আলোচনা

গ্রামের চিরাচরিত প্রশান্ত রূপ

মোটামুটি নিজেদের স্বাধীনতা বজায় রেখেই তাঁরা শিল্পসৃষ্টি করেছেন। বক্তব্য বহুবিধ। আঁকার ধরন বিভিন্ন রকমের। পার্থপ্রতিম রেখায় বিশ্বাসী। রেখা ভাগ্যর প্রতীক। ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিকের ব্রাশ স্ট্রোকে রেখার সাহায্যে এঁকেছেন সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৭ ০০:০০
Share:

নিসর্গ: অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলক প্রদর্শনীর একটি ছবি

ইছাপুর আর্টিস্ট সার্কল-এর ১৯তম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল অ্যাকাডেমিতে। ১১ জন শিল্পী। শিল্পীদের নাম হল বিশ্বজিৎ মণ্ডল, পার্থপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়, পাপ্পু ঘোষ, উজ্জ্বল চক্রবর্তী, সুদীপ মজুমদার, ননীগোপাল বিশ্বাস, কিশোর চক্রবর্তী, সমরেশ ভট্টাচার্য, সুপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়, সুজিত দাস এবং তপনকুমার দাস।

Advertisement

মোটামুটি নিজেদের স্বাধীনতা বজায় রেখেই তাঁরা শিল্পসৃষ্টি করেছেন। বক্তব্য বহুবিধ। আঁকার ধরন বিভিন্ন রকমের। পার্থপ্রতিম রেখায় বিশ্বাসী। রেখা ভাগ্যর প্রতীক। ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিকের ব্রাশ স্ট্রোকে রেখার সাহায্যে এঁকেছেন সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবি। সব ক্যানভাসেই গণপতির পুরো অবয়ব দেখা যায় না। প্রধানত চোখ, মুখমণ্ডল এবং গজদন্তের অংশ মাত্র। স্টাইলাইজড কাজ। তবে তাঁর কাজে ছবির গুণ সীমিত। এগুলোকে স্কেচ বলা ঠিক। কাজে নতুনত্ব আছে।

ভাস্কর পাপ্পু ঘোষ কাককে নিয়ে অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন। নানা পরিস্থিতিতে এই বিশেষ কাক তিনি সৃষ্টি করেছেন মিশ্রমাধ্যমে। তার মধ্যে ধাতু, কাঠ, রং ইত্যাদি। ভঙ্গিমাতে পাখিটির চারিত্রিক বিশেষত্ব রাখতে সক্ষম হয়েছেন শিল্পী। এ ছাড়াও যে শিল্পীর কাজ উল্লেখযোগ্য, তিনি হলেন সুজিত দাস। তাঁর কাজের আঙ্গিক বাস্তবধর্মী। একটি ছবিতে যিশুর মুখ—শান্ত, সমাহিত। চারিধার থেকে অনেক হাত তাকে ধরতে, পেতে, না ধ্বংস করতে ইচ্ছুক ঠিক বোঝা যায় না। হাতগুলো যিশুর দিকে এগিয়ে রয়েছে। শিল্পীর অপর একটি ছবিতে নারীর মুখমণ্ডল এবং অপরাংশে আপেল ফল। অ্যাডাম এবং ইভের গল্পই মনে পড়ে। কিন্তু ছবিতে অ্যাডামের অনুপস্থিতি লক্ষণীয়।

Advertisement

উজ্জ্বল চক্রবর্তীর কাগজ কেটে করা কোলাজ শিল্পকর্মগুলো মন্দ নয়। কিন্তু কাগজ কেটে যে ধরনের কাজ তিনি করেছেন, সে কায়দা পুরনো। তবে শিল্পী যে সব ল্যান্ডস্কেপ সৃষ্টি করেছেন সেগুলো মন্দ নয়। গ্রামের ছবিগুলোতে নান্দনিক ও প্রশান্ত রূপ দিতে সক্ষম হয়েছেন শিল্পী।

শমিতা বসু

যে বিদ্রোহ এখনও চলছে

পিয়ালী দাস

ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার নেশায় এক শ্রেণির মানুষ নিজেদের দেবতার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন। কিন্তু চার্লস ডারউইনের ‘অরিজিন অব স্পিসিজ’ (১৮৫৯) প্রকাশের পর, ডারউইনীয় তত্ত্ব বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ডারউইন দেখিয়েছিলেন, মানুষও বিবর্তনের ধারায় এক প্রাণী মাত্র। সেই চেতনা থেকেই সাহিত্যে জন্ম নিয়েছিল বাস্তবতাবাদ। এই পটভূমিতেই ফরাসি ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার এমিল জোলা লিখেছিলেন বাস্তবধর্মী উপন্যাস ‘জার্মিনাল’ (১৮৮৫)। জার্মিনাল শব্দের অর্থ কুঁড়ি। এই উপন্যাস অবলম্বনেই গোবরডাঙা শিল্পায়ন মঞ্চস্থ করল ‘বোল’। নাটকটির নির্দেশনায় আশিস চট্টোপাধ্যায়।

নাটকের গল্প মূলত একটি কয়লাখনি এবং তাকে ঘিরে মালিকপক্ষ এবং খনি শ্রমিকদের সংগ্রাম, জীবন যাপন। মোঁসুর কোলিয়ারিতে কাজের জন্য আসেন এতিয়েন লঁতিয়ে। ঠাঁই পান ওখানকার মায়ো পরিবারে। এই ছটফটে প্রাণবন্ত, গানপাগল মেয়েটিই এক সময় হয়ে ওঠে শ্রমিক গোষ্ঠীর নেতা। যার নেতৃত্বে শ্রমিকরা প্রভিডেন্ট ফান্ড গড়ে। আর সেই টাকার জোরে তারা মালিকপক্ষের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ধর্মঘট শুরু করে দেয়। তবুও শেষ পর্যন্ত খনি মালিকদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বরখাস্ত হতে হয় তাকে। এতিয়েন আশার আলো ছড়িয়ে বিদায় নেয়। তবুও মজুররা স্বপ্ন দেখতে থাকে সুদিনের আশায়।

মূল গল্পকে আশ্রয় করেই, নানান ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে মৌলিকতার পরিচয় দিয়েছেন আশিসবাবু। এ নাটকে পৃথিবীটাই একটা চরিত্র হয়ে ওঠে। যার উপরিভাগ অর্থাৎ মাটির ওপরের অংশ যতটা সুন্দর, নীচের অংশ ততটাই ভয়ঙ্কর এবং আতঙ্কজনক। নাটকে মঞ্চের স্পেসকে সুন্দরভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। মঞ্চ কখনও হয়ে ওঠে খাদান, পরক্ষণেই মালিকপক্ষের বিলাসী ড্রয়িংরুম। খনিতে প্রবেশ এবং ওঠার জন্য লিফটের ব্যবহার প্রশংসনীয়। মনে হয় যেন মঞ্চ ফুঁড়ে সুড়ঙ্গে প্রবেশ করছে শ্রমিকেরা।

নাটকে সঙ্গীতের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। যা চিরন্তনতার ডাক দেয়। সে কারণেই বোধহয় ‘কোল মাইনারস্ ডটার’ থেকে মধ্যযুগের ট্রুবাডোর হয়ে বব ডিলান (ব্লোইং ইন দ্য উইন্ড) ছুঁয়ে, সলিল চৌধুরীর গানের (আয়েগা আয়েগা) সুর মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকেও মজার ছলে ব্যবহার করা হয়েছে। খনির একটা দৃশ্য ‘রক্তকরবী’র নন্দিনীর কথা মনে করিয়ে দেয়। এখানে নন্দিনী এবং এতিয়েন যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। খনির দমবন্ধ পরিবেশে এতিয়েন মুক্তির বার্তা নিয়ে আসে। এতিয়েন চরিত্রের বৈপরীত্য, সংলাপ বলার ধরনে মুগ্ধ করেন দীপা ব্রহ্ম। তাঁর মুক্ত কণ্ঠের পাশ্চাত্য সঙ্গীত পৌঁছে যায় সোপরানোর উচ্চতায়। নাটকে ঘটনার ভারসাম্য রক্ষা হয় খনিশ্রমিকদের কঠিন জীবন বাস্তবতার পাশাপাশি মালিক পক্ষের চরিত্রে স্ল্যাপস্টিক কমেডির ব্যবহারে। নাটকে আলোর (রাজু ভট্টাচার্য) ব্যবহার তাৎপর্যপূর্ণ। অভিনয়ে নজর কাড়েন অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুজিত দাস, প্রিয়েন্দুশেখর দাস, শৌভিক সরকার, সাহেব আলি মণ্ডল, সায়ন মণ্ডল প্রমুখ।

অনুষ্ঠান

• শ্রাবণী সেনের পরিচালনায় সম্প্রতি ‘শ্রাবণের গান’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি পরিবেশন করল শ্রাবণী সেন মিউজিক অ্যাকাডেমি। গানে ছিলেন শ্রাবণী সেন, অরণি দাস, জয়শ্রী দাস, দেবাদৃত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। যন্ত্রসঙ্গীতে ছিলেন অর্ক, তুহিন, সৌম্যজ্যোতি, সৌরভ।

• সম্প্রতি এশিয়াটিক সোসাইটির বিদ্যাসাগর মঞ্চে কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গান শোনালেন নীলা মজুমদার। শিল্পীর পরিবেশিত দশটি গানের মধ্যে কোনওটি ভারতীয় রাগ-রাগিণী আধারিত, কোনওটি পাশ্চাত্য সঙ্গীতের আদলে। কীর্তনাঙ্গের গান ‘ওকে গান গেয়ে গেয়ে’ বা মুক্ত ছন্দের গান ‘তোমারেই ভালবেসেছি’ শিল্পীর কণ্ঠে অন্য মাত্রা পায়। তবে অবশ্যই উল্লেখ করতে হয় রাগ-রাগিণী আধারিত ‘বরষা আইল ওই ঘনঘোর মেঘে’ গানটির কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন