পুস্তক পরিচয় ২

সাংস্কৃতিক ইতিহাস

জোন্সের এই পর্যবেক্ষণ পরে সত্যি প্রমাণিত হয়েছে, ওই দিনটি পেয়েছে তুলনামূলক-ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানের সূচনা-দিনের মর্যাদা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৩২
Share:

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবিজ্ঞান
সুনন্দনকুমার সেন
২০০.০০
আনন্দ পাবলিশার্স

Advertisement

১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি। কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটিতে ভাষণ দিতে গিয়ে উইলিয়াম জোন্স বললেন, সংস্কৃত, গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষার মধ্যে আছে এক সুগভীর সম্পর্ক। তাদের উৎস এমন কোনও একটি ভাষা যা আজ বিলুপ্ত। জোন্সের এই পর্যবেক্ষণ পরে সত্যি প্রমাণিত হয়েছে, ওই দিনটি পেয়েছে তুলনামূলক-ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানের সূচনা-দিনের মর্যাদা। আজ আমরা জানি, সংস্কৃত গ্রিক ল্যাটিন গথিক কেল্টিক আবেস্তান আর্মেনিয়ান প্রভৃতি ভাষা একটি মূল বা প্রত্নভাষা থেকে জন্ম নিয়েছে যার নাম প্রত্ন ইন্দো-ইউরোপীয়। এই প্রত্নভাষার কোনও নিদর্শন পাওয়া যায়নি। উনিশ শতকে এটিকে আর্য ভাষাও বলা হত, আনাতোলীয় ভাষাগুচ্ছের আবিষ্কারের পর আজকের পণ্ডিতরা একে ইন্দো-হিটাইট বলতে বেশি আগ্রহী। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশে হিটাইট ভাষার নিদর্শনই এখনও সর্বপ্রাচীন, খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ অব্দ। তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানীরা এই প্রত্নভাষার কাঠামোটি পুনর্গঠিত করেছেন, আবার দেখাতে চেষ্টা করেছেন মূল ভাষা থেকে কী ভাবে বিবর্তিত হয়েছে ওই ভাষাবংশের বিভিন্ন ভাষা। এই বিবর্তনের রূপরেখাই এই বইয়ে সহজ ভাষায় তুলে ধরেছেন লেখক। ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানের এমন বই বাংলায় নেই বললেই চলে। সুনন্দনকুমার সেন ‘‘বাংলাভাষার বিবর্তনের ক্ষেত্রে মৌলিক ভাবনার পরিচয়’’ রেখেছেন, ভূমিকায় এমত মন্তব্য করেছেন পবিত্র সরকার।

Advertisement

উৎসর্গপত্র
অনির্বাণ রায়
৪৫০.০০
সোপান

সুধীন্দ্রনাথ দত্তকে ১৯৩৯-এ আকাশ-প্রদীপ উৎসর্গ করেন রবীন্দ্রনাথ, উৎসর্গপত্রে তাঁকে ‘কল্যাণীয়েষু’ সম্বোধনের পর লেখেন, ‘‘বয়সে তোমাকে অনেক দূর পেরিয়ে এসেছি/ তবু তোমাদের কালের সঙ্গে আমার যোগ/ লুপ্তপ্রায় হয়ে এসেছে এমনতরো অস্বীকৃতির/ সংশয়বাক্য তোমার কাছে শুনি নি। তাই/ আমার রচনা তোমাদের কালকে স্পর্শ করবে/ আশা করে এই বই তোমার হাতের কাছে/ এগিয়ে দিলুম। তুমি আধুনিক সাহিত্যের/ সাধনক্ষেত্রে থেকে একে গ্রহণ করো।’’— এ ধরনের বহু বিশিষ্ট উৎসর্গপত্রের মুখোমুখি করেছেন পাঠককে অনির্বাণ রায় তাঁর এই বইটিতে। বই-উৎসর্গের প্রথা আমাদের দেশে ছিল না, সংস্কৃত সাহিত্যধারায়ও এর তেমন কোনও নিদর্শন মেলে না। ইংরেজি গ্রন্থাদির অনুকরণে বাংলা বইয়ের ক্ষেত্রে এই উৎসর্গপ্রথা চালু হতে শুরু করে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের পরে, এ-কথা জানিয়েছেন অনির্বাণ। তাঁর মুখবন্ধটি রবীন্দ্রনাথের উল্লেখিত উৎসর্গপত্রের সঙ্গে মিলিয়ে পড়লেই পাঠকের কাছে স্পষ্ট হয়ে আসবে এ-বই তৈরির অভিপ্রায়: ‘‘উৎসর্গপত্র বইয়ের অঙ্গ। এক থেকে একাধিক ছত্রে তার আয়তন-বিস্তৃতি। এতে ধরা থাকে একটা বিশেষ কণ্ঠস্বর, দৃষ্টিভঙ্গি, মর্জিমেজাজ, সমাজসময়ের ধূসর ছবি, ইতিহাসের টুকরো, জীবনের ভগ্নাংশ— এমন কত কিছু।’’ ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত শর্মিষ্ঠা-য় মাইকেল মধুসূদন দত্তের উৎসর্গপত্র দিয়ে এ-বইয়ের শুরু, গোটা গত শতক অবধি তা প্রায় পরিব্যাপ্ত। এই নির্বাচনের ভিতর দিয়ে উঠে আসে যেন শিল্প-সাহিত্য-বিজ্ঞানে প্রচ্ছন্ন হয়ে থাকা বঙ্গজীবনের ইতস্তত সাংস্কৃতিক ইতিহাস।

জমিদার ও রায়ত/ প্যারীচাঁদ মিত্র
অনুবাদক/ সম্পাদক: সৌমিত্রশংকর সেনগুপ্ত
১৫০.০০
দে’জ পাবলিশিং

প্যারীচাঁদ মিত্র, তারাচাঁদ চক্রবর্তীর মতো ডিরোজ়িয়ানরা যেমন সংবাদপত্রে রায়ত-পীড়নের সংবাদ প্রকাশ করেছেন, তেমন তাঁরাই প্রথম রায়ত-কৃষকদের নিয়ে সমীক্ষার জন্য বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির মাধ্যমে উদ্যোগী হয়েছেন (১৮৪৩)। এই সমীক্ষার প্রশ্নমালায় রায়তদের জমির স্বত্ব, আর্থিক অবস্থা, খাজনা ইত্যাদির পাশাপাশি শিক্ষা, খাদ্যাভ্যাস, এমনকি ‘সুখাভিলাষ ও ভোগেচ্ছা কি পর্য্যন্ত আছে’ তাও জানার প্রয়াস নজরে পড়ে। এর তিন বছর পরেই প্যারীচাঁদ ক্যালকাটা রিভিউ পত্রিকায় লেখেন দীর্ঘ নিবন্ধ ‘জমিনদার অ্যান্ড দ্য রায়ত’। দীর্ঘ দিন লোকচক্ষুর অন্তরালে পড়ে থাকা লেখাটি ইতিহাস, দর্শন ও আইনের নিবিড় পাঠের জোরে লেখা, সমকালে অদ্বিতীয়। প্রকাশের ১৭০ বছর পর সেটি সযত্নে বাংলায় অনুবাদ করলেন সৌমিত্রশংকর। প্রাচীন ও মধ্যযুগের ভারতে কর সংগ্রহের রীতিপদ্ধতি আলোচনার পর প্যারীচাঁদ এসেছেন আধুনিক পর্বে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, হপ্তম ও পঞ্চম থেকে রাজস্বব্যবস্থার মৌলিক ত্রুটির কথা বলে ভূমিস্বত্ব (জমিদারি, তালুকদারি ও রায়তি স্বত্ব), মহাজনি প্রথা, আবওয়াব, নীলকরদের অত্যাচার ইত্যাদি নানা দিক থেকে রায়তের দুরবস্থার কারণ ও প্রতিকার খুঁজেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘রায়ত এবং জমিদারের শিক্ষা যুগপৎ চলা উচিত।’’ লেখাটির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক তথ্যে সম্পাদক সংশ্লিষ্ট পরিভাষাগুলির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। উত্তরপাঠে দেখিয়েছেন, প্যারীচাঁদ ও তাঁর সহগামীরা সময়ের থেকে এগিয়ে পথ হাঁটছিলেন— ‘‘তাঁদের কৃষকভাবনাতেই প্রজাস্বত্বের যুগের উদ্‌বোধন।’’ সংযোজিত হয়েছে রায়ত-সমীক্ষার প্রশ্নমালা ও বেঙ্গল স্পেক্টেটর পত্রিকা থেকে প্রাসঙ্গিক তথ্য সঙ্কলন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন