West Bengal Lockdown

লকডাউনে দোকান খুলতে চপার হাতে যুবকের তাণ্ডব, কড়েয়ায় বেধড়ক মার পুলিশকে

শুক্রবার রাতে কড়েয়া থানা এলাকার চমরু খানসামা লেনে জনতার একাংশের ইটবৃষ্টির মুখে পড়ল পুলিশ। লাঠি-বাঁশ দিয়ে এলোপাথাড়ি মারা হল কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের। গভীর রাত পর্যন্ত চলে গন্ডগোল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২০ ১৭:১৫
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

কয়েক দিন আগে হাওড়ার টিকিয়াপাড়ায় লকডাউন কার্যকর করতে গিয়ে কিছু দুষ্কৃতীর আক্রমণের মুখে পড়েছিলেন হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের কর্মীরা। এ বার খাস কলকাতায় লকডাউন ভেঙে খোলা দোকান বাজার আটকাতে গিয়ে বেধড়ক মার খেল পুলিশ। আহত হলেন পুলিশের ৫ কর্মী।
শুক্রবার রাতে কড়েয়া থানা এলাকার চমরু খানসামা লেনে জনতার একাংশের ইটবৃষ্টির মুখে পড়ল পুলিশ। লাঠি-বাঁশ দিয়ে এলোপাথাড়ি মারা হল কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের। গভীর রাত পর্যন্ত চলে গন্ডগোল। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ঘটনাস্থলে যান কলকাতা পুলিশের পদস্থ কর্তারাও। শনিবারও যথেষ্ট উত্তেজনা রয়েছে গোটা এলাকায়। কলকাতা পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে ৮ জনকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই এলাকার এক কুখ্যাত দুষ্কৃতীকে নিয়ে গন্ডগোলের সূত্রপাত। গত কয়েক দিন ধরেই মহম্মদ সামীর নামে ওই দুষ্কৃতী এলাকার বাসিন্দাদের উস্কাচ্ছিল লকডাউন ভেঙে দোকানপাট খুলতে। সূত্রের খবর, বুধবার সে হাতে ভোজালি নিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়ায় এবং সবাইকে দোকান খুলতে বলে। যাঁরা লকডাউন ভাঙতে চাননি তাঁদের উল্টে সামীর এবং তার দলবল ভোজালি দেখিয়ে হুমকি দেয়। কোনও লিখিত অভিযোগ না হলেও, স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশই ঘটনাটি পুলিশকে জানিয়েছিলেন।
শুক্রবারও ওই সামীরকে কেন্দ্র করেই গন্ডগোলের সূত্রপাত বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রেই থানা এলাকায় টহলদারিতে থাকা পুলিশকর্মীরা জানতে পারেন সামীর ফের এলাকায় ভোজালি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং যাঁরা লকডাউন ভাঙতে রাজি নন তাঁদের ভয় দেখাচ্ছে। খবর পেয়েই চমরু খানসামা লেন লাগোয়া তিলজলা রোডের ঘাসবাগান এলাকায় যায় পুলিশ। ওই দলে ছিলেন থানার গুন্ডাদমন আধিকারিক ইন্তিখাব আলম, এক জন অ্যাসিস্টান্ট সাব ইনস্পেক্টর, দুই কনস্টেবল এবং থানার গাড়ির চালক এক হোমগার্ড।

Advertisement

আরও পড়ুন: হাতে কাজ নেই, পেটে ভাত নেই, বিনোদনের দুনিয়ায় চোখের জলও নেই: রুদ্রনীল ঘোষ​


প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ঘটনাস্থলে পৌঁছে সামীরের বাবাকে পুলিশ প্রথমে সাবধান করে এবং ছেলেকে সামলাতে বলে। সেই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এলাকার আরও কিছু যুবক। পুলিশের সঙ্গে তাদের বচসা শুরু হয়ে যায়। ইতিমধ্যে পুলিশ এসেছে খবর পেয়ে পালিয়ে যায় সামীর। পুলিশ অভিযুক্তের হদিশ পেতে তল্লাশি শুরু করতেই বচসা শুরু হয় এলাকার কয়েক জন যুবকের সঙ্গে। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে ভিড় সরিয়ে দেয় প্রথমে। তার পরেই শুরু হয়ে যায় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি। এলোপাথাড়ি ইট বৃষ্টি শুরু হয় পুলিশের দিকে।’’ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লাঠি-বাঁশ নিয়ে বেধড়ক মারা হয় পুলিশকর্মীদের। কয়েকশো মারমুখী যুবকের সঙ্গে পেরে না উঠে পালিয়ে যায় পুলিশ। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি, মোবাইলও। কিছু পরে ঘটনাস্থলে আসেন কড়েয়া থানার ওসি, অতিরিক্ত ওসি এবং বড়সড] বাহিনী। গভীর রাত পর্যন্ত চলে গন্ডগোল। শেষ পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, ওই যুবক হাতে অস্ত্র নিয়ে এলাকায় হুমকি দেওয়ার পরেই যদি পুলিশ গ্রেফতার করত তাকে, তা হলে শুক্রবার রাতের ঘটনা ঘটত না। কেন সামীরকে আগে গ্রেফতার করা হল না? তা নিয়ে অবশ্য মুখ খোলেননি পুলিশ কর্তারা। পুলিশ সূত্রে খবর, পুলিশ সামীরকে ওই দিন গ্রেফতার করার বদলে, তার মামাকে বুঝিয়ে এসেছিল। এলাকায় সামীর এবং তার বাবা দু’জনেই কুখ্যাত দুষ্কৃতী বলে পরিচিত। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সামীর এবং তাঁর পরিবারের লোকজন এলাকার বাসিন্দাদের উস্কে দেয় পুলিশের বিরুদ্ধে।

Advertisement

আরও পড়ুন:ক্যানসার অস্ত্রোপচারের সম্মতি এল ভিডিয়ো কলে


গোটা ঘটনা সম্পর্কে বিভাগীয় ডেপুটি কমিশনার দেবস্মিতা দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কোনও উত্তর দেননি। লালবাজারের শীর্ষ কর্তাদের একটি অংশ জানিয়েছেন, ‘অশান্তির’ খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। কী অশান্তি তা নিয়েও মুখ খোলেননি তাঁরা। কেন আগে ওই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হল না তা নিয়েও নীরব কর্তারা।
লালবাজার সূত্রে খবর, শেখ নান্নু, ফারদিন আহমেদ, মহম্মদ আলি, ওয়াকিম আহমেদ, ফয়জল, সানি, জাফর এবং শেখ জালালুদ্দিন — মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৩২, ৩৩৩, ৩২৪, ৩৪ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত-সহ বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন