দেনায় ডুবে যাওয়া স্পাইসজেটকে আপাতত সচল রাখতে সংস্থার পাশে দাঁড়াল কেন্দ্র।
সংস্থার চিফ অপারেটিং অফিসার সঞ্জীব কপূর সোমবার সন্ধ্যার পরে বিমানমন্ত্রী অশোক গজপতি রাজুর সঙ্গে দেখা করেন। সরকারি সূত্রের খবর, মন্ত্রী কপূরকে বলেছেন, তাঁরা আগামী ১৫ দিন পরিষেবা চালু রাখতে পারবেন। এর জন্য এয়ারপোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া (এএআই) তার বকেয়া ২০০ কোটি টাকা সংস্থার কাছে এখনই দাবি করবে না বলেও ওই সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে। স্পাইসজেটের কর্ণধার কলানিধি মারান তাঁর ধুঁকতে থাকা সংস্থায় অর্থ জোগানোর জন্য ‘ব্যক্তিগত গ্যারান্টি’-র প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেই উড়ান চালু রাখার এই অনুমতি মিলেছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।
এর আগে এএআই তার বকেয়া মেটানোর জন্য স্পাইসজেটকে সোমবার পর্যন্তই অনুমতি দিয়েছিল। তারা জানিয়েছে, এ ব্যাপারে এখনই চাপাচাপি করা হবে না। এ জন্য কিছুটা হাঁপ ছাড়ার সময় পাবে সংস্থা, যার জেরে যাত্রী-দুর্ভোগও কিছুটা কমবে বলে আশা।
এ দিকে টাকা জোগাড়ে মরিয়া স্পাইসজেট এ দিনই কিংফিশারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে কেন্দ্রের কাছে ২০০০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা চেয়েছে। সোমবার কপূর এবং স্পাইসজেটের মূল সংস্থা সান গ্রুপের চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার এস এল নারায়ণন বিমান প্রতিমন্ত্রী মহেশ শর্মার সঙ্গে দেখা করে এই আর্জি জানান। কিংফিশারকে টাকা দেওয়া হয়নি। স্পাইসজেটের টাকা পাওয়া নিয়েও ঘোরতর সংশয়। বিমান মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “বেসরকারি সংস্থা ব্যবসা করতে নেমে লোকসান করলে সরকারের কী দায়?” সরকারি ভাবে শর্মা শুধু জানান, বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে কথা হবে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরকেও জানানো হয়েছে। তবে এ ভাবে করদাতাদের টাকা বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া নজিরবিহীন, জানাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারাই।
এ দিকে, স্পাইসের বাতিল উড়ানের সংখ্যা বেড়েছে। দু’দিন আগেও কলকাতায় দিনে ১৯টার মধ্যে ৭টি বাতিল হচ্ছিল। সোমবার তা আরও দু’টি বেড়েছে। একই চিত্র অন্য শহরেও। নতুন করে স্পাইসের টিকিট বিক্রি করছেন না এজেন্টরা। কাটতে চাইলে বলা হচ্ছে, নিজের ঝুঁকিতে কাটতে। আগে কাটা টিকিট বাতিল করা যাচ্ছে না। করা গেলেও সেই টাকা ফেরত পাওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ভয়ানক সমস্যায় যাত্রীরা। কর্মসূত্রে গোয়ায় থাকেন ইন্দ্রাণী তালুকদার। ১৮ ডিসেম্বর ছেলেকে নিয়ে কলকাতায় আসার কথা। ফেরার কথা ৪ জানুয়ারি। এই টিকিট তিনি গোয়ায় বসে২০ অক্টোবর অনলাইনে কেটেছিলেন। তখন ঘূণাক্ষরেও সমস্যার কথা বুঝতে পারেননি। তিনি বলেন, “আমি বৃহস্পতিবার সকালের উড়ানে যাব। প্রতিদিন সকালে সেই উড়ান গোয়া থেকে মুম্বই ঘুরে কলকাতায় যায়। সোমবার সকালেরটি বাতিল হয়েছে। আমার এক সহকর্মীর তাতে যাওয়ার কথা ছিল। যেতে পারেননি। কী করব বুঝতে পারছি না।” এ বার হয়তো কিছুটা স্বস্তি পাবেন এ ধরনের যাত্রীরা।
চিকিৎসক অনিন্দ্য গোস্বামীর কলকাতা থেকে স্পাইসের উড়ানে বেঙ্গালুরু যাওয়ার কথা ছিল ১৯ ডিসেম্বর। টিকিট অনলাইনে কেটেছিলেন ২৯ সেপ্টেম্বর। এ দিন তা বাতিল করে অন্য বিমানের টিকিট কেটেছেন। তাঁর কথায়, “ঝুঁকি নিতে পারতাম। কিন্তু, শেষ মুহূর্তে যদি উড়ান বাতিল হত, তা হলে সমস্যায় পড়তাম।” অনিন্দ্যবাবুর মতো যাঁরা এখন অনলাইনে টিকিট বাতিল করছেন, তাঁরা আদৌ টাকা ফেরত পাবেন কি না, বা কবে পাবেন, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশনের চেয়ারম্যান অনিল পঞ্জাবি।