পুস্তক পরিচয় ৩

বাংলার বনফুলের বৈচিত্র

বাংলার আত্মাস্বরূপ বলে জানি যে সব উদ্ভিদকে, বিভূতিভূষণ জীবনানন্দের রচনায় আঙুল ছুঁইয়ে তারা আজ হারিয়ে গিয়েছে।

Advertisement

যুধাজিৎ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১১
Share:

বাংলার আত্মাস্বরূপ বলে জানি যে সব উদ্ভিদকে, বিভূতিভূষণ জীবনানন্দের রচনায় আঙুল ছুঁইয়ে তারা আজ হারিয়ে গিয়েছে। কালকাসুন্দে, আশশ্যাওড়া, ভুঁই ওকড়া হয়তো আজও একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি, কিন্তু এ রাজ্যের কয়েক হাজার বোটানি-বিদ্যার্থীর কাছেও যদি ওরকম কিছু গাছের নাম তোলেন, তাদের বেশির ভাগেরই মুখে এক-মাঠ অন্ধকার ছাড়া কিছু দেখতে পাবেন না। দোষ তাদের নয়।

Advertisement

প্রকৃতি-বিযুক্তি যে-পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে তার মোকাবিলায় এখনই প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান নিয়ে সচিত্র বই দরকার। আর তা সাধারণের হাতে সহজে পৌঁছনও জরুরি। পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র পর্ষদ ‘মেঠো বই’ নামে এ রকম কিছু পকেটবুক প্রকাশ করেছিল।

হিরণ্ময় মাইতির বাংলার বুনোফুল (দে’জ, ৯৯৯.০০) পকেটবুক নয়, বরং কফি-টেবল ধাঁচের বই। বনে-প্রান্তরে দিঘি-মোহানায় জন্মানো অবহেলিত সব উদ্ভিদের, বিশেষত তাদের ফুলের, সুমুদ্রিত রঙিন আলোকচিত্র এর প্রধান সম্পদ; ইংরেজি ও বিজ্ঞানসম্মত অভিধার পাশে বাংলার বিভিন্ন আঞ্চলিক নামে সেগুলিকে চিহ্নিত করে পরিচিতি দেওয়া হয়েছে। দুশোর কাছাকাছি প্রজাতির উদ্ভিদ এখানে জায়গা পেয়েছে। প্রধানত সমভূমির উদ্ভিদ, তবে বহু পার্বত্য প্রজাতি আছে, সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলের উদ্ভিদও। বৃক্ষ প্রায় অনুপস্থিত— লতাগুল্ম, বীরুৎ ও জলজ উদ্ভিদের সমাবেশ এখানে।

Advertisement

বইয়ের ছবিগুলো দেখলে মনে হয়, ভেষজ গুণ বা উদ্ভিদবিজ্ঞানের কথা পরে হবে, কেবল একটু নিবিড় দৃষ্টিপাতেও অনীহা বলে আমরা কী অসাধারণ রূপবৈচিত্র থেকে বঞ্চিত আছি! ওদিকে সমস্ত জায়গা কংক্রিটে ঢেকে যাচ্ছে, গ্রামাঞ্চলেও আগাছানাশক প্রয়োগে এই সব উদ্ভিদ হয়ে পড়ছে বিরল। অপরিচয়ের দূরত্ব এদের ঠেলছে বিলুপ্তির দিকে।

বইটিতে টেক্সট খুব কম। শেষে দুটি নিবন্ধ যুক্ত হয়েছে, যা কিছুটা প্রক্ষিপ্ত মনে হয়। ‘রোডোডেনড্রন পাচারকারী ও কলাবউ-এর উত্তরাধিকার’ নিবন্ধে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি কী ভাবে উপনিবেশের উদ্ভিদসম্ভার নিজেদের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যসাধনে কাজে লাগিয়েছিল তার ছবি আছে। লেখাটিতে জোসেফ ব্যাংকস, জে ডি হুকার থেকে চার্লস ডারউইন সকলকে যে ভাবে লুঠেরার আদলে আঁকা হয়েছে তার সঙ্গে অবশ্য খুব কম পাঠকই একমত হবেন। তবে বইটিতে এ প্রসঙ্গটা গৌণ। পরিশ্রমসাধ্য এই বইতে বাংলার বনফুলের বৈচিত্রের দিকে নজর ফিরিয়ে হিরণ্ময় মাইতি আমাদের দীর্ঘলালিত একটা প্রত্যাশাপূরণের দিকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন