো করবে চলতি সপ্তাহে। কিস্তির অঙ্ক বা ইএমআই কমবে বাড়ি এবং গাড়ির ঋণে। ফলে প্রাণ ফিরবে এই দুই শিল্পে। লাভবান হবে বড় আকারে ঋণনির্ভর বেশ কিছু কোম্পানি।

Advertisement

অনেকরই ধারণা, সুদ কমার এই শুরু। পণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ২০১৫ সালে আরও ৭৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তেলের দাম অস্বাভাবিক জায়গায় নেমে আসায় এটি সম্ভব হতে পারে বলে আশা তৈরি হয়েছে।

সুদ একটি ছোট্ট শব্দ। এর ক্ষমতা কিন্তু প্রবল। ১ শতাংশ সুদ কমার গুরুত্ব অর্থনীতির উপর বিশাল। মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’ স্লোগান-কে কেন্দ্র করে যে-বিরাট শিল্পায়নের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তাকে অনেকটাই মসৃণ করবে সুদ কমানোর এই সিদ্ধান্ত। সুদ যদি একটু একটু করে কমতে থাকে, তা হলে নতুন লগ্নির পথ অনেকটা সুগম হবে।

এই খবরে উৎসাহিত হবে বিদেশি লগ্নিকারীরাও। বিদেশ থেকে লগ্নি-প্রবাহ বাড়লে নিয়ন্ত্রণে থাকবে ডলারের দাম। অর্থাৎ সব মিলিয়ে সামান্য হলেও সুদ কমার গুরুত্ব বিরাট। ভবিষ্যতে সুদ আরও কমবে এবং এ বারের বাজেট শিল্পায়নে নতুন দিশা দেখাবে, এই আশায় শেয়ার বাজার এখন চাঙ্গাই থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।

কেন্দ্রে নতুন সরকার অর্থনীতির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করায়, সংস্কারের পথে হাঁটার ব্যাপারে দৃঢ়তা দেখানোয় এবং তেলের দাম তলানিতে নামায় চলতি বছরেই অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে দেখা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১৪-’১৫ সালেই ভারতের জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার ৬.৪ শতাংশে পৌঁছে যেতে পারে বলে বিশ্ব ব্যাঙ্ক মনে করছে। যে ধরনের লগ্নির প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছে, তার সিংহভাগ বাস্তবায়িত হলে মোদী সরকারের চতুর্থ বছরেই বৃদ্ধির গতিতে ভারত অন্য সব দেশকে পিছনে ফেলতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

ধীরে ধীরে যে-পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে বিদেশি লগ্নিতে কোনও ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। আশা, বাজেট মনমতোই হবে। অর্থাৎ শেয়ার বাজারে বুঝেশুনে সুযোগ মতো লগ্নি করা যেতেই পারে, যদিও দাম ও আয়ের অনুপাতকে (পি ই রেশিও) এখন মোটেই সস্তা বলা যায় না। একই কথা বলা চলে মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রেও। ভবিষ্যতের জন্য ভাল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে ঋণ নির্ভর ফান্ডের ক্ষেত্রে। সুদ কমতে শুরু করায় কমেছে ঋণপত্রের ইল্ড, অর্থাৎ বেড়েছে বাজার দর। ভবিষ্যতে সুদ আরও কমার সম্ভাবনা থাকায় আকর্ষণ থাকবে ঋণপত্র নির্ভর প্রকল্পগুলির (ডেট ফান্ড)।

বেশ কয়েকটি সংস্থা গত সপ্তাহে তৃতীয় ত্রৈমাসিক আর্থিক ফলাফল প্রকাশ করেছে। ইনফোসিস-এর পরে ভাল ফল প্রকাশ করেছে টিসিএস এবং উইপ্রো। ইয়েস ব্যাঙ্কের নিট লাভ বেড়েছে ৩০ শতাংশ। ২৯ শতাংশ লাভ বেড়েছে ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্কের।

তেলের দাম কমায় যে-সব কোম্পানি আহত হয়েছে, তাদের মধ্যে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ অন্যতম। অনেক দিন পরে ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থার লাভ এ বার কমেছে। চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত হবে আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ফলাফল।

গত ৩০ নভেম্বর বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্পে দাবিহীন ডিভিডেন্ড এবং মেয়াদ-উত্তীর্ণ জমার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৫১১ কোটি টাকা এবং ৩৪৫ কোটি টাকা। খেয়াল না-থাকার কারণে অথবা উত্তরাধিকারীদের কাছে তথ্য না-থাকায় এই ভাবে জমে উঠছে দাবিহীন টাকা।

সেবি সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েশন অব মিউচুয়াল ফান্ডস অব ইন্ডিয়া-কে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছে, যেখানে দাবিহীন জমার সব তথ্য দেখানো হবে। এই ওয়েবসাইট থেকে লগ্নিকারীরা দেখে নিতে পারবেন তাঁদের কোনও ডিভিডেন্ড অথবা মেয়াদ-উত্তীর্ণ জমা কোনও মিউচুয়াল ফান্ডে পড়ে আছে কি না। প্রসঙ্গত, কোম্পানির শেয়ারের ক্ষেত্রে অনাদায়ী ডিভিডেন্ডের তথ্য পাওয়া যায় সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ওয়েবসাইটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন