তিন কন্যার জীবনালেখ্য

শিলঙে স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন, শ্রীহট্টে স্ত্রীশিক্ষা বিস্তার, পাটিয়ালায় ভিক্টোরিয়া কলেজে বিশ বছর প্রধানের দায়িত্ব পালন, দেহরাদূনে পুর-কমিশনার, সুবক্তা ও সুলেখিকা হেমন্তকুমারী চৌধুরী  (১৮৬৮-১৯৫০) আজ সম্পূর্ণ বিস্মৃত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৩৭
Share:

স্মরি বিস্ময়ে

Advertisement

উষারঞ্জন ভট্টাচার্য
২৫০.০০, সিগনেট প্রেস

লাহৌরে জন্ম। কুড়ি বছর বয়েসে প্রথম মহিলা হিসেবে সম্পাদনা করলেন হিন্দি সাময়িকপত্র ‘সুগৃহিণী’ (১৮৮৮)। তিন বছর সম্পাদনা করেছেন বাংলা ‘অন্তঃপুর’ পত্রিকা (১৯০১-৪)। শিলঙে স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন, শ্রীহট্টে স্ত্রীশিক্ষা বিস্তার, পাটিয়ালায় ভিক্টোরিয়া কলেজে বিশ বছর প্রধানের দায়িত্ব পালন, দেহরাদূনে পুর-কমিশনার, সুবক্তা ও সুলেখিকা হেমন্তকুমারী চৌধুরী (১৮৬৮-১৯৫০) আজ সম্পূর্ণ বিস্মৃত। জন্মসার্ধশতবর্ষে তাঁর জীবনালেখ্য রচনা করেছেন উষারঞ্জন ভট্টাচার্য। এই সঙ্গে তুলে এনেছেন শিলঙের আরও দুই ব্যক্তিত্বময়ীর কথা— শারদামঞ্জরী দত্ত ও অঞ্জলি লাহিড়ী। অসামান্য আত্মকথা ‘মহাযাত্রার পথে’র লেখিকা শারদামঞ্জরীর শিক্ষকতা ও সমাজসেবায় বিশেষ ভূমিকা ছিল। লীলা মজুমদারের ভাষায়, ‘‘একদিকে গোঁড়া ব্রাহ্ম, আর অন্যদিকে সমুদ্রের মতো উদার।’’ অঞ্জলির মাতামহী শারদামঞ্জরী, পিতামহ ডাক্তার সুন্দরীমোহন দাস। আঠেরো বছর বয়েস থেকে কমিউনিস্ট পার্টির হোলটাইমার, জনজাতীয় যুবকযুবতীদের উদ্বুদ্ধ করতে তাঁর প্রয়াস অতুলনীয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যে উত্তর সীমান্ত এলাকায় দিনরাত পরিশ্রম করেছেন, অনেকে তাঁকে ডাকত জগন্মাতা বলে। বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্মান। এই তিন ব্রাহ্মকন্যার সবিস্তার পরিচয় বিধৃত রয়েছে বইটির পাতায় পাতায়।

Advertisement

ডোডোপাখিদের গান/ পরিবেশ মানুষ ‘সভ্যতা’ এবং...

পরিমল ভট্টাচার্য
২৫০.০০, অবভাস

অমিতাভ ঘোষ তাঁর দ্য গ্রেট ডিরেঞ্জমেন্ট (২০১৬) বইয়ে কিছুটা আক্ষেপের সুরে লিখেছিলেন, প্রকৃতি এবং পরিবেশের যে ভয়াবহ সঙ্কটের মধ্যে আমরা আছি, সাহিত্যে শিল্পে সংস্কৃতিতে তার কথা খুব কমই বলা হচ্ছে। পরিমল ভট্টাচার্য এই ‘অনুযোগ’ নিয়ে ভেবেছেন, নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছেন এবং পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের ভূমিকা নিয়ে সাম্প্রতিক কালের লেখালিখি খুঁজতে বেরিয়ে ভিন্ন এক উপলব্ধিতে এসে পৌঁছেছেন। সেই উপলব্ধি হল: ‘‘এই বিষয়গুলো নিয়ে, অথবা ছুঁয়ে, লেখালিখি হচ্ছে, প্রচুর পরিমাণে হচ্ছে, এবং সাধারণ পাঠকের কথা মাথায় রেখেই হচ্ছে।’’ যাকে গল্প-উপন্যাস বলে চিনি, অনেক সময় হয়তো সেই চেহারায় নয়, কিন্তু সে সব লেখায় কল্পনার স্ফুরণ এবং সৃষ্টির ঐশ্বর্য আমাদের মুগ্ধ করে, চমকে দেয়। নানা দেশের লেখকদের এমন প্রায় অর্ধশত লেখা নিয়ে পরিমলবাবু আলোচনা করেছেন। লেখাগুলির কিছু কিছু অংশের অনুবাদ, আর তার সঙ্গে বুনে দেওয়া তাঁর নিজস্ব মতামত, ধারণা, অভিব্যক্তি। তাঁর সব লেখার মতোই এগুলিও অন্তর্ভেদী দৃষ্টি, সংবেদী মন এবং অ-সামান্য গদ্যে সমৃদ্ধ। পড়তে পড়তে কখনও ঘোর লেগে যায়, কখনও গায়ে কাঁটা দেয়, এবং অবিরত ধমনীতে বয়ে চলে এক বেদনার্ত ভয়ের স্রোত। আমাজন থেকে উত্তর মেরু, চের্নোবিল থেকে কলাম্বিয়া— সভ্যতার নামে, উন্নয়নের নামে কোন অতলের উদ্দেশে ছুটে চলেছি আমরা, এই গ্রহের আশ্চর্য রকমের বুদ্ধিমান এবং আশ্চর্য রকমের নির্বোধ প্রাণীরা, যারা মানুষ নামে পরিচিত?

গ্রহণ পর্যায়/ শঙ্খ ঘোষের কবিতা

সৌরীন ভট্টাচার্য
২০০.০০, অভিযান পাবলিশার্স

‘‘একটা ভুল সামাজিকতায় সে ঢেকে রাখতে চায় সত্যের মুখ, তাই প্রতিষ্ঠান মিথ্যাচারী। এই মিথ্যার প্রতাপ এতটাই যে সাধারণ মানুষকে সে ভুলিয়ে দিতে পারে জীবনের মানে।’’ শঙ্খ ঘোষের শব্দ আর সত্য গ্রন্থ থেকে আহৃত এই বাক্যটির সূত্রে সৌরীন ভট্টাচার্য যে বাক্যটি লেখেন, তা যেন হয়ে ওঠে প্রায় কোনও কবিতারই একটি লাইন ‘‘মিথ্যা ছড়ানো প্রতিষ্ঠানে, মিথ্যা ছড়ানো খ্যাতিতে, এমনকি মিথ্যা ছড়ানো নির্জনেও।’’ শঙ্খ ঘোষ যখন সৌরীনবাবুর রচনার বিষয় হয়ে ওঠেন, আর সে বিষয়াদি বই-ও হয়ে ওঠে, তখন স্বাভাবিক নিয়মেই এই দুই মানুষের মননের ব্যাপ্তি পাঠককে এক মনস্বী গ্রন্থের প্রত্যাশী করে তোলে। সে ‘প্রত্যাশা না করাই ভালো’ বলে যদিও শুরু করেন সৌরীনবাবু, কিন্তু বইটির নামকরণের সূত্রে যখন তিনি লেখেন ‘‘গ্রহণ শব্দে আমার মনে অনেক রহস্য জমে। এর মধ্যে আত্মসাৎ আছে, অন্ধকার আছে... ’’, তখন সে প্রত্যাশা আরও বেড়ে যায়। শঙ্খ ঘোষের রচনা ও ব্যক্তিত্ব ছুঁয়ে থাকা কয়েকটি লেখার এই সঙ্কলনটিতে অবশ্য কেন্দ্রীয় প্রসঙ্গ নানা ভাবে তাঁর কবিতাই। দুই পর্বে বিভক্ত এ-বইয়ের সঙ্কলক ও সম্পাদক অম্লান দত্তের মতে, ‘‘ঠিক গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ বা মেদুর স্মৃতিকথন হয়তো নয় সেসব, স্পর্শকের মতো অল্প একটু ছুঁয়েই দূরে চলে যাওয়া।’’ শঙ্খ ঘোষের একটি বক্তৃতা প্রসঙ্গে ‘দুঃখ’ শিরোনামে যে গদ্যটি আছে, তাতে লিখছেন সৌরীনবাবু: ‘‘দুঃখে আমার মনের দরজাটা খুলে যায়। কেননা দুঃখ আমাকে বড়ো করে তোলে। তেমন তেমন দুঃখে আমার মাপ আমাকেও ছাড়িয়ে যায়। দুঃখ আমার ঘরের জিনিস হয়ে ওঠে। এসব কথার মানে এমনি করে চকিতে ধরা পড়ে।’’ পড়তে পড়তে পাঠকের জীবনের ঝুলিও ভরে উঠবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন