সেনসেক্স আবার ২৬ হাজারে। ডলার ৬০ টাকার উপরে। সোনা ঘোরাফেরা করছে ২৭ থেকে ২৮ হাজারের মধ্যে। বাজেট পাশ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ করের ব্যাপারটি এখন স্পষ্ট। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হারে কোনও তারতম্য ঘটায়নি। তবে পরোক্ষ ভাবে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় টাকার জোগান বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছে। মূল্যবৃদ্ধি চড়াই আছে অর্থাৎ সুদ কমার আশু কোনও সম্ভাবনা নেই। বর্ষা মন্দের ভাল। কোম্পানি ফলাফল মোটের উপর ভালই বলতে হবে। শিল্পোৎপাদন এখনও তেমন আশা না-জাগালেও ইঙ্গিতগুলো ভাল। রফতানি বৃদ্ধির হার কিছুটা কমেছে। বেড়েছে আমদানির মাত্রা। কেন্দ্রে শক্তিশালী সরকার, আর্থিক সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ এবং লগ্নিকারীরা আশাবাদী।
অন্য দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে এখনও মাঝেমধ্যে আশঙ্কার মেঘ দেখা দিচ্ছে। মার্কিন অর্থনীতিতে আবার উন্নতির ছোঁয়া লেগেছে। ভারতের কাছে এটি ভাল এবং খারাপও। ভাল এই কারণে, এতে মার্কিন মুলুকে ভারতের রফতানি বাড়বে, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি। খারাপ এই কারণে, অর্থনীতির উন্নতি হওয়ার কারণে মার্কিন সরকার আর্থিক ত্রাণের পরিমাণ কমিয়ে আনছে। ফলে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে সুদের হার বাড়ানোর। এর প্রভাবে ভারতে মার্কিন আর্থিক সংস্থার লগ্নি কমে আসার আশঙ্কা থাকবে। ইউরোপে বড় আকারের দুর্যোগ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও আশঙ্কার মেঘ কাটেনি।
সব মিলিয়ে বিশ্ব বাজার তেমন ভরসা জোগাচ্ছে না ভারতকে, বরং মাঝেমধ্যেই বেশ ভাবাচ্ছে। আশার কথা, এই পরিস্থিতিতেও উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে ভারতের বাজারের উপরেই বাড়তি ভরসা রাখছে বেশির ভাগ বিদেশি লগ্নি সংস্থা। এই কারণেই সেনসেক্স ও নিফ্টির তেমন পতন হচ্ছে না। হলেও আবার ফিরে আসছে পুরনো জায়গায়। আশা করা যায়, বড় কোনও অনুকূল অথবা প্রতিকূল ঘটনা না-ঘটলে ২৬ হাজারের বলয়েই ঘোরাফেরা করবে সেনসেক্স। নিফ্টি ওঠা-নামা করবে ৭,৭৫০-কে ঘিরে।
প্রশ্ন হল, এই পরিস্থিতিতে সাধারণ লগ্নিকারীদের কী করা উচিত, দেখে নেব এক নজরে
• শেয়ারে লগ্নির পরিকল্পনা থাকলে আগে বাছাই করুন কেন কোন শেয়ার কিনতে চান। অপেক্ষা করুন পরের পতনের জন্য। নজর রাখুন আপনার লক্ষ্যের শেয়ারের উপর। ৪/৫ শতাংশ পতন হলে তা পকেটস্থ করতে পারেন।
• সুবিন্যস্ত (ডাইভার্সিফায়েড) মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্পে এসআইপি পদ্ধতিতে লগ্নির জন্য খাতা খুলতে পারেন। এ ছাড়াও, ইএলএসএস প্রকল্পে লগ্নি করতে পারেন কর সাশ্রয়ের প্রয়োজন থাকলে।
• যাঁরা ঝুঁকি চান না, তাঁরা ঋণপত্র-নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্পে লগ্নি করার কথা ভাবতে পারেন। যাঁরা উঁচু করের আওতায় পড়েন, তাঁদের উচিত হবে ৩ বছরের বেশি মেয়াদে লগ্নি করা, যাতে মূল্যবৃদ্ধি-সূচক প্রয়োগের সুবিধা পাওয়া যায়। এতে কর দিতে হবে নামমাত্র। এফএমপি প্রকল্পে টাকা রাখতে হবে ১,১০০ দিন বা তার বেশি মেয়াদে। শর্ট টার্ম ফান্ডে টাকা রাখলে ডিভিডেন্ড অপশন বাছুন। উঁচু করের কারণে ডিভিডেন্ডের হার খানিকটা কমলেও আপনার হাতে তা থাকবে পুরোপুরি করমুক্ত।
• যাঁরা ঝুঁকি থেকে এক যোজন দূরে থাকতে চান, ব্যাঙ্কই তাঁদের স্থায়ী ঠিকানা। আশু সুদ কমার যেমন সম্ভাবনা নেই, তেমনই আশা নেই সুদ বাড়ারও। অর্থাৎ দীর্ঘ মেয়াদে বর্তমানে প্রচলিত সুদে টাকা মেয়াদি আমানত প্রকল্পে রাখা যেতেই পারে। যাঁরা কম করের আওতায় পড়েন, ব্যাঙ্কই তাঁদের জন্য টাকা রাখার আদর্শ জায়গা।
• এ বারের বাজেটে করমুক্ত বন্ডের সংস্থান রাখা হয়নি। উঁচু হারে করদাতারা প্রথমেই পিপিএফ অ্যাকাউন্টে অতিরিক্ত ৫০,০০০ টাকা রাখার সুযোগ নিন। নজর রাখুন বাজারে নথিবদ্ধ করমুক্ত বন্ডগুলির উপর। চলতি বছরে সুদ দেওয়া হয়ে গেলে এই সব বন্ডের বাজার দর কিছুটা নেমে আসবে। প্রকৃত সুদ বা ‘ইল্ড’ পছন্দ হলে বাজার থেকে কেনা যেতে পারে করমুক্ত বন্ড। করমুক্ত ইল্ড ৭.৫ শতাংশ হলেও ৩০ শতাংশ হারে করদাতাদের কাছে তা কিন্তু মন্দ নয়।
• অন্যান্য বন্ডে লগ্নি করতে পারেন সুদের হার এবং রেটিং দেখে।
• গত দু’বছরে সোনার দাম মাঝেমধ্যে মাথা চাড়া গিয়ে উঠলেও পাকাপাকি ভাবে তা তেমন বাড়েনি। তা হলেও সোনা সব সময়েই অসময়ের সুরক্ষা। যে-কোনও পরিস্থিতিতেই তহবিলের ১০/১৫ শতাংশ সোনায় লগ্নি করা চলে। বিশ্ব বাজারের অনিশ্চয়তায় সোনার দাম বাড়ে। বাড়ে দেশে ডলারের দাম বাড়লেও। সম্প্রতি স্বর্ণ সঞ্চয় প্রকল্প বন্ধ করেছে বেশির ভাগ প্রথম সারির গয়না ব্যবসায়ী। অর্থাৎ এখন সোনায় লগ্নি করতে হলে টাকা ঢালতে হবে গোল্ড ইটিএফ অথবা মিউচুয়াল ফান্ডের গোল্ড ফান্ডে।
• অর্থনীতি কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়ায় গত দু’বছরে গৃহ-সম্পত্তির দাম তেমন বাড়েনি। এক দিকে উঁচু সুদের কারণে চাহিদা হ্রাস, অন্য দিকে ফ্ল্যাটের বেশি জোগান থাকায় লগ্নির জায়গা হিসেবে রিয়েল এস্টেট খুব ভাল জায়গা বলে মনে হচ্ছে না। সুরক্ষিত জমির প্লট (সম্ভাবনাময় জায়গায়) কিন্তু এখনও বেশ আকর্ষণীয়। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালে এবং সুদের হার কিছুটা কমলে রিয়েল এস্টেটে লগ্নির আকর্ষণ অবশ্য আবার বাড়তে পারে।
• সেবি রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট গঠনের ছাড়পত্র দিয়েছে। অর্থাৎ কয়েক মাস পরে বাজারে ছাড়া হতে পারে রিয়েল এস্টেট ইউনিট। সংগৃহীত টাকা লগ্নি করা হবে সম্ভাবনাময় গৃহ-সম্পত্তিতে। তবে যা জানা যাচ্ছে, এই ধরনের ইউনিটে ন্যূনতম লগ্নির মাত্রা একটু উপরের দিকেই থাকবে। এগুলি বাজারে এলে রিয়েল এস্টেট শিল্পে লগ্নির মাত্রা বেশ খানিকটা বেড়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে, যা এই শিল্পের কাছে স্বাগত।
• সঞ্চয়ের জায়গা হিসেবে ডাকঘরের আকর্ষণ অনেকটাই কমেছে। এখানে টাকা রাখার ভাল জায়গা বলতে পিপিএফ। সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমটি মন্দ নয়। তবে উন্নত পরিষেবা পেতে শহরের মানুষ সাধারণত ব্যাঙ্কেই খোলেন ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পের অধীনে থাকা এই দু’ধরনের অ্যাকাউন্ট। ব্যাঙ্কের তুলনায় সুদ কম হওয়ায় আকর্ষণ হারিয়েছে এক সময়ের অতি জনপ্রিয় ডাকঘর মাসিক আয় প্রকল্প। কর সাশ্রয়ের লক্ষ্যে কেউ কেউ এখনও জাতীয় সঞ্চয়পত্রে (এনএসসি) লগ্নি করেন।
এ বার রানাঘাটে ‘আনন্দ’
নিজস্ব সংবাদদাতা • রানাঘাট
পড়ুয়াদের নতুন ঠিকানা। —নিজস্ব চিত্র।
আর ছুটতে হবে না কলকাতায়। নদিয়ার রানাঘাটে খুলল আনন্দ গ্রন্থবিপণি। রবিবার বিকালে রানাঘাট পুরসভার পাশে সুভাষ অ্যাভিনিউতে এলআইসি অফিসের নীচে মিউনিসিপ্যাল সুপার মার্কেটে নতুন এই বই দোকানের উদ্বোধন করেন অধ্যাপক সুধীর চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “দিকে-দিকে বইয়ের দোকানের সংখ্যা বাড়লে পাঠকের সংখ্যা বাড়বে। নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা যাতে বইয়ের দোকানে আসে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে ওরাই ভবিষ্যতের পাঠক।” আনন্দ পাবলিশার্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুবীর কুমার মিত্র জানান, রাজ্যে গ্রন্থবিপনির সংখ্যা ৩৭ হলেও এই জেলায় এটি দ্বিতীয়। আর একটি আছে কৃষ্ণনগরে। এ দিন এলাকার বিশিষ্ট লোকজন ছাড়াও আশপাশের কিছু স্কুলের ছেলেমেয়েরা অভিভাবকদের নিয়ে উপস্থিত ছিল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে। বছর দশের মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন তাহেরপুর নেতাজি হাইস্কুলের শিক্ষক জয়দেব মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “রানাঘাট শহরে এই ধরনের বইয়ের দোকানের বড় অভাব। তাই উদ্বোধন হবে শুনে চলে এসেছি বই কিনতে।” রানাঘাট ভারতী হাইস্কুলের শিক্ষক শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই শহরের যাঁরা বই পড়তে ভালবাসেন, তাঁদের জন্য সত্যিই সুখবর।”