চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১

ক্লিষ্ট মানবীর প্রতিমাকল্পে ফুটে ওঠে বিপন্ন বাস্তবতা

মায়া আর্ট স্পেসে অনুষ্ঠিত হল একটি সম্মেলক প্রদর্শনী। লিখছেন মৃণাল ঘোষসম্প্রতি মায়া আর্ট স্পেস-এ দেবব্রত চক্রবর্তীর পরিকল্পনায় অনুষ্ঠিত হল ‘প্রিন্ট ও আর্ট’ শিরোনামে ২৫ জন শিল্পীর ছবি নিয়ে একটি সম্মেলক প্রদর্শনী। শিল্পীরা সকলেই বিভিন্ন সংবাদ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। খবরের কাগজে শিল্পীদের কাজ নানা রকমের হতে পারে। কেউ লেখার সঙ্গে ছবি আঁকেন, লেখার অভিমুখটিকে বোঝানোর জন্য।

Advertisement

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৪ ০০:০১
Share:

সম্প্রতি মায়া আর্ট স্পেস-এ দেবব্রত চক্রবর্তীর পরিকল্পনায় অনুষ্ঠিত হল ‘প্রিন্ট ও আর্ট’ শিরোনামে ২৫ জন শিল্পীর ছবি নিয়ে একটি সম্মেলক প্রদর্শনী। শিল্পীরা সকলেই বিভিন্ন সংবাদ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। খবরের কাগজে শিল্পীদের কাজ নানা রকমের হতে পারে। কেউ লেখার সঙ্গে ছবি আঁকেন, লেখার অভিমুখটিকে বোঝানোর জন্য। কেউ বা গল্প-কবিতার সচিত্রকরণ বা ইলাস্ট্রেশন করেন। অনেকে আবার মগ্ন থাকেন নানা রকম ডিজাইনিং-এর কাজে। কার্টুনের সঙ্গেও যুক্ত থাকেন অনেকেই। সংবাদের বা ঘটনার অন্তর্নিহিত সারমর্মটিকে তুলে ধরেন কৌতুকের ভাষায়। এই সব কিছুর মধ্যেই প্রচ্ছন্ন থাকে ডিজাইনিং বা নান্দনিক ভাবে সাজিয়ে তোলার পেশাগত দক্ষতা। এই দক্ষতা চিত্রের নান্দনিকতায় কেমন করে প্রতিফলিত হয়, সংবাদের ভিতর নিরন্তর প্রবাহিত থাকে দেশ-কাল বা বাস্তবের যে টানাপড়েন, যার সঙ্গে সংবাদপত্রে কর্মরত একজন শিল্পী প্রতিনিয়ত যুক্ত থাকেন, সেগুলো কেমন করে তার সৃজনশীল ছবিকে প্রবাহিত করে, এ বিষয়ে নিবিষ্ট কিছু চর্চা এই প্রদর্শনীকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলতে পারত। কিন্তু তত গভীরে যায়নি এই প্রদর্শনী।

Advertisement

তবু সংবাদভিত্তিক চিত্র ও আপাত-বাস্তব-নিরপেক্ষ চিত্রের পার্থক্য ও ঐক্যের নানা দিকের উপর আলো পড়েছে অনেক ক্ষেত্রে। যে রকম দুটি ছবির উল্লেখ করা যায় প্রথমে। পার্থ শীল ক্যানভাসের উপর ডিজিটাল পদ্ধতিতে এঁকেছেন নরেন্দ্র মোদী ও রাহুল গাঁধীর ছবি। ছবিটি কার্টুনধর্মী। নির্বাচনের পর নরেন্দ্র মোদী জয়ী হয়েছেন। তাঁকে উপস্থাপিত করা হয়েছে বিজয়ীর ভঙ্গিতে চিত্রক্ষেত্রের সম্মুখভাগ জুড়ে। রাহুলের দল বিপর্যস্ত। তাঁর বিশ্লিষ্ট অবয়বটি রয়েছে নিম্নাংশে এক প্রান্তে। সংবাদেরই প্রত্যক্ষ দৃশ্যরূপ এটি। সুনীল শীলের অ্যাক্রিলিকের ক্যানভাস ‘সেইন্টলি কিং’ একেবারে বিপরীতধর্মী। ঋষিপ্রতিম রাজা দাঁড়িয়ে আছেন তরবারি হাতে। পিছনে রয়েছে ঘোড়াটি। এক মানবী দণ্ডায়মান রয়েছে রাজার সম্মুখে। গণেশ পাইনের আবহমণ্ডল সত্ত্বেও পুরাণকল্পমূলক এই ছবিটিতে শিল্পী ঐতিহ্যগত অতীতের এক আখ্যান নির্মাণ করেছেন। পার্থ-র ছবিটিতে সংবাদ ও সাম্প্রতিক রাজনীতির প্রত্যক্ষ প্রতিফলন ঘটেছে। এই দুটি প্রান্ত বিভিন্ন ছবিতে নানা ভাবে ধরা পড়েছে।

শেখর রায়ের অনামা অ্যাক্রিলিকের ক্যানভাসে এক ক্লিষ্ট মানবীর প্রতিমাকল্প। বিপন্ন বাস্তবতার বিশ্লেষণ। অশোক মল্লিকের একই মাধ্যমের ছবি ‘মাস্ক অব হোলিনেস’-এ উপস্থাপিত আধ্যাত্মিকতার প্রতীকী পরিমণ্ডল। সুব্রত চৌধুরীর ‘শি’ শীর্ষক মানবী প্রতিমাকল্পে নারীর অন্তর্লীন মগ্নতাকে অনুধাবনের প্রয়াস রয়েছে। একই মাধ্যম ও শিরোনামে দেবব্রত চক্রবর্তীর ছবিতে উপস্থাপিত জলের ভিতরে মাছের সান্নিধ্যে কল্পরূপাত্মক এক

Advertisement

মানবী প্রতিমা। অনুপ রায় জলরঙে ‘ডিলান’ শীর্ষক ছবিতে এক সঙ্গীতশিল্পীকে রূপায়িত করেছেন। অরিন্দম মজুমদারের ‘দ্য ডান্সার’ কথাকলি নৃত্যের রূপসজ্জায় সজ্জিত এক শিল্পীর রূপায়ণ। কৃষ্ণেন্দু চাকী জলরঙের প্রত্যয়দীপ্ত ব্যবহারে এঁকেছেন বাংলার আকাশ ও প্রান্তরের নির্জন নিসর্গ। নির্মলেন্দু মণ্ডলের মিশ্রমাধ্যম ‘টাচড’ এক মানবীর সংবেদনময় উপস্থাপনা। সংবৃত বর্ণ ও রেখার লাবণ্যে নারীর মগ্ন সৌন্দর্যকে ধরতে চেয়েছেন। সায়ক মিত্রের ‘ইনোসেন্ট স্মাইল অব আ গার্ল’ সহজ রূপায়ণে এক তরুণীর হাসিটুকুকেই শুধু ধরেছে। এ সব ছবিতে সাংবাদিকতা বা সংবাদমাধ্যমের অভিজ্ঞতার থেকেও প্রাধান্য পেয়েছে শিল্পীর সামগ্রিক জীবনবোধ ও চিত্রনন্দনের বিস্তৃত ক্ষেত্র।

এর পাশাপাশি অনেক শিল্পীর কাজে গুরুত্ব পেয়েছে গ্র্যাফিক-বৈশিষ্ট্য ও ডিজাইনের পরিমণ্ডল। কার্টুনের কৌতুকদীপ্ত আবহও এসেছে কোথাও কোথাও। সংবাদ মাধ্যমের প্রত্যক্ষ অভিঘাত অনুভব করা যায় এখানে। নীলাঞ্জন দাসের ‘জাপান ওপেনস ডোর ফর চায়না’ ও ‘প্রণব মুখার্জিজ কংগ্রেস’ দুটি ছবিই সংবাদধর্মী উপস্থাপনা। অলয় ঘোষালের ‘উইসডম টিথ’ কার্টুনধর্মী। সংবাদ ও বিশুদ্ধ চিত্রীয় আবহের সুষম সমন্বয়। অনির্বাণ ঘোষের দুটি ছবিতেই ডিজাইনের বৈশিষ্ট্য সুষ্ঠু ভাবে রূপায়িত। উদয় দেবের পেনসিল ড্রয়িং ‘ডিসোলেশন’-এ অবয়বের বিকৃতিকরণ খুবই দক্ষতা ও মনন-সম্পৃক্ত। এ ছাড়াও প্রদর্শনীতে ছিল বরুণ রায়, চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য, দেবব্রত ঘোষ, দেবাশিস দেব, জয়ন্ত ঘোষ ও মনোজ রায়ের ছবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন