পুস্তক পরিচয় ৩

ফেলুদা সরগরম

তো প্‌সেদা দেখো, দুষ্টু লোকটাকে সিংজি কেমন কোলে তুলেছে।’ বলেই মুকুল হাসতে শুরু করে, অফুরন্ত, হো-হো করে। সোনার কেল্লা-র শেষ দৃশ্য। ‘হাসির আগে একবার আমার দিকে তাকাবে, তাহলেই হবে।’

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২৫
Share:

তো প্‌সেদা দেখো, দুষ্টু লোকটাকে সিংজি কেমন কোলে তুলেছে।’ বলেই মুকুল হাসতে শুরু করে, অফুরন্ত, হো-হো করে। সোনার কেল্লা-র শেষ দৃশ্য। ‘হাসির আগে একবার আমার দিকে তাকাবে, তাহলেই হবে।’ ক্যামেরা চলার আগেই কুশল চক্রবর্তীকে বলে রেখেছিলেন তাঁর মানিকজেঠু ওরফে সত্যজিৎ রায়। শট নেওয়া শুরু হল। ‘সে দিন সংলাপ শেষ করে জেঠুর দিকে তাকাতেই দেখি— জেঠু এমন মজার মজার মুখভঙ্গি এবং দেহভঙ্গি করছেন যে না হেসে উপায় নেই। রামগরুড়ের ছানার মুখেও হাসি ফুটবে।’ সোনার কেল্লা-কে ঘিরে কুশলের এই স্মৃতিলেখটি, ‘তোপ্‌সেদা, আমি, ফেলুদা’, ঠাঁই পেয়েছে ফেলুদা ৫০-এ (সম্পা: সন্দীপ রায়। ৩৫০.০০)। শিশু কিশোর আকাদেমি থেকে এই স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশিত হল সম্প্রতি তাদের আন্তর্জাতিক শিশু কিশোর চলচ্চিত্র উৎসব-এর উদ্বোধনী সন্ধ্যায়, ‘ফেলুদার স্রষ্টা শ্রীসত্যজিৎ রায়ের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্যস্বরপ’, সভাপতির কলমে জানিয়েছেন অর্পিতা ঘোষ।

Advertisement

‘সন্দেশ’ পত্রিকায় ১৯৬৫-র ডিসেম্বর সংখ্যায় ফেলুদার আবির্ভাব, প্রথম গল্প ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’ বেরিয়েছিল পরপর তিনটি সংখ্যা ধরে। ‘সন্দেশ’ পত্রিকারই বিশেষ কয়েকটি সংখ্যা থেকে বাছাই করা কিছু লেখা নিয়ে তৈরি এ সংকলন, সম্পাদকীয়-তে জানিয়েছেন সন্দীপ। কত অজানা তথ্য তাঁর নিজের লেখাটিতেই, ‘খসড়া খাতায় ফেলুদা’, সত্যজিতের রচনাপ্রক্রিয়া সংক্রান্ত, খসড়া থেকে প্রকাশ পর্যন্ত। আবার ফেলুদার গল্প-উপন্যাস প্রকাশের যাবতীয় তথ্যাদি-সহ তার সম্পর্কে খুঁটিনাটি সাজিয়েছেন দেবাশিস মুখোপাধ্যায় ‘ফেলুদা ফাইল’-এ। ফেলুদাকে চেনানোর এমনই আর-এক জরুরি লেখা সিদ্ধার্থ ঘোষের ‘গ্যালারির নাম ফেলুদা’।

লীলা মজুমদার, মহাশ্বেতা দেবী, নবনীতা দেব সেন তাঁদের সরস অথচ অন্তর্ভেদী গদ্যে ফেলুদাকে পৌঁছে দেন কমবয়সিদের মনের মণিকোঠায়। ‘ফেলুদাদা ও লালমোহনবাবু’ লেখাটিতে রবি ঘোষ মন্তব্য করেন ‘ফেলুদা লোকটা সত্যজিৎ রায়েরই দ্বিতীয় একটা সত্তার প্রোজেকশন, অলটার ইগো!’ সৌমেন্দু রায় তাঁর ‘আসল আলো নকল আলো’তে শুনিয়েছেন ‘সোনার কেল্লা’ আর ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এর শুটিংয়ের জমজমাট গল্প। তবে এ দু’টি ছবি নিয়ে দুর্দান্ত দু’টি লেখা সত্যজিতের— ‘উট বনাম ট্রেন’ আর ‘ফেলুদার সঙ্গে কাশীতে’।

Advertisement

সবচেয়ে বড় আকর্ষণ, উল্লেখিত ওই ছবি দু’টির প্রস্তুতিপর্বে সত্যজিতের হোমওয়ার্ক-এর সচিত্র বিবরণ, তাঁর ‘খেরোর খাতা’-য়। সঙ্গে দু’টি ছবিরই সাদাকালো স্থিরচিত্র, সন্দীপ রায়ের ক্যামেরায়: ‘ফেলুদা ফোটো অ্যালবাম’। চমৎকার ছাপা, পাতায় পাতায় ছবি। দেবাশীষ দেবের প্রচ্ছদের সঙ্গে সংকলনটিতে ব্যবহৃত সমস্ত অলংকরণ সত্যজিতের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন