খেয়েই যখন মরব...

পিতৃদত্ত নামের ওপর কারও হাত থাকে না বটে, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ছদ্মনামের বিচার করা সমালোচকের অধিকারের মধ্যে পড়ে। পেটুক হিসেবে যদি খ্যাতি পেতেই হয়, তবে দামু নামখানা মোক্ষম, সন্দেহ নেই। নামের প্রতি সুবিচার করেছেন দামু মুখোপাধ্যায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৭ ২১:৩৩
Share:

খ্যাটন সঙ্গী

Advertisement

লেখক: দামু মুখোপাধ্যায়

মূল্য: ৫০০.০০

Advertisement

প্রকাশক: ৯ঋকাল বুকস

পিতৃদত্ত নামের ওপর কারও হাত থাকে না বটে, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ছদ্মনামের বিচার করা সমালোচকের অধিকারের মধ্যে পড়ে। পেটুক হিসেবে যদি খ্যাতি পেতেই হয়, তবে দামু নামখানা মোক্ষম, সন্দেহ নেই। নামের প্রতি সুবিচার করেছেন দামু মুখোপাধ্যায়। তাঁর খ্যাটন সঙ্গী-র পাতায় পাতায় হরেক কিসিমের খাওয়ার গল্প, হরেক ঠিকানায়। শহর কলকাতার অলিগলি থেকে জঙ্গলমহলের শাল-মহুলের বন, ক্যানিং লাইনের তালদি থেকে ঘণ্টাদেড়েক দূরের গ্রাম, যেখানে পৌঁছতে ভ্যানরিকশার পঁয়তাল্লিশ মিনিটের প্রবল ঝাঁকুনি সহ্য করা ছাড়া গত্যন্তর নেই, রেলের প্যান্ট্রি থেকে দার্জিলিং-এর পাব, নামবিহীন ধাবা থেকে চায়না টাউন— ভোজনং যত্রতত্র কথাটাকে একেবারে আক্ষরিক করে ছেড়েছেন দামু। সে রসনাবিলাসের অভিজ্ঞতাকে জারিয়েছেন সেন্স অব হিউমারে, পরিবেশন করেছেন মুচমুচে বাংলায়।

এই বইয়ের একটা বড় অংশ যাঁদের নিয়ে, পণ্ডিতরা তাঁদের সাবঅল্টার্ন বলেন। কার্শিয়াং-এর গেস্ট হাউসের চৌকিদার পবন বাহাদুর, শিমলিপালের দুখিয়া মাহাতো, শালবনির কুন্দখুড়ো, চা-বাগানের পিটার ওরাওঁ, পাড়ার গুংগাদা, গাছবুড়ো মন্মথ দলুই, আর নিজের শৈশবের বাড়ির কমলাবুড়ি, দেবীপিসি, বৃহস্পতিমাসি, শিউপূজন ভাইয়া— যাঁরা চির কাল কাব্যে উপেক্ষিত, এখানে তাঁরাই নায়কনায়িকা। সুন্দরবন থেকে আসা নিরক্ষর রাঁধুনিমাসি রেঁধে ফেলতেন নিখুঁত পার্কসার্কাস ঘরানার চাঁপ, উত্তর পঞ্চান্নগ্রাম বাজারের অনামা দোকানদার বানিয়ে দিতেন পেঁয়াজ-রসুন-সেলারি সহযোগে স্বর্গীয় ককটেল সসেজ। ভাল খাওয়ার সঙ্গে যে মোটা মানিব্যাগের সম্পর্ক তেমন অবিচ্ছেদ্য নয়, বরং এলোমেলো ঠিকানায় অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তির অভিঘাত মনে থেকে যেতে পারে বেশ কয়েক জন্ম, দামু মনে করিয়ে দিয়েছেন।

এবং, বাঙালি যে সর্বভুক, এই বাজারে বুক ঠুকে এমন কথা লিখে ফেলতে পারার জন্য একটা সাবাশ তাঁর প্রাপ্য। তাঁর উদরসফরের অনেকখানি জু়ড়ে রয়েছে শুয়োরের মাংস এবং গোমাংস। পাশেই রয়েছে পুজোর ভোগের অমোঘ আমন্ত্রণ, হরিদ্বারের দুধ-জলেবির গন্ধ। হরেক মাছের কিস্‌সার সঙ্গেই সহাবস্থান তিরাশি বছরের পুরনো কেকের দোকানের স্মৃতিমাখা স্বাদের। রয়েছে পুরনো স্কচ আর ডাবের জল-লেবু মেশানো বাংলার নিশ্চিন্ত সহাবস্থান।

খেয়েই যদি মরতে হয়, তবে সব খেয়ে মরাই তো ভাল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন