পুস্তক পরিচয়

বিকল্প ধারার ভাবুক

মৃণাল সেন একদা বলেছিলেন, ফিল্ম দেখাটাও একটা আর্ট, সে কথাটিই প্রমাণ করলেন তানভীর তাঁর লেখনীতে। ভূমিকায় জানিয়েছেন, তাঁর লেখালিখির পিছনের আগ্রহ ‘চলচ্চিত্র নন্দনতত্ত্বের সূক্ষ্ম দিকগুলি নিয়ে।’

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

সিনেমা-ভাবনা
তানভীর মোকাম্মেল
৪০০.০০
ধানসিড়ি

Advertisement

রুশ বিপ্লব কী ভাবে প্রভাবিত করে সিনেমাকে, পাল্টে দেয় ফিল্মের নন্দনতত্ত্ব, আর সে যজ্ঞের কেমন পুরোহিত ছিলেন আইজেনস্টাইন, তা নিয়ে প্রায় শিক্ষকের মতোই লেখেন তানভীর মোকাম্মেল: ‘‘এস্কাইলাস-সফোক্লিসের যুগে তাঁদের ধ্রুপদ নাটককে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার জন্যে যেমন একজন অ্যারিস্টটলের জন্ম হয়েছিল, তেমনি সিনেমার জন্মযুগে এই নবীন শিল্পকে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করার জন্যে যেন এলেন— আইজেনস্টাইন। যিনি একাধারে নিজেই একজন সৃজনশীল শিল্পী, আবার শিল্পের বৈয়াকরণিকও। বলা চলে আধুনিক চলচ্চিত্রের ব্যাকরণটার জন্মই হল আইজেনস্টাইনের হাত ধরে।’’ কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, গদ্যকার— তানভীরের এ-সমস্ত পরিচয় ছাপিয়ে যে পরিচয়টি সর্বজনবিদিত তা হল তিনি বাংলাদেশের বিকল্প ধারার অন্যতম অগ্রণী চলচ্চিত্রকার। বহুবিধ গ্রন্থের প্রণেতা এই মানুষটি তাঁর নতুন বইটিতে নিপুণ বুননে ফিল্মের শিল্পপাঠ তৈরি করেছেন। মৃণাল সেন একদা বলেছিলেন, ফিল্ম দেখাটাও একটা আর্ট, সে কথাটিই প্রমাণ করলেন তানভীর তাঁর লেখনীতে। ভূমিকায় জানিয়েছেন, তাঁর লেখালিখির পিছনের আগ্রহ ‘চলচ্চিত্র নন্দনতত্ত্বের সূক্ষ্ম দিকগুলি নিয়ে।’ সত্যজিৎ-মৃণাল নিয়ে যেমন লিখেছেন, তেমনই লিখেছেন পূর্ণেন্দু পত্রী বা অপর্ণা সেনের শেক্সপিয়রীয় প্রথম ছবি ‘৩৬, চৌরঙ্গী লেন’ নিয়ে। বাদ পড়েননি জার্মান ‘এক্সপ্রেশনিস্ট’ থেকে আমেরিকার ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ পরিচালকেরা। তবে এ-বইয়ের সব থেকে শক্তিশালী অংশ বাংলাদেশের বিকল্প সিনেমা আন্দোলনের সঙ্কট ও সম্ভাবনা সংক্রান্ত আলোচনাগুলি। সেখানকার পথিকৃৎ পরিচালক আলমগীর কবির সম্পর্কে যেমন লিখছেন: ‘‘তাঁর পক্ষে স্বাভাবিকই ছিল প্রচলিত ধারায় গল্প বলার চেয়ে ষাট দশকের রাজনৈতিক চলচ্চিত্রকারদের প্রিয় মাধ্যম সিনেমা ভেরিতে-র প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠা।’’ আবার লিখেছেন কর্পোরেট পুঁজির কালে বিকল্প সিনেমার পথ নিয়েও: ‘‘বাণিজ্যপুঁজির সিনেমা হচ্ছে পুঁজিঘন। কিন্তু যৌথ সিনেমা হবে শ্রমঘন। পুঁজির অভাবে গায়ে-গতরে খেটে পোষাতে হবে। বিকল্প সিনেমার নির্মাতারা অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই এ দেশে সেটা করে আসছেন। তাই যৌথ সিনেমা বা Film Collective–এর কাজকে এ দেশের বিকল্প সিনেমার অভিজ্ঞতাকে ধারণ করেই গড়ে তুলতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন