অজানা অচেনা ভবিষ্যতের পথে

দ্বিতীয় একটি ছবির শিরোনাম ‘হাংগার’ অর্থাৎ ক্ষুধা। রেস্তোঁরার ভেতরে এক দম্পতি বসে আছে, সামনে নানা খাদ্যদ্রব্য। একটি ভিখারি বালক কাচের বাইরে থেকে অধীর ভাবে সে দিকে চেয়ে আছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৭ ০০:০১
Share:

জীবনযন্ত্রণা: অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত ‘লাইফ’ শীর্ষক প্রদর্শনীর একটি ছবি

অ্যাকাডেমিতে শেষ হল কল্যাণাশিস সেনগুপ্তের একক চিত্র প্রদর্শনী। তিনি শিল্পচর্চা ছাড়াও শিক্ষকতা করেন। তাঁর মতে, সমগ্র মানবজাতির মধ্যে একটি সাধারণ সূত্র দেখা যায়। সেটা হল, মানুষের আকারে প্রকারে বর্ণে জাতিতে যতই বিভেদ বা তফাত থাক না কেন, মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় সব মানুষই সমান ভাবে ক্ষুধা তৃষ্ণা অনুভব করে, সব মানুষই নানা ভাবে একই কাজ করে, সবাই বিভিন্ন উপায়ে নিজেকে প্রকাশ করে। একই সূত্রে বাঁধা যেন আমরা সবাই। এই কারণেই শিল্পী কল্যাণাশিস কোনও ছবিতেই মুখশ্রী নিয়ে মাথা ঘামান না। সব ছবিতেই একই মানুষ যেন নানা কাজে ব্যস্ত।

Advertisement

তাঁর ছবি কাগজে আঁকা চারকোল দিয়ে। খুব সহজ সাবলীল ভঙ্গিতে ছবি আঁকেন তিনি। কিন্তু চারকোলের এবং রেখাচিত্রের কাজে শিল্পীর দক্ষতা লক্ষণীয়। বিশেষ কোনও শিল্পকর্মেই যথাযথ মাথা দেখতে পাওয়া যায় না। শিল্পী কল্যাণাশিসের একটি কাজ ‘হু অ্যাম আই’? আমি কে? একটি মানুষ বসে আঙুল দিয়ে বাইরে কিছু দেখাচ্ছে। তিনি কি বলতে চেয়েছেন যে, মানুষ নিজেকে বাইরে কোথাও খুঁজে বেড়ায়? এই মানুষটিরও চেহারা সামনের দিক থেকে দেখা যায় না।

দ্বিতীয় একটি ছবির শিরোনাম ‘হাংগার’ অর্থাৎ ক্ষুধা। রেস্তোঁরার ভেতরে এক দম্পতি বসে আছে, সামনে নানা খাদ্যদ্রব্য। একটি ভিখারি বালক কাচের বাইরে থেকে অধীর ভাবে সে দিকে চেয়ে আছে। তার পেটে অসম্ভব ক্ষুধা। বক্তব্য নতুন কিছু নয়, তবু কাজটি যথেষ্ট ভাল।

Advertisement

অন্য একটি ছবির নাম ‘ওয়েটিং’, এই ছবিতে যাঁকে অপেক্ষারতা দেখা যাচ্ছে তাঁর বাহ্যরূপ এক নারীর। তিনি কাম-অভিলাষী। ছবিটিতে বিন্দুমাত্র অশ্লীলতা নেই। নারীশরীরের গঠনটি বেশ চিত্তাকর্ষক। এখানেও শিল্পী কল্যাণাশিসের বক্তব্য হয়তো এই যে, কামের শিকার তো সকলেই, কিন্তু তার প্রকাশ বা অভিব্যক্তি আলাদা আলাদা।

শিল্পীর আরও কিছু ছবি যেমন ‘মাদার’, ‘প্লে’ এবং ‘দ্য গ্লোরিয়াস বয়’ বেশ আকর্ষণীয়।

এর মধ্যে ‘দ্য গ্লোরিয়াস বয়’ বা ‘অপরূপ একটি ছেলে’ কাজটি বেশ মধুর ভাব সৃষ্টি করে। হলুদ কাগজের ওপর চারকোলের দু’-একটি টানে এক সাধুকে পেছন দিক থেকে দেখা যায়, হাতে কমণ্ডলু। উনি কি চলেছেন কোনও অজানা অচেনা ভবিষ্যতের দিকে?

আমরা তো সবাই তাই চলেছি। সেটাই তো কল্যাণাশিসের সূত্র, যে-সূত্রে আমরা সকলে বাঁধা। এই একক প্রদর্শনীর নাম

‘লাইফ’—জীবন!

শমিতা বসু

গভীর যন্ত্রণার ট্র্যাজেডি

থিয়েটার প্ল্যাটফর্ম-এর নতুন প্রযোজনা ব্রাত্য বসুর ‘হৃদিপাশ’। নাটকটি ‘নতুন’ বলা হলেও অভিজ্ঞ দর্শকের চোখে অধরা থাকে না যে, এটি গ্রিক নাটক রাজা অয়দিপাউসের আধুনিক রূপান্তর। অয়দিপাউসের করুণ ট্রাজেডিই এখানে হৃদয়ের আত্মপরিচয় সন্ধানে রূপ পেয়েছে। পিতা লাটু উপাধ্যায়ের কাছ থেকে পরিত্যক্ত হৃদয় বাংলাদেশের জব্বার শেখের সংসারে ‘হৃদয়’ নাম পায়। ব্রাত্য এ আখ্যানকে প্রতিস্থাপন করেছেন ১৯৪৬-’৪৭-এর দাঙ্গা ও দেশভাগের ঢাকা ও কলকাতায়। সেই দাঙ্গার সময়েই আত্মপরিচয়ের তাগিদে হৃদয়ের পূর্ববঙ্গ ছেড়ে কলকাতায় আসা, আত্মরক্ষার তাগিদে পিতাকে হত্যা করা, আবার জন্মরহস্য খুঁজে পেতে মেদিনীপুরে এসে লোধা হয়ে সেই সম্প্রদায়ের রাজা হয়ে বসা। ভাগ্যের ফেরে নিজেরই মাকে বিবাহ করা, তারই গর্ভে সন্তানের জন্ম দেওয়া। এ-সবের পর কী ভাবে হৃদয় নিজের জন্মরহস্য জানল এবং তার পরিণতিই বা ব্রাত্য বসু কী ভাবে সাজালেন, তা দেখার মতো!

প্রায় পঞ্চাশ-অধিক শিল্পী সমন্বয়ে তৈরি এই নাট্য-প্রযোজনাকে বলা চলে এই সময়ের এক বৃহত্তর আয়োজন। কুশলী নির্দেশক দেবাশিসের মঞ্চ-ভাবনায় চমৎকার স্পেস তৈরি হয়েছে। মঞ্চের সামনের অংশ বাদ দিয়ে লোহার খাঁচায় পর্দা ঝুলিয়ে তৈরি করা হয়েছে ছ’টি জোন। অভিনয়ে তেমনই প্রত্যেকটা স্পেসকে চমৎকার ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। মঞ্চ ও দর্শকের মাঝখানে সাত ফুট মতো জায়গাকে রাখা হয়েছে মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট, গায়ক ও বাজনদারদের জন্য। শুভদীপ গুহ’র নেতৃত্বে এই মিউজিক টিম অভিনয়েরই অঙ্গ হয়ে উঠেছিল। কখনও সাঁওতালি নাচ, ছৌ নাচের প্রয়োগ, চমৎকার কোরিওগ্রাফি, আলোর নিয়ন্ত্রিত খেলা, শব্দের বৈচিত্র ও সূক্ষ্ম প্রয়োগ এবং অভিনয়ের বিচিত্র শরীরী কসরৎ— সব মিলিয়ে নজরকাড়া আয়োজন। অভিনয়ে হৃদয় চরিত্রে সুমিতকুমার রায়ের ছটফটানি যেন কৌশিক করের অভিনয়ে গভীর স্থিতি পেয়েছে। এই প্রযোজনা মানুষের অব্যক্ত যন্ত্রণার ট্র্যাজেডিকে ছুঁতে পেরেছে।

মলয় রক্ষিত

নজর কাড়ে নৃত্যের স্বাতন্ত্র্য

সম্প্রতি আইসিসিআর-এ আঙ্গিক শিল্পী গোষ্ঠী আয়োজন করেছিল নৃত্যানুষ্ঠান ‘তা না দে রে না’। পরিচালনায় ছিলেন অনুশ্রী চাকী সেনশর্মা। প্রতিটি নৃত্যপরিকল্পনা ও পরিবেশনায় বিশেষ স্বাতন্ত্র্যের পরিচয় পাওয়া যায়। আর সমবেত নৃত্যে সকলেই প্রশংসনীয়। দ্বিতীয় পর্বের নিবেদনে ছিল ‘তুমি রবে নীরবে’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শনের উপস্থিতির বিভিন্ন দিক চয়ন করা হয়েছে পর্বে। তবে নৃত্যের সঙ্গে পোশাক যথাযথ নয়। এ দিন অনুশ্রীর একক নৃত্য দর্শকের মন জয় করে নিয়েছে।

পলি গুহ

অনুষ্ঠান

• ইন্দুমতী সভাগৃহে ‘মাভৈ’-এর নিবেদনে ছিল ‘খুঁজি রবি-নজরুল’কে। কথায় ও গানে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য রচনা ও গানের মেলবন্ধনে অনুষ্ঠানটি শ্রোতাদের মন জয় করে নেয়। তবে নবীন শিল্পীর আধিক্য বেশি ছিল অনুষ্ঠানে। এ দিন অনুষ্ঠানে ভাল গাইলেন শমীক পাল, দেবারতি মিত্র, তানিয়া দাস।

• রবীন্দ্রসদনে সম্প্রতি লিপিকা সঙ্গীত অ্যাকাডেমি আয়োজন করেছিল ‘নানা রঙের গান ও কবিতার অনুষ্ঠান’। প্রবীণ ও নবীনের মেলবন্ধনে অনুষ্ঠানটি এক অন্য মাত্রা পায়। গানে ও পাঠে নজর কাড়লেন গৌতম মিত্র, সুচিন সিংহ, সন্ধ্যাশ্রী দত্ত, তাপস নাগ, কেশবরঞ্জন প্রমুখ। শুরুতেই সমবেত গান শোনাল উপাসনা মিউজিক কয়্যার।

• ওকাকুরা ভবনে ‘স্বজন’ আয়োজন করেছিল বাচিক ও শ্রুতিসন্ধ্যা ‘শব্দ সাজাব আমি আগুনে অক্ষরে’। কৃষ্ণা বসু, সুমন্ত্র সেনগুপ্ত, দেবাশিস চক্রবর্তী, ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের উপস্থাপনা বেশ ভাল লাগে। ওপার বাংলার শ্রুতিনাটকে নজর কেড়েছেন নির্দেশক মুজাহিদুল ইসলাম।

• বেহালার গ্লোবাল অ্যাকাডেমি-র সদস্যরা শরৎ সদনে আয়োজন করেছিল নৃত্যসন্ধ্যা ‘বৈচিত্র’। কত্থক ও রবীন্দ্রনৃত্য আধারিত প্রযোজনাটি মুগ্ধ করে দর্শকদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন