book review

বাইক নিয়ে ছুটে বেড়ানো বৃহৎ পুঁজির দিনমজুর

‘নতুন যুগের নয়া শ্রম’ বিক্রি করে বেঁচে থাকা মানুষেরা লড়াই চালাতে চালাতেই একে অন্যের কাছে আসেন, হাত ধরেন। হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়, মুষ্টিগুলি এক সঙ্গে উত্থিত হয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:২১
Share:

এক নম্বর আকাশগঙ্গা

Advertisement

অশোককুমার মুখোপাধ্যায়

৩৯৯.০০

Advertisement

দে’জ়

এ বইয়ের পাত্রপাত্রীরা আমাদের খুব চেনা ও একেবারে অচেনা। গলি থেকে রাজপথ অষ্টপ্রহর ঝড়ের বেগে বাইক চালিয়ে দৌড়চ্ছেন, পিঠে ঢাউস ব্যাগ, খাবার ও নানা সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন, বা ছুটছেন পিছনে সওয়ারি বসিয়ে। আমরা অহোরাত্র তাঁদের দেখি এবং দেখি না। লেখক এই শ্রমজীবী সহনাগরিকদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছেন, তাঁদের জীবন-যাত্রার শরিক হয়েছেন। ‘সমীক্ষা’ শেষে লিখেছেন উপন্যাস, উপন্যাসের নিয়মেই বহু মানুষের শ্রমজীবনের সঙ্গে এসেছে ব্যক্তিজীবন, বহুস্তর ও জটিল মানবিক সম্পর্ক। সেই সব সম্পর্কে, এমনকি প্রেম-ভালবাসাতেও, জীবনের নিজস্ব স্বাদগন্ধ। মেয়েটি বলে, “আমি কিন্তু বিনামূল্যে থাকব না,” ছেলেটি জবাব দেয়: “কে দিচ্ছে থাকতে? মাসের শেষে বিল ধরিয়ে দেব...।” এমন প্রেমালাপ পরিশ্রমের গর্ভেই জন্ম নেয়। চরিত্রগুলি নিজেদের অভিজ্ঞতা নিয়ে ভাবতে ভাবতে, অভিজ্ঞতার কথা বিনিময় করতে করতেই তাঁদের বাস্তবকে বুঝে নিতে থাকেন, নিরুপায় শ্রমিক হয়ে বেঁচে থাকার অস্তিত্বে ক্রমশ সচেতন শ্রমিক হয়ে ওঠার সামর্থ্য খুঁজে পান। সেই সন্ধানে সহায় হন এক অ-শ্রমিক প্রবীণ, দূরবীক্ষণে আকাশ দেখা আর তারা চেনানো যাঁর নেশা, শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির স্বপ্ন সফল করতে যিনি বহু দূর যেতে রাজি। ‘নতুন যুগের নয়া শ্রম’ বিক্রি করে বেঁচে থাকা মানুষেরা লড়াই চালাতে চালাতেই একে অন্যের কাছে আসেন, হাত ধরেন। হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়, মুষ্টিগুলি এক সঙ্গে উত্থিত হয়। ডেলিভারি-কর্মীদের ঐতিহাসিক সভা শুরু হয় তাঁদেরই এক জনের লেখা গান দিয়ে: “হরকরা ছেলে বেপরোয়া চলে উত্তরে দক্ষিণে/ ডেলিভারি-মেয়ে পিঠে বোঝা নিয়ে পুব থেকে পশ্চিমে।”

ওই খেলা, ওই গান

কবিতা চন্দ

২৫০.০০

প্যাপিরাস

গান নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার যুগে বিশুদ্ধপন্থীরা বলছেন, ঠিক তাল, সুর ও ভাব মেনে পরিবেশন করলে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুধু আবহই নয়, আবহাওয়াকেও বদলে দিতে পারে। তার জন্য শুধু গানের স্বরলিপি অনুসরণ করলেই চলবে না। রবীন্দ্রনাথের প্রতিটি গানের রচনাকাল ও প্রেক্ষাপট, অর্থ, শব্দের ব্যঞ্জনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। রাগসঙ্গীত ও গানটিকে কেন্দ্র করে কবিজীবনকথা জানতে হবে, তাতে গানের যথার্থ ভাবটি ধরা দেবে। শেষে, ব্যক্তিবিশেষের সঙ্গীতের রসাস্বাদনের উপর নির্ভর করবে তাঁর গায়কি। রবীন্দ্রজীবন, রচনা ও গানের এই পাঠভুবন নিয়ে লেখিকার আগের বইয়েও ছিল রবীন্দ্রনাথের তিনটি গান, রবীন্দ্রপ্রসঙ্গ-সহ অতুলপ্রসাদের গান বিষয়ক আলোচনা; সেখানে তিনি ‘কথা-প্রবন্ধ’ অর্থাৎ দু’জন মানুষের কথোপকথনের ভঙ্গিমায় সাহিত্যালোচনার রীতি ব্যবহার করেছিলেন। এই বইটিতে মোট নয়টি রচনা বিন্যস্ত দু’টি পর্বে; শেষ প্রবন্ধে অভিনব এক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যাত মুক্তধারা নাটকে গানের প্রয়োজনীয়তা। গানের ইতিহাস, প্রয়োগ, তাৎপর্য ও প্রভাবের আলোচনা বিষয়ক বইটি সঙ্গীতবোদ্ধা ও গবেষকদের কাছে সমাদর পাবে।

প্রবন্ধসংগ্রহ

শচীন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়

৪৫০.০০

সাহিত্য সংসদ

বড্ড অকালে চলে গিয়েছিলেন শচীন্দ্রনাথ, বাঙালি সাহিত্য-চিন্তার একটা জরুরি জায়গা ফাঁকা করে দিয়ে। সাহিত্য বিষয়ক বাঙালি ভাবুকের সংখ্যা আজও কম নয়, কিন্তু দার্শনিক পণ্ডিত এমন চিন্তায় নিজেকে ডুবিয়েছেন, এই দৃষ্টান্ত আগেও অল্প ছিল, এখন অত্যল্প। এই বই সেই আক্ষেপ ফিরিয়ে দেয়। রবীন্দ্রনাথের সৌন্দর্যদর্শন বা শিক্ষা-সমাজ ব্যবস্থায় রবীন্দ্র-অবদান, এ নিয়ে প্রবন্ধগুলি জরুরি, শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী বিষয়ক প্রবন্ধ আজকের সঙ্কটের সঙ্গে মিলিয়ে পড়ে ভিন্ন দিশা মেলে। কিন্তু আলাদা করে বলার মতো বাংলা ভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃতির চলন বিষয়ে লেখাগুলি। ভাষার উপযুক্ত ব্যবহার কী ভাবে করতে হয়, নিতান্ত প্রাজ্ঞ মানুষও নতুন করে শিখতে পারেন এই লেখাগুলি থেকে। ভাষা, বানানের ‘আধুনিকীকরণ’ নিয়ে যাঁরা ভাবেন, তাঁদের ফিরে ভাবাতে পারে এই যুক্তি: “বিধি-আড়ম্বর বা বাহুল্য বর্জন করে আধুনিক শিল্প মুক্তিপ্রার্থী, কিন্তু সম্পূর্ণ বিধিনিরপেক্ষ হতে চাওয়া আত্মধ্বংসী মনোবৃত্তির পরিচায়ক হবে। শিল্পী অনুভব-মডেল সৃষ্টি করেন তাঁর ঐতিহ্যমণ্ডলের মধ্যেই। মডেলের সংহতি, সরলতা ও অভিনবত্ব শিল্পমুক্তির পথ খুলে দেয়।” অভিনবত্বই বটে— না হলে কি আর পাওয়া যায় ‘অনুভব-মডেল’এর মতো শব্দ! তাঁর প্রবন্ধের ভাষা অনেকের কাছে কিছু কঠিন ঠেকতে পারে। তবে সে কাঠিন্য ভেঙে শাঁসটি উপভোগ করার নেশাও পাঠক টের পাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন